১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৩১ বছরে হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত ৭৪ শতাংশ বন্দির অপরাধের সময় বয়স ছিল ৩০ বছরের কম।
বেশিরভাগ অপরাধীর বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ বন্দি স্কুল পার হতে পারেনি এবং ১৫ শতাংশ বন্দির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।
২০১৯-২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।এতে সহযোগিতা করে দ্য ডেথ পেনাল্টি প্রকল্প।
দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানের পর ‘মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় বসবাস’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৩১ বছরে হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত ১০১ জন আসামির ফাঁসি (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকর হয়েছে।
এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১১ জন এবং ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের ৫৭ জন ও ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড দেশের বিভিন্ন কারাগারে কার্যকর হয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন কারাগারে আরও এক হাজার ৬৫০ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ এক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, আইন বিভাগের ডিন ড. মো. রহমতউল্লাহ, ড. নাইমা হক, বাংলাদেশস্থ সুইজারল্যান্ডের কনস্যুলার থমাস বুমগাটনার, অধ্যাপক ড. বোরহানউদ্দিন খান, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, প্রফেসর ক্যারোলিন হয়লে প্রমুখ।
আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা- সেটি ভাবার সময় এসেছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বেশ কয়েকটি ফাঁসি কার্যকর করা হয় এবং শতাব্দীর শুরু থেকেই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এছাড়া এসব অপরাধ সংঘটনের সময় ৫৪ শতাংশ অপরাধী বিবাহিত ছিলেন এবং ৩৩ শতাংশ বন্দির সন্তান ছিল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আসামিদের মধ্যে পুরুষ ৯৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এর মধ্যে একজন নারী বন্দি আসামি থাকলেও হাইকোর্ট তার শাস্তি নিশ্চিত করেননি। ৯৫ শতাংশ বন্দি হত্যার দায়ে এবং ৫ শতাংশ বন্দির শাস্তি হয়েছিল সন্ত্রাসের দায়ে। বেশিরভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি স্বল্পশিক্ষিত।
গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনী সংক্রান্ত আইন এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কিত আইন ব্যতীত বাংলাদেশে ৩৩ ধরনের অপরাধের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।
এর মধ্যে ৯টি অপরাধ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে, একটি পাকিস্তান আমলে এবং ২৩টি স্বাধীনতার-পরবর্তী সময়ে প্রণয়ন করা হয়।