এক মাসের ব্যবধানে দেশে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী বেড়েছে ২৭ হাজার ৮২৬ জন (৬৯ শতাংশ)। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি টানা তিন মাস শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ মাসে শনাক্ত বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি বদলে গেছে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেশি তীব্র। এ সময় দৈনিক শনাক্ত বেশি হচ্ছে। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দফায় সংক্রমণ যখন চূড়ায় (পিকে) উঠেছিল, সে সময়ের চেয়ে এই দফায় বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। এখন শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা) ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। বদ্ধ কক্ষে বড় জমায়েত থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়ায়। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট শনাক্ত রোগীর চেয়ে সুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাদ দিলে দেশে গতকাল ২ এপ্রিল চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৬৮ হাজার ২৮ জন। ঠিক এক মাস আগে, মার্চের ২ তারিখে চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৪০ হাজার ২০২ জন।
বিজ্ঞাপন
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্চ মাসে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৯ জনের। এই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৪৫ হাজার ৪৭৫ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে শনাক্তের চেয়ে ৬ হাজার ১০৩ জন বেশি সুস্থ হয়েছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসে করোনা শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হয়েছিলেন ২৮ হাজার ১৭০ জন।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। তবে চিকিৎসাধীন রোগীর দিক থেকে বাংলাদেশ ৩০তম স্থানে রয়েছে।
চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালেও চাপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার ১০টি হাসপাতালের ২ হাজার ৫১১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২ হাজার ৩৪২টি শয্যাতেই রোগী ভর্তি ছিলেন। ঠিক এক মাস আগেও হাসপাতালের চিত্র ছিল ভিন্ন। গত ২ মার্চ সাধারণ শয্যায় ৮৯১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।
শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। গতকাল ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের ১১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১০৮টিতেই রোগী ভর্তি ছিলেন। চার সপ্তাহ আগে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার ৩৫ শতাংশই ফাঁকা ছিল।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে আইসিইউর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আইসিইউ ফাঁকা নেই, কিন্তু আইসিইউর চাহিদা অনেক। অধিকাংশ সময়ই ১৫–২০ জন রোগী আইইসিইউর অপেক্ষায় থাকছে।
তবে সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যায় ভর্তি রোগী কম। সারা দেশে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৯ হাজার ৭১১টি। এসব শয্যায় গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ৪ হাজার ১৬৫ জন। আর আইসিইউ শয্যা নির্ধারিত রয়েছে ৫৮৬টি। তাতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৭০ জন। দেশের মোট চিকিৎসাধীন রোগীর মাত্র ৭ দশমিক ১১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত বুধবার এক সভায় বলেন, সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রাখার জায়গা নেই। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লায় রোগী যায় না। বেড (শয্যা) পড়ে আছে। ঢাকায় জোরাজুরি না করে কাছের জেলাগুলোতে গিয়ে সেবা নিতে পারেন।