করোনার টিকা দিতে গিয়ে বেশ চাপের মুখে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো। এসব হাসপাতালে টিকাকেন্দ্র পরিচালনা করতে হচ্ছে হাসপাতালের নিজস্ব লোকবল দিয়ে। টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে ৫০-৭০ শয্যার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হয়েছে। সেখানে সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স। এমনকি টিকা নিতে আসা ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে আসছে সমসংখ্যক লোকজন। এসব লোকজন চলাচল ও লিফট ব্যবহারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, টিকার জন্য অতিরিক্ত চাপ নিতে গিয়ে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটছে। জাতীয় কর্মসূচি হওয়ায় তারা এখন কষ্ট করে হলেও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন এভাবে এসব হাসপাতালে ব্যাপক আকারে টিকাদান কর্মসূচি চালানো সম্ভব নয়। এতে হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সমস্যা হবে।
অন্যদিকে, রোগী ও টিকা দুটো একসঙ্গে করতে গিয়ে কোনো কোনো হাসপাতালে টিকাদান ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। টিকাগ্রহীতার চাপ সামলাতে বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই টিকার বুথ করা হয়েছে। কোনো কোনো হাসপাতালে বুথে যাওয়ার জন্য লিফটের ব্যবস্থা নেই। বুথের দিকনির্দেশনা বা তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। এমনকি এসব হাসপাতালে বেডের অতিরিক্ত চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝখান দিয়ে টিকার লোকজনদের চলাচল করতে হচ্ছে। এতে টিকা নিতে আসা লোকজন ও রোগী উভয়েরই প্রতিদিনই নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এসব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা এবং জনস্বাস্থ্যবিদ টিকাদান কর্মসূচি ও রোগীদের চিকিৎসাসেবা নির্বিঘ্ন করতে বিশেষায়িত হাসপাতালে টিকার বুথ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা টিকাদানের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল ও সরকারের পরিবার কল্যাণ বিভাগের লোকবল ও এই বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে যুক্ত করার পরামর্শ দেন। তাহলেই বিশেষায়িত হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে এবং টিকাদান ও রোগীর চিকিৎসা দুটোই নির্বিঘ্নে চলবে।
গত দুদিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ঘুরে, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল সোমবার বলেন, আমরা তো প্রথমে থেকেই বলছি টিকা ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করা উচিত। কারণ তাদেরও রোগীর একটা বেইজ আছে। সেই রোগীগুলো তাদের ওখানেই যাবে, সরকারি হাসপাতালে ভিড় করবে না। শুধু দেখতে হবে যে বেসরকারি হাসপাতাল এটা নিয়ে ব্যবসা না করে। বিনামূল্যে টিকা দিয়ে যেন টাকা-পয়সা নিতে না পারে, সেটাও সরকারকে দেখতে হবে।
এ বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তার চেয়েও বড় বিষয় হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পুরো পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাদের জেলা পর্যায়ে ৬২টি হাসপাতাল আছে। উপজেলা পর্যায়ে তাদের চিকিৎসক ও প্যারামেডিক আছে। গ্রাম পর্যায়ে ২৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আছে। কেন ওদের ব্যবহার করছি না? তারা তো সরকারের লোক? এমনকি কভিড শুরু হওয়ার পরও তাদের উপেক্ষা করেছি, এখন টিকা দেওয়ার সময়ও উপেক্ষা করা হচ্ছে। এদের ব্যবহার করলে সরকারি সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চাপ অর্ধেক হয়ে যাবে। সেখানে চিকিৎসাসেবা নির্বিঘ্ন হবে। এদের নিলে বেসরকারি হাসপাতালেও যাওয়া লাগবে না।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতাল : মোহাম্মদপুরে বাসিন্দা জহির উদ্দিন। টিকা নিতে তার বৃদ্ধ মা ও বাবাকে নিয়ে এসেছেন এই হাসপাতালে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ঘোরাঘুরি করার সময় তার সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের। জহির জানান, হাসপাতালে নিচে এক আনসার সদস্য জানান দ্বিতীয় তলায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে এসে আরেক আনসার সদস্যকে জিজ্ঞেস করতে তিনি পাঁচতলায় পাঠান, সেখানে গিয়ে নিবন্ধন ফরম দেখালে টোকেন নিতে আবার দ্বিতীয় তলায় পাঠিয়েছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করার পর অবশেষে কনফারেন্স রুমের ভেতরে হেল্প ডেস্ক পাওয়া গেছে।
জহির উদ্দিন বলেন, টিকা নিতে এসে এরকম বিড়ম্বনা আশা করিনি। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে একবার দ্বিতীয় তলায় আবার পাঁচতলায়, পরে আবার দ্বিতীয় তলায় আসতে হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল মূল ফটকে হেল্প ডেস্ক রাখা অথবা দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করা। এতে করে বিড়ম্বনা শিকার হতে হতো না। বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক ও কভিড-১৯ এইএফআই (টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) ব্যবস্থাপনা কমিটির ফোকাল পারসন ডা. ফারুক আহমেদ এসব ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এটি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসে। তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তার মধ্যে করোনার টিকা কার্যক্রম চলছে। আমাদের নির্দিষ্ট সক্ষমতার বাইরে গিয়ে এখন টিকা দিতে হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আটটি বুথে টিকা কার্যক্রম চলছে। জায়গা সংকটের কারণে চারতলায় দুটি, পাঁচতলায় দুটি, সাততলায় দুটি ও আরেক জায়গায় দুটি বুথ করা হয়েছে। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ লোককে টিকা দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা লিফট চালু রাখতে হয়।
এ ব্যাপারে এই হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. বদরুল আলম গতকাল বলেন, টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে গিয়ে ভীষণ চাপ বেড়ে গেছে ও সাধারণ সার্ভিসে (চিকিৎসা) বেশ কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। কারণ টিকা নেওয়ার জন্য যে রোগীগুলো আসছে, তাদের জন্য আলাদা লোকবল নেই। হাসপাতালে লোকবল নির্দিষ্ট। সেই লোকবল দিয়ে বিভিন্ন বুথে টিকা দিতে হচ্ছে, টিকার পর আধঘণ্টা রেখে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে। টিকার জন্য ২০ জন নার্স আলাদা করা হয়েছে। তাদের টিকার কাজে প্রেষণে দেওয়া হয়েছে। এসব নার্স হাসপাতালের যেসব ওয়ার্ডে কাজ করতেন, সেখানে চিকিৎসা সেবায় বিঘœ ঘটছে।
দ্বিতীয় সমস্যার কথা উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন টিকা নিতে এক হাজার লোক আসছে। তাদের সঙ্গে আরও কমপক্ষে এক হাজার লোক আসে। এই লোকগুলো যে লিফট দিয়ে তিন ও পাঁচতলায় ওঠানামা করছে, তখন সাধারণ রোগীদের বাধ্য হয়ে লিফটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। টিকা নিতে আসা বেশিরভাগেই ভিআইপি। তাদের কিছু বলাও যায় না। একটা বিশেষায়িত হাসপাতাল এভাবে চললে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ সেবায় বিঘ্ন ঘটবেই।
সমাধান কী জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সমাধান একটাই, বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে টিকার সেন্টার কমাতে হবে। অন্য হাসপাতালে সেন্টার করা উচিত। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। কারণ এটা সবারই করা উচিত। যতগুলো ও যত ধরনের হাসপাতাল আছে, সবাইকে কাজে লাগানো উচিত।
এ কর্মকর্তা বলেন, এটা জাতীয় প্রোগ্রাম। আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু সমস্যা হলো দীর্ঘদিন হলে স্বাভাবিকভাবে সাধারণ রোগীদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল : হাসপাতালের চিকিৎসক ও অন্য কর্মকর্তারা জানান, বয়স্ক ও অসুস্থ লোকদের জন্য নিচতলায় জরুরি বিভাগের সামনে একটা বুথ করা হয়েছে। অন্য লোকজনের জন্য প্রশাসনিক ভবনের পাঁচতলায় বুথ করা হয়েছে। পরিচালক যেখানে বসেন, তার একতলা ওপরে টিকাকেন্দ্র। সেখানে টিকা নিতে চারতলায় লিফট ব্যবহার করতে হয়। সরাসরি টিকাকেন্দ্রে ওঠার লিফট নেই। চারতলায় নেমে সিঁড়ি ভেঙে পাঁচতলায় যেতে হয়।
এসব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা জানান, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নিচতলায় কোনো জায়গা নেই। ৪১০ বেডের হাসপাতাল। ৯০০-১০০০ রোগী থাকে। এমনিতেই রোগীতে কানায় কানায় পূর্ণ। লিফটের গোড়ায়, বারান্দা, বাথরুমের সামনে রোগী। কোথাও ফাঁকা নেই। চিকিৎসা বিঘ্ন হচ্ছে না, কিন্তু চাপ বেড়েছে। কারণ প্রতিদিন যে এক হাজার লোক টিকা নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে সমসংখ্যক বা তারও বেশি লোক আসে। এ লোকগুলো সিঁড়ি বা লিফট দিয়ে পাঁচতলায় যায়। তাতে বারান্দার যে রোগী আছে, তাদের সমস্যা হয়।
এখানকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিশেষায়িত হাসপাতালে চাপ কমাতে হলে অন্য হাসপাতালে টিকার কেন্দ্র বাড়াতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এসব হাসপাতালে টিকাগ্রহীতাদের জন্য যদি টিকা ব্যবস্থাপনাটা যদি ভালো না হয়, একজনেরও যদি টিকা থেকে সমস্যা হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে আবার টিকার ব্যাপারে ভয় চলে আসবে। পরে টিকার জন্য লোক পাওয়া যাবে না। সেজন্য যেসব হাসপাতালে চাপ বেশি, সেখানে চাপ কমাতে হবে।
বিশেষ করে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে টিকাগ্রহীতাদের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করতে গিয়ে বিশেষ রোগের চিকিৎসায় কিছুটা হলেও বিঘœ ঘটছে বলে জানান। এসব চিকিৎসক বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেড দিতে হবে, মেডিকেল টিম থাকতে হবে, নার্স থাকতে হবে, অক্সিজেন, লাইফ সাপোর্ট ও ড্রাগ থাকতে হবে। হাসপাতালগুলো তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে সীমিত আকারে হলেও এ ব্যবস্থাপনা করেছে। কিন্তু সেটা তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এজন্য আলাদা লোকবল দরকার। সরকারের উচিত হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা ব্যবস্থাপনা আপগ্রেড করা।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাপ একটু বেড়েছে, কিন্তু সেটা সামলানো আমাদের জন্য সমস্যা না। কারণ আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট আছে, ম্যানপাওয়ার আছে। তাই টিকাদান কর্মসূচি ভালোভাবেই চলছে। এখানে বয়স্ক লোকদের জন্য নিচে আলাদা বুথ করা হয়েছে। তরুণ শ্রেণির নারী-পুরুষের জন্য ওপরে আলাদা বুথ করা হয়েছে। ৮৫ বেডের একটা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র করা হয়েছে।
রোগীদের সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটছে কি না, জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। টিকার জন্য আলাদা ফ্লোর করে দিয়েছি। এমনকি দীর্ঘদিন টিকাদান কর্মসূচি চললেও কোনো সমস্যা হবে না। যে আলাদা ফ্লোর করেছি টিকার জন্য, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসূচি চলতে পারবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল : এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, টিকাদান কর্মসূচি ভালোই চলছে। তবে চাপ কিছুটা বেড়েছে। কারণ এটা তাদের রেগুলার কাজ না, বাড়তি কাজ। এই চাপ সামাল দিতে গিয়ে এখনো বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না, ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তারা। কারণ লোকবল নির্দিষ্ট। এখানকার লোকবল দিয়েই টিকাদান কর্মসূচি চালাতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, টিকাদান কর্মসূচি দীর্ঘদিন চললে অন্য রকম ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ভালো হয়। হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ কমে। হাসপাতালের সার্ভিস বহাল রাখতে সুবিধা হয়। আলাদা করতে পারলে ভালো হয়। আমরা ভলান্টিয়ার পাচ্ছি, রেডক্রিসেন্ট দিচ্ছে। কিন্তু নার্স ও ডাক্তার হাসপাতাল থেকেই দিতে হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিদিন সাড়ে তিন শর মতো লোক টিকা দিচ্ছে। এখন তিনটা বুথ। নিচতলায়। সুবিধা আছে। লোকজন নির্বিঘ্নে টিকা দিতে পারছে। আলাদা লোকবল দেওয়া গেলে হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ কমে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল : হাসপাতালটির প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় ফ্লোরে দশটি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। তবে হাসপাতালের সামনে নেই কোনো কভিড হেল্প ডেস্ক। ছিল না কোনো নির্দেশনা। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য জানতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা সচিবালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুপুর ১টায় আমি টিকা নিতে এ কেন্দ্রে আসি। টিকার বুথের কোনো নির্দেশনা নেই। একজন দেখিয়ে দিল দ্বিতীয় তলায়। আমার হাঁটুর সমস্যা, সিঁড়িতে উঠতে পারি না। তাই লিফটের কাছে গেলে দেখি তাও বন্ধ। পরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে উঠতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, অবশ্যই চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে জনসমাগম বেশি হচ্ছে। প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার অতিরিক্ত লোকজন আসছে। হাসপাতালে সকালে চাপ থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে চাপ বেড়েছে। হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের চিকিৎসকদের টিকার সঙ্গে যুক্ত করিনি। তবে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে টিকার সঙ্গে নার্স যুক্ত করতে হয়েছে। ফলে আগে যে ওয়ার্ডে পাঁচজন নার্স ছিল, এখন সেখানে চারজন দিতে হয়েছে।
এটা যদি দীর্ঘদিন চলে তাহলে আলাদা টিকাদান ব্যবস্থাপনা করতে হবে, যাতে হাসপাতালের লোকবল ব্যবহার করতে না হয়। এখন বুথের জন্য আলাদা দু-তিনটা কনফারেন্স রুম ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেখানে ছাত্রদের ক্লাস, সেমিনাররুম, সকালে একটা আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এটা এখন বিকল্পভাবে করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এভাবে চললে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে অসুবিধা হবে। সুতরাং আলাদাভাবে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। প্রতিদিন ২০ জন নার্স লাগছে। আমাদের তো অতিরিক্ত নার্স নেই। দীর্ঘদিন টিকা চালাতে হলে নতুন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : করোনার শুরু থেকে কভিড চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপতাল হিসেবে কাজ করছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কভিড আক্রান্ত রোগী ও করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু থাকায় স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শুরু থেকে কভিড চিকিৎসা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টিকাদান কর্মসূচি চালু হলে নির্দিষ্ট টার্গেটের বাইরে গিয়ে টিকা দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যাপারে হাসপতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আমাদের প্রতিদিন এক হাজার করোনার ডোজ দেওয়ার টার্গেট থাকলেও মানুষের চাপ থাকায় তা মাঝেমধ্যে কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়। গত ৭ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছে। অনেক বয়োবৃদ্ধ মানুষ আসে তাদের নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে হয়।
তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসায় সরকারের নির্ধারিত হাসপতাল হওয়ায় এমনিতেই স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ননকভিড রোগীদের চিকিৎসা চালুর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি।