মুক্তিযোদ্ধাদের মত ‘ভাষা সৈনিক’দের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করেন জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি এই ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভাতা চালু করা সময়ের দাবি বলে জানান তারা।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মগবাজার দিলুরোডে জনতার টিভির কার্যালয়ে আয়োজিত ফাগুনের আগুন ভাষা আন্দোলন নিয়ে জনতার বৈঠকে উপস্থিত আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র সঞ্চালানায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এনামুজ্জামান চৌধুরী, গণ-রাজনৈতিক জোট- গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটু, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন সমন্বয়কারী কৃষক মো. মহসিন ভুইয়া, ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ সদস্য শামীম আরা হ্যাপী প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধাদের মত ‘ভাষা সৈনিক’দের ভাষা বীর হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেয়া এখন সময়ের দাবী বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একই সঙ্গে সারা বছর শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষাসহ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্যও সরকারের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
তিনি বলেন, ৫২’র একুশের ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা অভিমত প্রকাশ করে আলোচকবৃন্দ বলেন, একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের প্রেরনা। এই অহঙ্কারকে বিতর্কিত করার সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। যারা একুশে ও স্বাধীনতা পদককে বিতর্কিত করতে চায় তারা দেশ ও জাতির শত্রু। বিতর্কিতদের হাতে যারা এ পদক তুলে দিচ্ছেন তাদেরও প্রতিরোধ করতে হবে।
জাসদ উপেদষ্টা এনামুজ্জামান চৌধুরী সারা বছর শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষাসহ ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক স্থানগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মায়ের ভাষার অধিকার এবং সম্মান রক্ষায় ভাষা আন্দোলন করেছি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা ভাতার জন্য আমরা ভাষা আন্দোলন করিনি। তবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং ভাষা শহীদদের অবদানকে তুলে ধরতেই স্বীকৃতি প্রয়োজন।
গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মইনুজ্জামান লিটু বলেন, দুঃখের বিষয় আজ ভাষা সৈনিক হিসেবে সরকারের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি চাইতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যদি সরকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মর্যাদা, ভাতা দিতে পারে তবে ভাষা সৈনিকদের কেন তা দিতে পারবে না?
এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা ভাষা সৈনিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বকৃতি ও মর্যাদা দাবি করে বলেন, ভাষা সৈনিকদের তালিকা তৈরি করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। অনেক ভাষা সৈনিক মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেকে মানবেতর জীবন-যাপন করে মারা গেছেন। স্বীকৃতি-সম্মান তো দূরে থাক, রাষ্ট্র তাদের কোনো খোঁজ রাখেনি। ভাষা আন্দোলন আমাদের গৌরবের ইতিহাস হলেও রাষ্ট্রের এ দায়িত্বহীনতা অত্যন্ত দুঃখের এবং অগৌরবের। গৌরবের ইতিহাসে অগৌরব-অমর্যাদা থাকতে পারে না।
কৃষক মো. মহসনি ভুইয়া বলেন, ভাষা আন্দোলনের পরিপূর্ণ ইতিহাস এখন পর্যন্ত লেখা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে আছে। একটি অধিকতর পরিপূর্ণ ইতিহাস আমাদের লেখা উচিৎ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে উপেক্ষা করলে জাতির মধ্যে অস্তিত্বহীনতা তৈরি হবে। সে জন্যই এর পরিপূর্ণ ইতিহাস দরকার। বিশেষ করে ভভিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে।
নারী নেত্রী শামীম আরা হ্যাপী বলেন, ভাষা শহীদ কেবল ভাইদের গৌরবের ইতিহাস না, বোনদেরও গৌরবের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অসাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। এখানে সঙ্কীর্ণতার কোনো সুযোগ নেই। নতুন প্রজন্মকে তিনি ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ঋদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।