বাংলাদেশজুড়ে আর্সেনিকের প্রভাব শুধু শারীরিক ক্ষতিই করছে না; মানবসম্পদের উৎপাদনশীলতা, জ্ঞান এবং উপার্জনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ইয়েল অর্থনীতিবিদ মার্ক রোজেনজওয়েগ। নতুন একটি গবেষণায় এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ইয়েল নিউজে সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ শতকে বাংলাদেশে আর্সেনিকের যে প্রভাব দেখা গেছে, তাকে ইতিহাসের গণ বিষক্রিয়া বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে আর্সেনিক প্রতিরোধে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে ডিপ টিউবওয়েল পদক্ষেপ অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় আর্সেনিকযুক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের শরীরে যে পরিমাণ আর্সেনিক শনাক্ত হচ্ছে, বাংলাদেশে তার চেয়ে ২০ গুণ বেশি মাত্রার পাওয়া যাচ্ছে!
আর্সেনিক নিয়ে এখন পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে, তার অধিকাংশ শারীরিক ক্ষতি সম্পর্কিত। ঢাকা ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ নাজমুল হাসানকে নিয়ে করা নিজের বিশ্লেষণে রোজেনজওয়েগ দাবি করেছেন, এই প্রথম তারা অর্থনৈতিক প্রভাব বুঝতে গবেষণা করেছেন।
তাদের আর্টিকেলটি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘রিভিউ অব ইকোনমিক স্টাডিজে’ প্রকাশিত হবে। তার আগে এটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘বিদ্যমান প্রভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি পারস্পরিক সম্পর্কের পরিণতি। অর্থনৈতিক ফলাফলের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে। আণবিক জেনেটিকস বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা সত্যিকারের প্রভাব শনাক্ত করতে পারি।’
১৯৮২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, আর্সেনিকের প্রভাবে মানবসম্পদ সেক্টর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার প্রভাব যাদের শরীরে রয়েছে, তাদের স্কুলে উপস্থিতির সংখ্যা কম। বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রেও এই বাংলাদেশিরা পিছিয়ে থাকছেন।
গবেষকেরা বলছেন, তরুণদের শরীরে যে পরিমাণ আর্সেনিক শনাক্ত হচ্ছে সেটি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে প্রশিক্ষিত চাকরির বাজার ২৪ শতাংশ ত্বরান্বিত হবে। উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়বে ২৬ শতাংশ।
আর্সেনিকের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সমান করা গেলে পুরুষদের উপার্জন ৯ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি নারীদের গৃহস্থালির উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।