দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভার নির্বাচন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। সন্ধ্যা থেকে আসতে থাকে ফলাফল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অধিকাংশ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে প্রথম ধাপের মতো বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। অধিকাংশ পৌরসভায় বিজয় পেয়েছেন তারা।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাজশাহীতে দুটি আ.লীগ, একটি বিদ্রোহী
শনিবার রাজশাহীর তিনটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর একটিতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী।
রাজশাহীর যে তিনটি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে সেগুলো হলো- বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এবং বাঘার আড়ানী। এর মধ্যে ভবানীগঞ্জে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ব্যালট পেপারে। অন্য দুটিতে নির্বাচন হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তার আলী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পৌরসভায় মেয়র হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম আতাউর রহমান খান। বাগমারার ভবানীগঞ্জে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবদুল মালেক। বাঘার আড়ানী পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী।
দিনাজপুরে আ.লীগ-বিএনপি একটি করে, স্বতন্ত্র একটি
দিনাজপুরের তিনটি পৌরসভায় একটি আওয়ামী লীগ, একটি একটি বিএনপি এবং একটি আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
দিনাজপুর (সদর) পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি রাশেদ পারভেজ পেয়েছেন ২৪ হাজার ২৬২ ভোট।
বিরামপুর পৌরসভায় নৌকা প্রতীকে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আক্কাস আলী বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকে নুরুজ্জামান সরকার পেয়েছেন ৮ হাজার ৬৮৬ ভোট।
বীরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকে বীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র মোশারফ হোসেন বাবুল বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে আ.লীগের উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম নুর পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৬ ভোট।
পাবনার চারটিই আ.লীগের দখলে
পাবনার চারটি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন।
বেসরকারি ফলাফলে পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ইসহাক আলী মালিথা পেয়েছেন ২৮ হাজার ৫৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়ন পেয়েছেন দুই হাজার ১৮৫ ভোট। উপজেলা রিটার্নিং অফিসার, ইউএনও পিএম ইমরুল কায়েস এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ফরিদপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ পেয়েছেন চার হাজার ৯৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এনামুল হক পেয়েছেন তিন হাজার ৫৭৯ ভোট।
সাঁথিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মাহবুবুল আলম বাচ্চু পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সিরাজ পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭০ ভোট।
ফরিদপুর ও সাঁথিয়ার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রিটার্নিং অফিসার, জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
এদিকে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী গোলাম হাসনায়েন রাসেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন।
বগুড়ার দুটিতে আ.লীগ-বিএনপি, একটিতে বিদ্রোহী
বগুড়ার তিনটি পৌরসভার মেয়র পদে একটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে বিএনপি এবং অপর একটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিতরা হলেন- সারিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান মতি, সান্তাহারে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো এবং শেরপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জানে আলম খোকা। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
কুষ্টিয়ায় তিনটিতে নৌকা, একটিতে মশাল
কুষ্টিয়ার চারটি পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের তিনজন প্রার্থী এবং একটিতে জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এর মধ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র পদে প্রার্থী আনোয়ার আলী বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। মিরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র পদে প্রার্থী এনামুল হক মালিথা বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ১০ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী স্বতন্ত্র আরিফুল ইসলাম মোবাইল মার্কা প্রতীকে দুই হাজার ৫১৫ ভোট পেয়েছেন।
কুমারখালী পৌর সভায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র পদে প্রার্থী সামসুজ্জামান অরুণ বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ১০ হাজার ১১০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি মনোনীত আনিচুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে দুই হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়েছেন।
ভেড়ামারা পৌর সভায় জাসদ মনোনীত মশাল প্রতীকের মেয়র পদে প্রার্থী আনোয়ার কবির টুটুল বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৭ হাজার ৯৩৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৫৪৯ ভোট পেয়েছেন।
হবিগঞ্জে দুই পৌরসভায় বিএনপির জয়
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নবীগঞ্জে সাবির আহমেদ চৌধুরী ও মাধবপুরে মো. হাবিবুর রহমান মানিক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সাবির আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৫ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন পেয়েছেন ২ হাজার ৬১৯ ভোট।
অপরদিকে মাধবপুরে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান মানিক পেয়েছেন ৫০৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ কুমার সাহা নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪১৮৫ ভোট।
নাটোরে দুটিতে আ.লীগের জয়
লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি (নৌকা) ছয় হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম বিমল (রেল ইঞ্জিন) পেয়েছেন পাঁচ হাজার সাত ভোট।
নলডাঙ্গায় জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬৩০ ভোট, তার নিকটতম বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্বাছ আলী ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১৯১০ ভোট।
বসুরহাটে ওবায়দুল কাদেরের ভাই বিজয়ী
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৩৮ ভোট, তার নিকটতম বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন এক হাজার ৪৫১ ভোট।
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ): শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আশরাফুল আজম নির্বাচিত হয়েছেন। ১০ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়ে তিনি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈয়বুর রহমান খান পেয়েছেন ৭ হাজার ২৮১ ভোট।
মনোহরদী (নরসিংদী): মনোহরদী পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন আট হাজার ৮৮২ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হক পেয়েছেন ৫৮৫ ভোট।
মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ): মুক্তাগাছায় বেসরকারিভাবে মেয়র পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিল্লাল হোসেন সরকার। তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পেয়েছেন চার হাজার ৩৫ ভোট।
চান্দিনা (কুমিল্লা): চান্দিনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হোসেন ভূঁইয়া নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৯ হাজার ৪৫১ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন জগ প্রতীকে তিন হাজার ১৫৫ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শাহ মো. আলমগীর খান ধানের শীষ প্রতীকে দুই হাজার ৬৯৫ ভোট পেয়েছেন।
বোয়ালমারী (ফরিদপুর): বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম রেজা লিপন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৯২৩৯ ভোট। বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ২৫৮৭ এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লিটন মৃধা পেয়েছেন ৩৮৮৮ ভোট।
ছাতক (সুনামগঞ্জ): ছাতক পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ১২ হাজার ৮২৩ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি মনোনীত রাশিদা আহমদ ন্যান্সি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন সাত হাজার ৯০৮ ভোট।