নাহিদুল ইসলাম শাহীন
এমন শূন্যতা নিরবতা ঢাকা আদালত পাড়ায় এর আগে দেখা যায়নি। এটিই প্রথম কোনো দূর্যোগ যার ধাক্কায় ক্ষত বিক্ষত সারা বিশ্ব। বিশ্বের প্রায় সকল ক্ষমতাধর রাষ্ট্র তাদের জনগনের জীবনমান সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে লক ডাউনে রেখেছে তাদের অফিস আদালত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং আদালত ভবনগুলো। চলাচলে আইনী নিষেধাজ্ঞাও কড়াকড়ি।
ইতিমধ্যেই চীন থেকে শুরু হওয়া মৃত্যু প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে ইতালি, আমেরিকাও আছে পরের ধাপে, আছে স্পেন, ফ্রান্স সহ প্রভাবশালী দেশগুলো। তাদের আইন আদালত পাড়াও একদম লক ডাউনে রয়েছে।
আমাদের দেশেও সরকারী ছুটি শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ, চলবে ৪ এপ্রিল। আরো সময় বাড়তে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
এরই ধারাবাহিকতায় ইতিহাসে এই প্রথম দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের আদালত পাড়াগুলো নিরব নিস্তব্ধ, জনমানব শূন্য।
হিসেব মতে সবচে জনবহুল আদালত পাড়াই হচ্ছে ঢাকা আদালত পাড়া। শুধু ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী সদস্য সংখ্যা প্রায় পঁচিশ হাজার। ক্লার্কের সংখ্যা আরো পাঁচ কিংবা বেশি কম হতে পারে। মক্কেল, বিচারক, কোর্ট স্টাফ এবং বিভিন্ন ভাসমান ফুটপাতে দোকানের ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আছে পুলিশ ভাইয়েরা দায়িত্বরত। এবার সমীকরণ মিলালে হিসেব করা যায় কতো হাজার, লাখ জনসাধারণের পদভারে মুখরিত থাকে ঢাকা আদালত চত্বর।
এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ছোবলে দিশেহারা জনমানব। দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা হলেও তাদের বেতন ভাতা নির্দ্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাবে হাতেহাতে। এমন নিয়ম বিধি বেসরকারি সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
নিয়মের বাইরে পেশাগত প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থল আদালতের আইনজীবী, ক্লার্করাগণ পড়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে চরম বিপাকে ক্লার্ক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী বা নতুন সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের সময় এখন দূর্বিসহ। ঘরে আটকে আছে সাতদিন। যে পেশায় “আদালতে গেলে টাকা না গেলে না-ই” ভিত্তিতে। যাদের সরকারী বা নিয়মমাফিক বেতনের সুযোগ সুবিধা নেই। তারা ঘরে বসে আর্থিক অভাবে সময় কাটাচ্ছে দূর্ভাবনায়। খাবার সংকটে পড়েছে মেসে থাকা শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও সনদপ্রাপ্ত নতুন আইনজীবীগনও।
এমন ভয়াবহ দুঃসময়ে রয়েছে অনেক আইনজীবী ও ক্লার্করাও। লাজ লজ্জা ও আত্মসম্মানের কথা ভেবে খাদ্য সহায়তা বা আর্থিক সহযোগিতার নিবেদনও করতে পারেনা অনেকে।
আইনজীবীদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান- “ঢাকা আইনজীবী সমিতির” কাছে ইতিমধ্যেই অনেকে ঋন সুবিধা পেতে লেখালেখি করে যাচ্ছে। কিন্তু আইনানুযায়ী নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ “বারে” আবেদনও করেননি।
এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন তারা আপদকালীন সময়ে আইনজীবীদের ঋন সুবিধার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহন করেননি। এর আগে তারা বা পূর্বের সমিতি পরিচালনা পর্ষদও দূর্যোগকালীন রাষ্ট্রেীয় বা বৈশ্বিক সমস্যার বিষয় মাথায় নিয়ে আলাদা কোনো ফান্ড গঠন করেননি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে জনজীবন আবার স্বাভাবিক হলে বর্তমান কমিটি নতুন করে ভাববে বলে জানিয়েছেন বর্তমান সমিতির নয়া সভাপতি।
খুব শিগগিরই এই মহামারী করোনা ভাইরাসের দাপট নতজানু হয়ে আসবে। আবার স্বাভাবিক হবে বিশ্ব। সবাই আবার নতুন করে শুরু করবে জীবন কর্মকান্ড। শুরু হবে মৃত মানুষের শোক ভুলে অন্যরকম জীবন।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবেদন অর্থ্যাৎ আইনজীবীদের আপদকালীন ঋন সুবিধা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের, যাতে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক যেকোনো দূর্যোগে আইনজীবীদের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়তে না হয়।
সবার দাবী একটিই আইনজীবীদের জমানো অর্থ সমন্বয় করে আইনজীবীদের ঋন হিসেবে প্রদান করবে আইনজীবী সমিতি, এতে সমিতির গড়িমসি করার কারন কি? এ প্রশ্নও অনেকের।
মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম ( নাহিদ শাহীন)
আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা।