বিনম্র শ্রদ্ধা আর শোকের মধ্য দিয়ে দেশবাসী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করছেন। শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন মানুষ।
সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের অন্যান্য নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডিতে জমায়েত হন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী মানুষ এসেছিল ফুল হাতে। সর্বত্র বিরাজ করে শোকের আবহ।
এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন ছাড়াও জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ও সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতিহা পাঠ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনেই এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।
কিছু বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্ত এবং সেনাবাহিনীর একদল উচ্ছৃঙ্খল উচ্চাভিলাষী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রাণ হারান তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। তবে প্রবাসে থাকায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
আগস্টের এ হত্যাকাণ্ডে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনসহ বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ এবং কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা ও কর্মচারী।
জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ও অভিশপ্ত এই দিনটিকে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে শনিবার ভোর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশ এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। সকাল সাতটার মধ্যেই অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জমায়েত হয় ৩২ নম্বর সড়ক ও আশপাশের এলাকা। তাদের সবার মধ্যে ছিল শোকের আবহ। সবাই মুখে মাস্ক দিয়ে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সকাল সাড়ে পাঁচটায় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা ত্যাগ করার পর সর্বস্তরের নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সকাল ১০টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুলে-ফুলে ভরে যায়।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেক যান বনানী কবরস্থানেও। সেখানে ১৫ আগস্ট শহীদ হওয়া অন্যান্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
এদিকে মানুষের নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকায় নেয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যের স্মরণ করছে গোটা জাতি।