নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জব্দ করা মাদক ফেনইথাইলামিন (Phenethylamine) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল, উদ্বেগ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দেশে এর আগে কখনোই এ ধরনের মাদক জব্দ করা হয়নি বলে র্যাব জানায়। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামের খুলশী থানার ফয়’স লেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফেনইথাইলামিন নামের এই মাদক উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
২০১৮ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত মাদক হিসেবে চিহ্নিত আছে ফেনইথাইলামিন। এই মাদক কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ২৫ গ্রামের বেশি উদ্ধার হয়েছে মর্মে আদালতে প্রমাণিত হলে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন বিচারক।
র্যাবের ওই অভিযানে ফিরোজ খান (৩৭) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭৭৭ গ্রাম ফেনইথাইলামিন মাদক উদ্ধার করা হয়। ধৃত ফিরোজ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। এই ঘটনায় র্যাব-৭ সদস্য জাকির হোসেন খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেনকে। তিনি বলেন, ‘এটি নতুন মাদক। তাই বিস্তারিত এখনই বলা যাচ্ছে না। গ্রেপ্তার আসামি ফিরোজ দাবি করেছে, তার সঙ্গী আজিজের জানা আছে এই মাদক কোথা থেকে কিভাবে এসেছে কিংবা গন্তব্য কোথায়। পলাতক আসামি আজিজকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’ তবে ফিরোজকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান ওসি।
সাদা পাউডার জাতীয় এবং দেখতে অনেকটা কোকেনের মতো এই বস্তু যে ফেনইথাইলামিন নামের মাদক, এটা কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, ‘এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ঢাকায় র্যাব সদর দপ্তরের ল্যাবে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি ফেনইথাইলামিন মাদক।’ এই মাদকের উৎস ও গন্তব্য কোথায় ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ধার করা এই মাদকের গন্তব্য কোথায় এবং উৎসস্থল কোথায়, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তদন্ত সবেমাত্র শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। তদন্তের পরই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে এই মাদকের উৎস ও গন্তব্য কোথায় ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মামলার তদন্তভার র্যাব গ্রহণ করবে। সাধারণত শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে, ওজন কমাতে, ডিপ্রেশন কাটাতে বা শরীর-মনে প্রফুল্লতা আনতে এই মাদকের ব্যবহার হয়ে থাকে, যা ক্রমশ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়।
চট্টগ্রামে কর্মরত র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক আইনে ‘ক’ তফসিলভুক্ত এই মাদক দেশে কিভাবে কারা এনেছে, সেটা এখনই বলা মুশকিল। বলা হয়, এই মাদক কোকেনের চেয়েও দামি। দেশে কারা এই মাদক সেবন করে, সেটাও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে এই ঘটনায় একটা জিনিস পরিষ্কার যে হেরোইন, কোকেন ও ইয়াবার পর এবার ভয়াবহ ফেনইথাইলামিন মাদকেও আসক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মাদকসেবীরা।