স্টাফ রিপোর্টঃ কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় চার পুলিশ ও তিন সাক্ষীর সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার কক্সবাজারের একটি আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
যাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে তারা হলেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন। অন্য তিনজন হলেন- মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। তারা তিনজনই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। এরা হত্যাকাণ্ডের পর সিনহা রাশেদ খানকে ডাকাত বলে প্রচার করেছিল।
এর আগে গ্রেফতার সাক্ষীরা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, এ হত্যার ঘটনা তারা কেউ নিজের চোখে দেখেননি। ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে তাদের ডেকে নেয়া হয়। পরে সকালে টেকনাফ থানায় নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তারা। পরে জানতে পারেন তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। এদিকে সিনহার বোনের করা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৯ আসামির মধ্যে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ সাতজন কারান্তরীণ। তাদের মধ্যে প্রধান তিন আসামির সাত দিনের রিমান্ড এবং বাকি চারজনকে দু’দিন করে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।
গত শনি ও রোববার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ড এবং তার সাথে রিলেটেড নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। আরও তথ্য জানতে ওই চার আসামিকে নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার আদালতে আবেদন করা হয়। আজ তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ। ওই সময় তার গাড়িতে সিফাত ছিলেন। সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থনায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়। আর তারা যেখানে থেকে কাজ করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়ার অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। পুলিশের করা এই তিন মামলার পর গত ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় আত্মসমর্পণ করে এখন কারাগারে আছেন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য। এদিকে আদালতের নির্দেশে চারটি মামলায়ই এখন তদন্ত করছে র্যাব।
এরইমধ্যে পুলিশের তিন মামলায় গ্রেপ্তার সিফাত ও শিপ্রাকে জামিন দিয়েছে আদালত। সিনহা হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গত সোমবার রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া থেকে তিন বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব, যাদের এই ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় সাক্ষী করা হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে র্যাব। আদালত র্যাবের আবেদন আমলে নিয়ে তিনজনকে জেল হাজতে পাঠানোর নিদের্শ দেন। একই আদেশে রিমান্ডের আবেদন শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। বুধবার তাদের সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে গত সোমবার বিকালে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার পুলিশ সদস্যের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। যার শুনানি শেষে আজ তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।