লেবাননে ঠিক কী ঘটেছে, এটা নিশ্চিতভাবে জানতে সময় লাগবে। অনেকেই অনেক কনক্লুশন টানার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কোনো ঘটনা ঘটার পর এত তাড়াতাড়ি নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। বড়জোর বিভিন্ন সম্ভাব্যতার কথা অনুমান করা যায়। সেরকম কিছু পয়েন্ট বলি:
১। অনেকেই ইসরায়েলি আক্রমণের কথা বলছেন। যদিও কোনো হামলা হয়েছে কিনা, সেটা এখনও জানা যায়নি, কিন্তু এমনিতে এ ধরনের হামলা ইসরায়েলের কাজ হতেই পারে। ইসরায়েলের সাথে হেজবুল্লাহর গন্ডগোল চলছে। বিপ্লবী সুন্নি মুজাহিদরা যতই ডাউনপ্লে করুক, সিরিয়াতে গত কয়েক বছরে হেজবুল্লাহর উপর প্রচুর অ্যাটাক হয়েছে। এবং গত দুই-তিন দিন ধরে এই উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এখানে যদি হেজবুল্লাহর কোনো বিস্ফোরকের মজুতের কথা ইসরায়েলের নলেজে যায়, তারা সেটা ধ্বংস করতেই পারে।
২। কিন্তু এটাই একমাত্র সম্ভাবনা না। বিস্ফোরণটা নিছক দুর্ঘটনাও হতে পারে। দুনিয়ার সব কিছুর পেছনে মাস্টার প্ল্যান থাকে না। অনেক কিছু নিছক দুর্ঘটনার কারণেও ঘটে। এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম অপ্রেফনালিজমের পরিচয় দেয় নিয়মিত। কাজেই অফিশিয়ালি যেরকম শোনা যাচ্ছে, সেখানে পূর্বে আটক হওয়া পটাশিয়াম নাইট্রেটের বিশাল মজুত ছিল, সেখানে আগুন পৌঁছানোয় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটাও খুবই সম্ভব।
৩। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর একটা টুইট শেয়ার করছে সবাই। কিন্তু এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। প্রথমত ঐ টুইট দুপুরবেলার। বিস্ফোরণের অনেক আগের। এবং সেখানে লেবানন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে সিরিয়াতে হেজবুল্লাহর উপর আক্রমণের কথা। দ্বিতীয়ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আজকে জীবনে প্রথম এরকম টুইট করেনি। ইরানের সাথে, হেজবুল্লাহর সাথে টুকটাক দ্বন্দ্ব নিয়ে নিয়মিত এরকম টুইট করেছে। এই অ্যাকাউন্টেরই পেছনের হিস্ট্রি ঘাঁটেন, প্রচুর টুইট পাবেন।
৪। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওগুলো থেকে এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে, পোর্টের কাছে একটা ওয়্যারহাউজে প্রথমে আগুন লেগেছে, সেখানে অনেকগুলো ছোটছোট বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং এরপর বিশাল ঘটেছে বিশাল বিস্ফোরণটা। বিশাল বিস্ফোরণের আগেই যে ছোটছোট অনেকগুলো বিস্ফোরণ ঘটছিল, সেখান থেকে লেবাননের অফিশিয়াল ভার্সনে মিল পাওয়া যায় যে, ঐ ওয়্যারহাউজে আসলেই বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা ছিল।
৫। লেবানিজ অফিশিয়ালরা পটাশিয়াম/অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দায়ী করছেন। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল থেকেই সেখানে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা ছিল। এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ছয় বছর ধরে ওগুলো এরকম জায়গায় ফেলে রাখার পেছনে কারা দায়ী, তা তদন্ত করে প্রকাশ করা হবে।
সাংবাদিকরাও ২০১৩/২০১৪ সালের পুরানো রিপোর্ট খুঁজে বের করেছে, যেখানে কোনো একটা জাহাজ থেকে ২৭০০ টন নাইট্রেট আটকের ঘটনা উঠে এসেছিল। ওয়ালিদ জাম্বলাতসহ লেবানিজ অন্যান্য পলিটিশিয়ানরাও এই নাইট্রেটের মজুত নিয়েই কথা বলছে।
লেবানিজ টিভি চ্যানেল এলবিসি রিপোর্ট করেছে, নাইট্রেট রাখা ঐ ওয়্যারহাউজে চুরি ঠেকানোর জন্য একটা ছিদ্র ওয়েল্ডিং করাতে গিয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং এরপর সেখান থেকেই বিস্ফোরণ হয়।
সুতরাং এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, বাইরের আক্রমণের তুলনায় এটা দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও এই ধরনের অবহেলাজনিত ঘটনাগুলোকে নিছক “দুর্ঘটনা” বলে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নাই। এবং আসলেই ওয়েল্ডিং থেকেই আগুনের সূত্রপাত, নাকি কোনো নাশকতা ছিল, সেটাও তদন্তসাপেক্ষ।
কিন্তু আপাতত ইসরায়েলি বিমান হামলা, হেজবুল্লাহ্র গোপন অস্ত্র ভাণ্ডার, প্রভৃতির চেয়ে দুর্ঘটনার দিকেই পাল্লা ভারি বলে মনে হচ্ছে। যদি ভিন্ন কিছু হয়েও থাকে, আশা করা যায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অন্তত টুইটারে হলেও গুঞ্জন শোনা যাবে।
আরব বিশ্বের মধ্যে লেবাননে সবেচয়ে বেশি সাংবাদিকের ঘাঁটি। সিরিয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরব পর্যন্ত যারা কভার করে, তাদের বড় একটা অংশের বেজ লেবাননে। এবং লেবানিজ নাগরিকরাও শিক্ষিত, ইংরেজি জানা। তারাও টুইট করবে।
সো লেটস ওয়েট।