আমার স্ত্রী খুব একটা মার্কেটে যায় না, বছরে দুই একবার। আমার চয়েস মোটামোটি খারাপ নয়,তারপরও মার্কেটে গেলে আমি নিজেকে নিজেই হাবলু বানিয়ে ফেলি।
বউকে নিয়ে মার্কেটে গেলে, এমন ভাব ধরি যেন আমি ভালো কেনাকাটা করতে পারি না, জামাকাপড় চয়েস আমার নিম্নমানের,এবং দামাদামি আমার একদম পছন্দ নয়!
বউয়ের সামনে মার্কেটে গিয়ে ইচ্ছা করে এমন অদ্ভূত জিনিস চয়েস করি,যাতে বউ মনে করে আমার রুচি আসলেই খুব খারাপ!
বউ মনে করে ছেলেমেয়ের জামাকাপড় কিনলে আমি হয় বড়ো কিনে ফেলবো নয়, ছোট!
এই যে হাবলু সাজি,কেন বলেন তো?
আমার বউ কিছুটা ধার্মিক টাইপ মানুষ,আমি যা কিনে দিবো তাই সে পরবে। আমাদের ধর্মেও তাই বলা আছে,স্বামী যা কিনে দিবে হাসিমুখে তা স্ত্রীকে পরতে হবে।তাই সে জামাইয়ের মনে কোন কিছু অপছন্দ করে কষ্ট দিতে চায় না!
জীবন তো একটাই।
আমার পছন্দের জিনিস আমি যে কোন সময় কিনে নিতে পারি,বেচারা কিন্ত পারে না। বিশেষ কোন দিবস ছাড়া সে মার্কেটে যায় না। হয় ঈদ না হয় আত্বীয় স্বজনের বিয়েশাদী বা এই টাইপ কারনে সে মার্কেটে আসে।
অনলাইনে সে কেনাকাটা করে না। তার ধারনা অনলাইনের জিনিস ভালো পাওয়া যায় না,একটা দেখিয়ে অন্যটা গছিয়ে দেয়। তাছাড়া মার্কেট ঘুরে ঘুরে কেনার যে মজা, এটা অনলাইনে পাওয়া যায় না।
জামাই ভালো মার্কেট করতে পারে না, রুচিবোধ ভালো নয়,বউরা মনে হয়, এমন বোকা জামাই পেয়ে খুব একটা আফসোস করে না, মনে মনে খুশী হয়।
সে মাঝে মাঝে বলে,আচ্ছা, তুমি যে ঠিকঠাক মার্কেট করতে পারো না,তুমি এতো বোকা কেন?আমাকে ছাড়া তো তুমি কিছুই কিনতে পারো না!
আমি হাসতে হাসতে বলি,আমি বোকা বলেই তো তোমার মতো বুদ্ধিমানকে বিয়ে করেছি,যাতে আমাকে চালিয়ে নিতে পারো!
সে মার্কেট ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করে, আমি পেছেনে পেছনে ব্যাগ নিয়ে ঘুরি। সারাদিন মার্কেটে সে চষে বেড়ালেও কিছু বলি না। বেচারা তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে একটা দিনই তো নিজের মতো করে পাচ্ছে!
বোরকা পরে হিজাব পেচিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ালেও তাকে আমি ক্লান্ত হতে দেখি না, হালকা টিশার্ট পরেও আমার ঘাম ছুটে আর সে হাসিমুখে দৌড়াদৌড়ি করে!!
নিজের জন্য,জামাইয়ের জন্য,ছেলেমেয়ের জন্য পছন্দমত জিনিস কিনতে পারার আনন্দ তার চোখেমুখে জ্বলজ্বল করে। এটা আমি বেশ উপভোগ করি। এই আনন্দের তুলনা হয় না।
সে হয়তো আমার জন্য একটা জামা পছন্দ করেছে,যেটা আমার পছন্দ হয়নি,তারপরও না করি না। বেচারা দিক না একটা জামা পছন্দ করে। সারাবছর তো নিজের পছন্দের জামাকাপড়ই পরি।
তারপরও বলি,তার রুচি আমার চেয়ে ভালো এবং সে যে বুদ্ধিমত্তার সাথে মার্কেট করে,সেটা আমার দ্ধারা আসলেই সম্ভব নয়। আমি যে জামা কিনবো তিন হাজার টাকা দিয়ে,সেটা সে কিনবে বড়জোর দুই বা আড়াই হাজার দিয়ে!
মেয়েরা বোধহয় জম্মগতভাবেই মার্কেট করার বিশেষ গুন নিয়ে জম্মায়!
দোকানদার অনায়াসেই আমাদের ঠকাতে পারে,মেয়েদের পারে না।এটা মেয়েদের অদ্ভূত একটা গুন!
অনেক সময় দেখা যায়,সে একটা জিনিস পছন্দ করেছে কিন্তু দাম বেশি। দাম শুনে সে পিছিয়ে আসে। আমি হয়তো তাকে সেই জিনিসটা কিনে দিতে চাই, সে উপরে উপরে রাগ দেখালেও আমি জানি,ভিতরে ভিতরে সে খুশি হয়!
আমরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাইরে বেড়াতে গেলে হৈ চৈ করতে করতে হোটেলে খেতে গিয়েও দুই এক হাজার টাকা খরচ করে ফেলি।
বছরে দুই একবার দুই এক হাজার টাকা দিয়ে বউয়ের জন্য একটা জামা কিনে নিয়ে গেলে যে খুশি হয়, তার তুলনা হয় না।
সংসার সুখী করতে চাইলে খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না।
শুধু একটু আন্তরিকতা থাকলেই চলে।
লেখকঃ হানিফ ওয়াহিদ, ফ্রিলান্সার রাইটার। ফেসবুক কর্নার।