সব
facebook apsnews24.com
বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিসিয়ারীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই - APSNews24.Com

বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিসিয়ারীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই

বিচার ব্যবস্থায় ই-জুডিসিয়ারীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম

অতি সম্প্রতি করোনা মহামারিতে আদালেতের কাজ চালানোর জন্য অনেক ভালো ভালো ‍উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আদালতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার তথা ভার্চুয়াল আাদলত অধ্যাদেশ, ২০২০, যেটি আইনে পরিণত করা হয়েছে। প্রথম দিকে ভার্চুয়াল আদালতে শুধু জামিন শুনানি হলেও এখন দেওয়ানী ও ফেীজদারী উভয় ধরণের মামলা পরিচালনা করা যাচ্ছে। যদিও অতি সম্প্রতি একটি ঘটনা আমাদের লজ্জিত করে । একজন আইনজীবী ভুয়া নথির মাধ্যমে তার মক্কেলদের জামিন করান। ঘটনাটি প্রকাশ হবার পর সেই আইনজীবির জামিন শুনানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নথি নকলের ঘটনা নতুন নয় বলে এতে ভার্চুয়াল আদালতকে দোষা যাবে না। তবে একটি বিষয় পরিস্কার বিচার ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়ায় বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। এই পরির্তনের সাথে বর্তমান বাজেট ও তার সঠিক ব্যয় আদালতকে তার সক্রিয়তার জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। দেশের অধস্তন (বিচারিক) আদালতসমূহকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্ট রুমে পরিণত করা হবে, যার ফলে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। তাছাড়া ই-জুডিসিয়ারী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দূর্নীতি কমবে বলে বিচার সংশ্লিস্টরা মনে করছেন।

১৯৭২-১৯৭৩ অর্থ বছরের বাজেটের তুলনায় আমাদের বাজেট আজ ৭২২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। নানা খাতে গুণগত কিছু পরিবর্তন অবশ্যই হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগেও এবারের বাজেটে ১০৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও অনেকে বলছে শতাংশের অংকে তা গত বছরের তুলনায় কম তবুও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বিচার বিভাগের যে লক্ষ্য তা পূরণ করা সম্ভব। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনকালে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবার ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে বাজেট প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে। এ হার গত বাজেটে ছিল জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেট উপস্থাপন কালে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত খরচ দেখা দিয়েছে তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় আগামী বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

দেশের অধস্তন (বিচারিক) আদালতসমূহকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্ট রুমে পরিণত করা হবে, যার ফলে বিচারপ্রার্থীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা, বিচার ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রম অটোমেশন, ই-কোর্ট রুম স্থাপন এবং বিচারক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইসিটি সক্ষমতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি আদালতকে ই-কোর্ট রুমে পরিণত করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি আদালত এবং বিচারকার্যের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দফতর যেমন থানা, হাসপাতাল, কারাগার এবং সম্পৃক্ত ব্যক্তি যেমন তদন্তকারী, সাক্ষী, আইনজীবী, আসামি ইত্যাদি সেন্ট্রাল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকবে বিধায় মামলা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। এতে বিচারপ্রার্থী জনগণের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে বিচারপ্রার্থীরা শিগগিরই এর সুফল ভোগ করতে পারবেন’।

ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে অনেকের যেমন আগ্রহ আছে তেমনি কিছু ক্ষেত্রে তা সংকট তৈরী করছে । যদিও বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারে সবাই কম বেশী অভ্যস্ত তবুও কোন কারনে যদি কেউ বঞ্চিত হয় সে বিষয়টিও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।  অনেকেই সঠিক ভাবে নেট ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের এলাকায় দ্রুত গতির নেটের সমস্যা আছে। ফেীজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হলে শাস্তি দেয়া যায় । বিচার কাজের কাজে সমাজ ও ব্যাক্তিজীবনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক । তাই সাধারণ নেটে ভিডিও চ্যাট জাতীয় চিন্তার সাথে আমরা একে মিলাতে পারি না। বর্তমান বাজেট ও সদ্য পাশকৃত আইনের দিকে নজর রেখে তাই বিচার ব্যবস্থায় বিচার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টদের নেট ব্যবহার ও গতি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী ভিত্তিতেই নিতে হবে।

গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে এবার বেড়েছে ১০৭ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের জন্যও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সাথে সাথে বিচার বিভাগ তাল মিলিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে এরকম গতিশীল বাজেট অবশ্যই দরকার।

কতিপয় দেশ ছাড়া পুরো বিশ্ব করোনা মহামারীতে একরকম স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিছু সেবা খাত সংগত কারনেই জনগণের ভিতর নিরাপত্তা নিশি্চত করতে এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে সেবা দেবার কাজটি চলছে। ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সারা দেশের অধস্তন আদালতে ২০ কার্যদিবসে ৬০ হাজার ৩৮৯টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় ৬৩ হাজার ১৫৫ জন জামিন পেয়েছেন। গত ১১ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদালতের ২০ দিনের কার্যদিবসে এসব তথ্য মেলে।( সূত্র: প্রথম আলো)

আবার অতি সম্প্রতি একটি আন্দোলনের সূচনা হয়েছে ও তার কার্যক্রমও আমরা অবলোকন করছি। ভুয়া আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী/মুহুরী সহ আাদালত প্রঙ্গন থেকে  সকল দালাল ও টাউটদের উচ্ছেদ করার  সংগঠনের নাম “টাউট, দালাল, দূর্নীতি নির্মূল আন্দোলন”। তারা তাদের কাজে  ইতোমধ্যেই সাফল্য দেখিয়েছে। ভুয়া আইনজীবী ব্যরিস্টারসহ  কতিপয় দালাল সনাক্ত করে তারা  আইনের আওতায় আনতে সম্মত হয়েছে। আইনের প্রতি আস্থা তৈরীতে এই কাজ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে তাই নতুন অর্থ বছরে বিচার বিভাগ এই আন্দোলনটি নিয়ে ভাবতে  পারে।

যেহেতু নতুন বাজেট তৈরী করা হয়েছে আদালতকে ডিজিটাল করার কাজ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে নতুন চিন্তা ও সম্ভাবনার জন্ম দেয়া উচিত । বাজেট কাজে লাগনোর বিষয়ে আমরা কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিতেই পারি।

১.  ভার্চুয়াল উপস্থিতির বাইরেও বিদ্যমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে ধীরে ধীরে সীমিত পরিসর নিয়মিত কোর্ট চালু করতে পারি যা ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। তবে কোনভাবেই আদালতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার কমানো যাবে না বরং বাড়াতে হবে।

২.  গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এর নতুন কাঠামো নির্ধারণে কাজ করতে পারি। তাহলে মামলাজট কমতে পারে।

৩.  আদালত চত্ত্বরের সকল আইন সংশ্লিষ্টদের সঠিক পরিচয় যাচাই পূর্বক “টাউট, দালাল, দূর্নীতি নির্মূল আন্দোলন”- এর কাজকে গতিশীল করতে পারি।

৪.  বিচার সংশ্লিষ্টদের পর্যাপ্ত  ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।।

৫. বিচারক ও আইনজীবীর অফিসে বা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে উন্নত নেট ও কেবলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত ও ব্যবহার নিয়ে কাজ করতে পারি।

৬. উচ্চতর আদালতের রায়গুলো নিয়ে গবেষণা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলায় অনুবাদ করার কাজ করা যেতে পারে।

৭.  অনলাইন ক্লাসরুমে আইনজীবী ও বিচারকদের অংশগ্রহণ করানো যেতে পারে যাতে শিক্ষার্থীরা ব্যাবহারিক জ্ঞান পায়। শিক্ষার্থীরা যখন আইন পেশায় প্রবেশ করবে তখন তারা ম্যানার এটিকেট ও আচরনবিধি মানতে সহায়ক হবে।

৮. করোনাকাল শুধু নয় সকল সময়ে প্রয়োজনে ডিজিটাল বা অনলাইনে বিচার সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

৯. আন্দোলনরত শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকা ভুক্তির পরীক্ষা নিয়মিত নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

১০. জনস্বার্থে ই-কোর্টরুম স্থাপন কাজ বিধিমোতাবেক ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

লেখকঃ কলামিস্ট ও আইন বিশ্লেষক।

আপনার মতামত লিখুন :

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj