সব
facebook apsnews24.com
শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা - APSNews24.Com

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার মে দিবস পালিত হবে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক কেমন হবে তা আইনে বলা আছে। শ্রমিক কতঘন্টা কাজ করবে, বেতন ভাতা কেমন হবে, দুর্ঘটনায় পড়লে শ্রমিকরা কত ক্ষতিপূরণ কিভাবে পাবে তা আইনে নির্ধারিত।চাকরি ও চাকরির শর্ত, কর্মীদের শ্রেণীবিভাগ এবং প্রবেশন সময়কাল, ছাঁটাই এবং ছাঁটাই, চাকরির অবসানের বিধান করে। আইনে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের কর্মসংস্থানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ বিদ্যমান ও বলবৎ আছে। এই আইনটি অবশ্য ২০১৩ ও ২০১৮ সালে সংশোধিত হয়েছে। তাছাড়া ২০১৫ সালে শ্রম বিধিমালাও হয়েছে। আইন আছে বটে কিন্তু আইনের প্রয়োগে সমস্যা আছে কিনা বা ঠিক কি কারণে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক ঠিক থাকছে না বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শ্রমিক মালিক সম্পর্কের উন্নতি করে কিভাবে শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ বজায় রাখা যায় এবং দেশের উন্নয়ন অব্যহত থাকে সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

বিদ্যমান আইনে শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে। শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার্থে কার্যকরী একটি আইন তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।তবে এই আইন মেনে কতটুকু শ্রমের মর্যাদা এবং শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে সেটি বড় প্রশ্ন।আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবে কতটুকু প্রতিপাল্য হচ্ছে সেটি দেখার একটি বিষয় বার বার মনে উঁকি দেয়। তবে ২০১৩ সালে সরকার শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। উক্ত সংশো্ধিত আইনের প্রস্তাবনায় শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জরিমানার ব্যবস্থাও আছে। ১৪ বছরের নিচে যেকোনো বয়সী শিশুকে কাজে নিয়োগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। এসবই প্রশংসনীয় ও ভালো উদ্যোগ, তবে প্রস্তাবিত সংশোধনীর বেশ কিছু বিষয়ে আরও কাজ ও সুপারিশ করার সুযোগ আছে। বিদ্যমান ২০০৬ সালের শ্রম আইন, শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এবং প্রস্তাবিত সংশোধিত ২০১৩ সালের শ্রম আইনের কার্যকর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়, তা আজকের আলোচনার বিষয়।

পহেলা মে সারা বিশ্ব এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ পালন করে থাকে। যদিও এবার জলবায়ু পরিবর্তনে সারা পৃথিবীর প্রেক্ষাপট ভিন্ন।মরু অঞ্চলে বৃষ্টি, ঝড়, বন্যা এবং ষড়ঋতুর দেশে মরুর তাপদাহ স্বাভাবিকভাবে বসবাস করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সেখানে শ্রমজীবী মানুষ হাসফাঁস করছে। যাইকোক শ্রম বা মে দিবসের পটভূমি হলো ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ন্যায্য মজুরি আর দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবির আন্দোলন। রক্তের বিনিময়ে শ্রমিকরা কিছু অধিকার আদায় করতে সক্ষম হন। যার ফলে ১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

শ্রমিকের সংজ্ঞা নির্ধারণ, ক্ষতিপূরণ, শ্রমবিষয়ক মামলা-মোকদ্দমার বিচারপ্রক্রিয়ায় ADR কে (Alternative Dispute Resolution) অন্তর্ভুক্ত করা ও যৌন হয়রানি নিরসনের জন্য মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী শ্রম আইনে সংযুক্ত করা। শ্রমিকের সংজ্ঞা অনুসারে তদারকি কর্মকর্তাকে শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধনের আগে তদারকি কর্মকর্তাকে শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হতো। তদারকি কর্মকর্তার কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী তিনিও একজন শ্রমিক।

ক্ষতিপূরণের (Compensation) ক্ষেত্রে মৃত শ্রমিকের বেলায় ২ লাখ ও স্থায়ীভাবে অক্ষম শ্রমিকের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ১ লাখ ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিধান করা হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ পূর্ব নির্ধারণ করে রাখা উচিত নয়। বরং ক্ষয় ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ ন্যূনতম মানদণ্ড থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন ১৮৫৫ সালের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন নজির (Precedent) অনুসরণ করা যেতে পারে। কর্মক্ষত্রে দুর্ঘটনায় একজন শ্রমিকের মৃত্যুবরণে ২০ লাখ এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা উচিত। মৃত শ্রমিকের ক্ষেত্রে অবসর ও অবসরকালীন (Retired) সুযোগ-সুবিধাগুলো বিবেচনা করা । অক্ষম শ্রমিকের ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ বিবেচনায় থাকা দরকার।আবার অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ ও কাজ থেকে বিরত থাকা সময়ের সম্ভাব্য মজুরি বিবেচনা করা দরকার। মৃত বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পরিবার থেকে একজন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ দেওয়া। ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণভাবে না দেওয়া পর্যন্ত সর্বশেষ মজুরি প্রদান করতে হবে।২০১৩ সালে রানা প্লাজা ঘটনার মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে সুপারিশ প্রদানের জন্য গঠিত কমিটি আইএলও কনভেনশন ও পেইন অ্যান্ড সাফারিংয়ের বিষয়ে বিবেচনা করেছিলেন। যদিও রানা প্লাজা মামলা আজ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু ইদানীং বেশ কিছু মামলায় দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির আয়, দুর্ভোগ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় রেখে মামলার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সাংবাদিক মোজাম্মেল হকের(Mozammel Haque Case) মামলায় মহামান্য আপিল বিভাগ ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দিয়েছেন। শ্রম আদালতের সংখ্যার তুলনায় মামলার পরিমাণ অনেক বেশি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৭টি শ্রম আদালত ও ১টি আপিল ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রম আদালতের (Labour Court) বিচার প্রক্রিয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি এবং দেওয়ানি কার্যবিধি প্রযোজ্য। বর্তমানে শ্রম আদালতে প্রায় ১৯ হাজারের মতো মামলা চলমান। (সূত্রঃদৈনিক প্রথম আলো) শ্রম আইনের ২১৪ ধারায় আরও একটি ধারা হিসেবে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাহলে অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি (Sexual Harrassment) বন্ধের জন্য মহামান্য হাইকোর্টের যে রায়, তা শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবী। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশে চলে এসছে। এ জন্য আমাদের একটা প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। কারণ, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপণার ওপর নজর রাখা হবে। দেশের আইনকানুন কী পর্যায়ে রয়েছে, কেমন মানছি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হবে। সমস্যা হলো, শ্রম আইন বলতে আমরা কেবল পোশাকশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধিনিষেধগুলো চিন্তা করি। এ মানসিকতা থেকে খুব শিঘ্রই বের হয়ে আসতে হবে। পোশাকশিল্পের বাইরেও শ্রমের অন্যান্য যে বড় খাত রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় রেখে আগাতে হবে।

শিল্পশ্রমিকদের ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স হলে তবে হালকা কাজ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তাদের দিয়ে একজন পরিণত শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে যা অমানবিক। রানা প্লাজা (Rana Plaza Building Collapse) দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে একটা মানদণ্ড প্রণয়নের দাবী রয়েছে। শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনা বীমার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শ্রমিকদের মামলা নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে শ্রম আদালতকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শ্রম আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। সময় নির্দিষ্ট করে দিলে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। শ্রমঘন এলাকাগুলোতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো গেলে শ্রমিকের আদালতে আসতে সুবিধা হতো। অনেক সময় আদালতে আসার বিভিন্ন ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অনেক শ্রমিক আইনের আশ্রয় গ্রহণে বিরত থাকেন। কোনো কোনো সময় কাজের চাপ বৃদ্ধি করে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য যৌন হয়রানি ও অসদাচরণ—এই দুটি বিষয়কে আলাদা করে বিবেচনা করতে হবে।প্রস্তাবিত সংশোধিত শ্রম আইন বাস্তবায়নের পর শ্রমের বিভিন্ন খাতের ওপর সমীক্ষা করে দেখা উচিত। এ আইন কার্যকরের ফলে কোন খাতে কী ধরনের পরিবর্তন হলো, কারও সমস্যা হচ্ছে কি না বা ইত্যাদি বিষয় সমীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।

কর্মক্ষেত্রকে পরিবেশবান্ধব ও নারীবান্ধব শুধু কথা নয় বাস্তবে এর প্রয়োগ প্রত্যাশিত। যৌন নির্যাতন বা হয়রানি প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা পরিষ্কার ও ব্যবহারোপযোগী যা কাজে লাগাতে হবে।। লিঙ্গবৈষম্যভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে এনজিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিধায় তাদেরকেও সুযোগ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্টের রায় একটি বড় সহায়। এটা উন্নয়নকে গতিশীল করবে এবং মালিক ও শ্রমিক সব পক্ষকে জিতিয়ে দিবে। শ্রমজীবী মায়েরা সন্তানকে ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখতে পারলে কাজে বেশি মনোযোগ দিবেন। তৈরি পোশাক (RMG) বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, ওই সেক্টরেও নানা সংকট রয়েছে। শ্রম আইন ও শ্রম সংশ্লিস্ট অন্য আইনগুলো ঠিকঠাক মানা হচ্ছে না। আইন মানা হলে শ্রমিক-মালিক বিদ্যমান সংকট তৈরি হয় না।বাংলাদেশের শ্রম আইন যদি আইএলও কনভেনশন (ILO Convention) মেনে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন (Trade Union) নিশ্চিত করত, তাহলে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের স্বার্থ রক্ষিত হতো। শ্রম আইন (Labor Law) আইএলওর চেতনাবিরোধী হলেও কোনো বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এটা ভালো দিক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইএলও কনভেনশনের পক্ষে ছিলেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আইএলও কনভেনশন (ILO Convention) অনুযায়ী শ্রম আইন পরিবর্তন করার কথা উল্লেখ ছিল। ১৪ বছর আগে প্রচলিত ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকাকে বর্তমানে ২ লাখ টাকা করা হলে তা মুদ্রাস্ফীতির বিবেচনায় নিতান্তই কম ক্ষতিপূরণই রয়ে যায়। শ্রমঘণ্টা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আট ঘণ্টায় রাখতে হবে। শ্রমঘন্টা কোনভাবেই বাড়ানো যাবে না। কিশোরদের ১৪-১৮ বছর দিয়ে হালকা কাজ করাতে হবে। লঙ্ঘনে কী শাস্তি তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ছয় মাস এবং বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চার মাস। এ ধরনের বৈষম্য রাখা আদৌ ঠিক নয়।

২০০৬ সালের শ্রম আইনটি যুগোপযোগী করতে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে সংশোধনী আনা হয়। যে আইন ই হোক তা সর্বজনীন করা প্রয়োজন। আইনটি ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে এর সংশোধনীর মাধ্যমে আপডেট করা হয়েছে। শ্রম আইন (BLA) ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধি (BLR) ২০১৫ প্রবর্তনের পর থেকে শ্রম আইনের সম্মতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে তার খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশ্বের শীর্ষ শ্রম নিবিড় দেশ। এর অভ্যন্তরীণ তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম রপ্তানি খাতের সাথে, শ্রম আইন সম্মতির আরও চাহিদা ছিল, যা শ্রম আইন ২০০৬ এবং শ্রম বিধিমালা ২০১৫ প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রশমিত হয়েছিল। তবুও, আমাদের শ্রম আইনের অধীনে ছিল। উত্পাদনশীলতা, শ্রমিক শ্রেণীর মঙ্গল এবং সেইসাথে মানবাধিকার চাপ গ্রুপগুলির সম্মতিতে যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), আন্তর্জাতিক শ্রম আইন (আইএলও) প্রদত্ত আশ্বাসের সাথে সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন, তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারদের অধীনে কর্মচারীদের অধিকার, স্থায়ী কাজের শ্রেণিবিন্যাস, ডিজিটাল শ্রম নিবন্ধকের অন্তর্ভুক্তি, অসদাচরণ তদন্ত পদ্ধতির সময়সীমা এবং অভিযুক্ত কর্মচারীর প্রতিনিধিত্ব।

শ্রমিকের সংজ্ঞা এবং এর সম্প্রসারণ, তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারদের কর্মচারী, কাজের প্রকৃতি এবং এর বিস্তার, মজুরির বাধ্যতামূলক বার্ষিক বৃদ্ধি, কর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শাস্তিমূলক কর্ম পদ্ধতি, মহিলা কর্মচারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, মহিলা কর্মচারীদের প্রতি অশোভন আচরণ, শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা, ছুটির দিনে কাজের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং শ্রমিকদের মজুরি, ক্ষতিপূরণ, কর্মস্থলে কাজের পরিবেশ বজায় রাখা, কর্মচারীদের সুবিধার জন্য অন্যান্য সংশোধনীগুলির মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান করা সহজ করা এবং প্রক্রিয়াটিকে কম ব্যয়বহুল করা, এইভাবে শ্রমিকদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষায় সহায়তা করা।

আইন প্রণয়ন হয় মানুষের কল্যাণের জন্য।যে আইন মানুষকে আইনি সুরক্ষা দেয়না সেটি সার্বজনীন আইন হতে পারে না। তখন প্রশ্ন থাকে আইনটি কার জন্য করা হলো। আবার আইনটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা দেখতে হয়। সংবিধানের পরিপন্থী কোনো আইন করা যাবে না এবং তা বলবৎযোগ্য নয়। মালিক-শ্রমিক সবাই যেস আইনমাফিক চলে। যদি আইন অনুযায়ী না চলে তবে সেটি অসদাচরণ (Misconduct) এবং বাংলাদেশে অসদাচরণ মালিকপক্ষ বেশি করে থাকে। আর শ্রমিকপক্ষ হয় নিস্পেষিত। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী সঠিকনিয়মে ও সময়ে প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু শ্রমিকের পক্ষে বা বিপক্ষে আইন করার প্রয়োজন নেই। আইন করতে হবে এমনভাবে যাতে, মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ হয়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং শান্তি বজায় থাকে। মালিকও শ্রমিক উভয়ই সন্তুষ্ট হয় এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং বিভিন্ন খাতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক যাতে অর্থনীতিতে ফিরে আসে তা নিশ্চিত করার জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। তাদের ভাল আত্মার মধ্যে রাখা এবং তাদের অনুপ্রাণিত রাখা একটি স্বাগত ইঙ্গিত যা শ্রম আইনের এই সংশোধনগুলি প্রদান করেছে। যদিও এই সংশোধনীগুলি সমস্ত বাঁকগুলিকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেনি, এটি এই কর্মচারীদের প্রাপ্য কাজের পরিবেশের দিকে একটি উৎসাহজনক পদক্ষেপ।
লেখকঃ মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আইন বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। ইমেইলঃ bdjdj1984du@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj