আইন পেশায় নিয়োজিত রেখে সত্য আর ন্যায়ের পথে বাংলাদেশের আইনের জগৎ সমৃদ্ধ করতে চান সুপ্রীম কোটের উদীয়মান বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব ফাইজুল্লাহ ফয়েজ । যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এল এল এম পাশ করে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। আইনের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে তিনি যেমন লেখালেখি করেন তেমনি সাধারণের দোড়গোড়ায় আইনের সেবা সহজ লভ্য করার জন্য কাজ করছেন অবিরত। নিজের সহকর্মীর বিষয়ে তিনি যেমন ইতিবাচক তেমনি আইনের সাহায্য প্রত্যাশী সকলকে সাহায্য করেন শুধু পেশাগত দ্বায়িত্ব হিসেবে নয় বরং নিজের বিবেকের তাড়না থেকে।
বাংলাদেশের আইন আদালত নিয়ে তার সাথে একান্ত কিছু আলাপচারিতার সুযোগ হয় আইনী পাঠশালা টিমের। সম্প্রতি এপিএস নিউজকে আইনজীবী হিসাবে তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আইনী পাঠশালা টিম ।
প্রশ্ন- আপনি কেন আইনজীবী হলেন?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – আমি যখন বিভিন্ন বিষয় গুলো একটু অন্যভাবে ভাবতে শিখলাম, ক্রিটিক্যাল জিনিস সহজে বুঝতাম আবার সহজ জিনিস প্যাচ লাগিয়ে দিতে পারতাম তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাহফুজুল হক সুপন স্যার সহ কয়েকজনের কাছে আইনজীবী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেলাম, আর ক্যারিয়ার শুরু করে ই মজা পেতে লাগলাম তারপর আইনজীবী হয়ে গেলাম।
প্রশ্ন- আইনজীবী হিসেবে আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ কোন টা লাগে যখন মনে হয় আইনজীবী হওয়া ভুল হয়েছে?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – যখন দেখি বিচার সংশ্লিষ্টরা দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, যখন দেখি আইনজীবী না হয়েও দালালরা বড় বড় মামলা ডিল করছে বা অযোগ্য আইনজীবীরা সুন্দর মামলা গুলো নষ্ট করে দেয় অথচ ক্লায়েন্ট আমাদের কে মূল্যায়ন করে না।
প্রশ্নঃ আইনজীবী হতে নাকি অনেক স্ট্রাগল করতে হয়?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – সব পেশাই স্ট্রাগল আছে কম বা বেশি আমি স্ট্রাগল কে চ্যালেঞ্জ মনে করি, আপনি ও চ্যালেঞ্জ মনে করলে সব সহজ হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ মামলা দেখে মামলা ছেড়ে দেয়া কি ঠিক?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ– ক্লায়েন্ট যদি আপনাকেই আইনজীবী হিসেবে পছন্দ করে, তার মামলার সম্ভাব্য ফলাফল জানার ও পরেও আপনার উপর নির্ভর করে তবে মামলা টি ফিরিয়ে দিয়ে আপনি তার মৌলিক অধিকার লংঘন করলেন তবে আপনার ব্যস্ততা যদি এত বেশি হয় যে এই মামলায় যথাযথ সময় দিতে পারবেন না তবে ফিরিয়ে দেয়া ই উচিত ।
প্রশ্নঃ আসলেই কি প্রথমে দিকে কোন টাকা পয়সা পাওয়া যায় না?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – আপনার সিনিয়র কে কাজ দিয়ে খুশি করতে পারলে অবশ্যই টাকা পয়সা পাবেন তবে শুরুতে ই অনেক বেশি টাকা পয়সা আশা করা অনুচিত, একজন আপনাকে শেখাচ্ছেন আবার টাকা ও দিচ্ছেন এটাই বেশি।
প্রশ্ন- উকিলরা কি অনেক মিথ্যা কথা বলে?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – মিথ্যা কথার সাথে পেশার কোন সম্পর্ক নেই, যে মিথ্যা বলে সে বলবেই, যে বলে না সে আইনজীবী হলেও বলবে না। আপনার ঘটনা আপনি আইনজীবী কে যেভাবে বলবেন উনি সেটাকে শুধু আইনি ভাষায় উপস্থাপন করবেন এখানে মিথ্যাচার করার কোন দরকার নেই, আর হাইকোর্টে তো সম্পূর্ণ আইনের যুদ্ধ এখানে মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসেনা, তবে অনেক উকিল সাক্ষীদের মিথ্যা কথা শিখিয়ে দেয়, মক্কেলের সাথে প্রতারণা করে এগুলো নিন্দনীয়, এ থেকে বাঁচার জন্য সকলের সচেতন হতে হবে, হোক সাধারণ মানুষ বা আইনজীবী।
প্রশ্নঃ আইন পেশা কতটা স্বাধীন পেশা?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – জুনিয়র লাইফে মোটেও স্বাধীন পেশা নয় তবে একটা পর্যায়ে এটা অনেক স্বাধীন পেশা, তবে দায়িত্ব বোধের খাতিরে মাঝে মাঝে নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হয়, তবে তার জন্য ফলাফল পাওয়া যায় তাই এটা খারাপ লাগে না।
প্রশ্নঃ আপনি জজ হলেন না কেন?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – যেহেতু আমি এখানে মজা পেয়েছি, তাই অন্য দিকে চেষ্টা করিনি আমার ধারণা এই পেশাই আমাকে বেশি মানায় এবং আমার উদ্দেশ্য পূরণ করতে সহায়তা করে
প্রশ্নঃ ব্যারিস্টার ও এ্যাডভোকেট এর মধ্যে পার্থক্য কি?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ — ব্যারিস্টার হলো ইংল্যান্ডের উকিল, এ্যাডভোকেটরা হলো বাংলাদেশের উকিল, তবে ব্যারিস্টার হতে হলে প্রাক্টিকাল ট্রেনিং করতে হয় কমপক্ষে ৯ মাসের যা এ্যাডভোকেট দের করতে হয় না তাই ব্যারিস্টার দের কে বেটার কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হয়।
প্রশ্নঃ বিয়ে করতে গিয়ে কোন সমস্যা হয়নি?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফায়েজ – বিয়ে আগে করে তারপর উকিল হয়েছি, বৌকে ভালোভাবে মোটিভেশন দিয়েছি, পর্যাপ্ত সময় ও দিয়েছি যখন টাকা পেয়েছি বৌয়ের পেছনে খরচ করেছি তাই কোন সমস্যা হয়নি।
প্রশ্নঃ রাজনীতি করলে কি পেশার ক্ষতি হয়?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – ছাত্র রাজনীতি একজন ছাত্রের জন্য যেটুকু ক্ষতিকর, আইনজীবীদের রাজনীতি ও পেশার জন্য ততটাই ক্ষতিকর, তাই ব্যালেন্স করে রাজনীতি করতে হবে।
প্রশ্নঃ বিচার ক্ষেত্রে বিচারক নাকি আইনজীবীর ভূমিকা বেশী ?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – -এ দুইটির কোনটাই নয় । বিচারক সাক্ষ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করে আর আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের সাথে পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করে। সকল ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আইন করে দিয়েছে আমরা তার রক্ষা করি মাত্র। মামলা জট কমাতে বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারক বা আইনজীবি নয় বরং মক্কেলের ভূমিকা সর্বাধিক । তারা যদি তাদের দাবির জায়গায় সৎ ও সচেতন থাকে নৈতিক মূল্যবোধ হয় উন্নত তাহলে হয়রানি মূলক মামলা কমে যাবে । মামলার মাঝে দীর্ঘসূতিতা থাকবে না। যে বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় মিমাংসা করে সহজে মামলার সমাধান করা যায় সে বিষয়ে তারা ব্যক্তিগত অসচেতনতায় বছরের পর বছর মামলা চালায় ও অনেক ক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণ ও সত্যতা লুকিয়ে রেখেও মামলার জটিলতা তৈরী করে ।
প্রশ্নঃ তাহলে মামলা জট কমাতে মামলাকারীদের আগে এগিয়ে আসতে হবে?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – -তা অবশ্যই । তবে আমি কিন্তু আইনজীবী ও বিচারকদের ভূমিকাকে ছোট করে দেখি না। মক্কেলদের ভিতর যদি আইনী জ্ঞান এবং সচেতনা বিরাজ করে তাহলে তারাই একটি মামলাকে অতি দ্রুত সময়ে সমাধান করতে পারবে। আমরা তো তাদের সেবা দাতা হিসেবে যতটুকু পারা যায় সেবা নিশ্চিত করি। তাদের সত্য স্বিকারোক্তি এবং সঠিক সময়ে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন মামলাকে অনেক সহজ করবে। বিচার বিভাগ সদা জনগণের সেবার জন্য প্রস্তুত এখন জনগণের একটু এগিয়ে আশা উচিত।
প্রশ্নঃ আইনের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের কাছে আপনার কোন বার্তা আছে কি?
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ – বাংলাদেশে নিজের চরম এবং পরম মেধার পরিচয় দিয়ে সাফল্য অর্জন করতে হবে। আইন ক্ষেত্রে এই পরিশ্রম আরো বেশী । তবে আইন শিক্ষা লাভ করলে সমাজে এবং দেশের প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা তৈরী হবে। এর পাশাপাশি দ্বায়িত্বও কিন্তু কম হবে না। নিজের যোগত্য প্রমাণ করতে পরিশ্রম করো এবং সৎ সাহজ নিয়ে সবার পাশে থেকে নিজের প্রতিষ্ঠা লাভ করো।
প্রশ্নঃ আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন। এবং এপিএস নিউজকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এ্যাডঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ– আপনাকেও ধন্যবাদ
এপিএস নিউজ/এনএস