সব
facebook apsnews24.com
গণহত্যার বিচার হোক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে - APSNews24.Com

গণহত্যার বিচার হোক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে

গণহত্যার বিচার হোক আন্তর্জাতিক  অপরাধ আদালতে

সম্পাদকীয়

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। মানবসভ্যতার ইতিহাসে বাঙালী জাতির একটি কলঙ্কিত দিন। দিনটি ‘ জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ওই দিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এ রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী `অপারেশন সার্চলাইট`র নামে স্বাধীনতাকামী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হিংস্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর এদিন সমগ্র বাঙালি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল এক নৃশংস বর্বর হত্যাযজ্ঞ। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, ছয় দফা, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে প্রাপ্ত আইনসঙ্গত অধিকারকেও রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল সারাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যা। মুজিববর্ষে- দাবী হোক একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, আন্তর্জাতিকভাবে তার বিচার করতে হবে।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচালিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা। সেইরাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংসতা চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, আইনজীবী ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এছাড়াও ওই রাতে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসকাবেও অগ্নিসংযোগ, মর্টার সেল ছুঁড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাক হানাদাররা। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ ক’জন গণমাধ্যম কর্মীকেও। আজকের দিনে বিভীষিকাময় ২৫ মার্চ রাতের সকল শহীদদের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। পাশাপাশি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও পালনের যে দাবি উঠছে তার প্রতিও আমরা অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই।

এগিয়ে চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ। যারা গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল তাদেরও বিচার হচ্ছে। গণহত্যাকারীদেরও ক্ষমা নাই। তাদেরও বিচার হতে হবে। এর মধ্য দিয়ে দায়মুক্তি ঘটবে আমাদের। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুজিববর্ষে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, আন্তর্জাতিকভাবে তার বিচার করতে হবে। আজ শনিবার ঢাকায় বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এই দাবি জানান।

‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। দুই দিনের সেমিনারে বিশ্বের ছয়টি দেশের ১৩ জন মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাবিষয়ক গবেষক এবং সারা দেশ থেকে আসা ২৫৬ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন একাত্তরের গণহত্যার বিচার দাবি করে বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও অং সান সু চির সরকার মিলে রোহিঙ্গাদের ওপরে গণহত্যা চালাচ্ছে। এসব গণহত্যার বিচার যদি না হয়, তাহলে আগামী ১০ বছরের মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার সব কটি দেশে আগুন জ্বলবে। কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো দেশে প্রাসঙ্গিক। কারণ, পাকিস্তান এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

সেমিনারে প্রথম দিনের অধিবেশনে প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের অনেক প্রমাণ দেশে-বিদেশে রয়েছে। ফলে, তাদের বিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার সুযোগ রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিকভাবে চাইতে হলে আমাদের এ বিষয়ের ওপরে আরও তথ্যপ্রমাণ লাগবে। এ জন্য সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে। ওই গণহত্যার সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটি আমাদের দায়িত্ব।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ার্ত কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দিনটি যাতে আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এ জন্য সরকার কাজ করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগিয়ে চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ। যারা গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল তাদেরও বিচার হচ্ছে। একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের অনেক প্রমাণ দেশে-বিদেশে রয়েছে। ফলে, তাদের বিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার সুযোগ রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুজিববর্ষে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

এপিএস/সম্পাদক

আপনার মতামত লিখুন :

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানে আইন ও বাস্তবতা

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

আইন ও প্রচারণা স্বত্তেও কেন সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমছে না?

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মরু অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

স্বাধীনতা দিবসের ভাবনাগুলো

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটা স্মরণীয় দিন

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

সর্বনাশা পরকীয়া, কারণ ও প্রতিকার

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj