মেহেদী আরিফ
প্রিয় অভিভাবক,
আশা করি সবাই ভালো আছেন। প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসলে মানুষের দুঃখের সীমা থাকে না। তখন দুঃখ ও হতাশার গান রচিত হয় নিত্য। মানুষ দিশাহারা হয়ে ছুটতে থাকে দিগ্বিদিক। তেমনি এক দুঃসময়ে আমরা অবস্থান করছি।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণনাশ এখন সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের মাথাব্যথা। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকার বাসনা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। এই সংকটময় মুহূর্তে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবার মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সামনে পরীক্ষার হাতছানি, তাই পড়া জমে যাচ্ছে নিত্য। দুশ্চিন্তারা পেখম মেলছে। গৃহে বন্দী থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীদের শিকড় যেন লেগে গেছে ঘরের সাথে। বাইরের খোলা বাতাস, লাজুক রোদ্দুর, বন্ধু-বান্ধবদের সংস্পর্শ, স্কুল/কলেজ করিডোরের অবাধ বিচরণ কিংবা শিক্ষকদের মোহনীয় ক্লাস—-সবকিছু থেকে তারা দারুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানো জীবন বন্দী হয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খাঁচায়। সময় বড়ই নিষ্ঠুর। জীবনের নানা রং ফুটিয়ে তুলতে সময় একটুও দ্বিধা করে না। সকল মানুষের গৃহে অন্তরীণ থাকা এখন একটা সাধারণ রীতিতে পরিণত হয়েছে। করোনা ঠেকাতে আমরা সবাই মিলে যুদ্ধ করে চলেছি।
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ ও সংক্রমণের বিস্তার মানবমনে এক ভয়াবহ অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার বিষয়টি। কবে নাগাদ আমরা করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছি তা সময় বলে দিবে। প্রিয় অভিভাবক, সন্তানদের নিয়ে আপনারা এখন কী ভাবছেন? শুধু হতাশা দিয়ে তো নিজের জীবনকে আচ্ছাদিত করে তিলে তিলে নষ্ট করা যাবে না বরং জীবনযুদ্ধের যোদ্ধা বনে যেতে হবে সবাইকে। হে অভিভাবক, আজ আপনাদের জন্য কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলো:
১. আপনার সন্তানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদেরকে নিরাপদ জীবনের দিশা দেয়।
২. সন্তানকে প্রচুর সময় দিন। তাদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিন।
৩. সিলেবাসের পড়াকে কয়েকটি অংশে ভাগ করুন ও একটা রুটিন করে তাদেরকে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করুন।
৪. সন্তানের পড়াশুনায় যথাসম্ভব সহযোগিতা করুন। তাদের বন্ধু হয়ে যান।
৫. সন্তানের মাঝের বিষণ্নতা জয় করতে তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। আপনার হাসি ওদের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করবে।
৬. চারিদিকে করোনার হাহাকার। মনে অদ্ভুত রকমের ভয় সদা সুড়সুড়ি দিচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মনে যা দানা বাঁধছে গভীরভাবে। তাই আপনার সন্তানকে চাঙ্গা রাখুন সবসময়।
৭. গৃহবন্দী জীবন। তাই টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটে যেন তারা সদা সময় অতিবাহিত না করে এ দিকটা খেয়াল রাখুন।
৮. পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করুন। ক্লাসের বইপড়ার সাথে সাথে বাইরের বই পড়াতে উদ্বুদ্ধ করুন।
৯. সন্তানের প্রিয় পছন্দের খাবার রান্না করুন। এতে তারা প্রফুল্লচিত্তে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সচেষ্ট হবে।
১০. আপাতত বাইরের মানুষের সঙ্গ পরিহার করুন।
১১. ক্লাসের বইয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় বই সহ দারুণ সব বই পড়ার ব্যবস্থা করুন।
১২. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন।
১৩. জনমনে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। এ সবে ভীত হবেন না কেউ। সবাই মিলে যুদ্ধ করলে একসময় আমরা জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
সংকটময় মুহূর্তে আশা আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে। যেখানে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে সন্তানের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। কিছুদিন বাড়িতে না হয় শিক্ষা দিন ওদেরকে। গৃহে অন্তরীণ থাকা এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া কোনো বিকল্প রাস্তা যে খোলা নেই আমাদের সামনে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
————————————-
মেহেদী আরিফ
শিক্ষক ও লেখক
রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা। সদস্য-আইনী পাঠশালা