নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করছেন নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইনের ব্যবহার অনুমোদন করেছে।
ক্লোরোকুইন বহু পুরনো এবং সুপরিচিত ম্যালেরিয়ার ওষুধ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই দাবি কতটা সঠিক এবং এর কার্যকারিতাই বা কতটুকু?
কয়েক দশক ধরে বাজারে ম্যালেরিয়ার চালু ওষুধ ক্লোরোকুইন। আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশে আজকাল আর এই ওষুধ খাবার পরামর্শ দেয়া হয় না কারণ ম্যালেরিয়ার জীবাণু এই ওষুধের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।
কোন কোন দেশে এই ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইনবিধি জারি করা হয়েছে, কিন্তু যেসব দেশে ওষুধের বাজার মূলত বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে সেখানে এই ওষুধ এখনও জনপ্রিয় এবং বাজারে বিক্রিও হয় অবাধে।
এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে। সেখানে ওষুধের দোকানগুলোতে ক্লোরাকুইনের বিপুল চাহিদা রয়েছে বলে খবর আসছে। এবং মি. ট্রাম্পের এই বিবৃতির পর চাহিদা এত বেড়েছে যে এই ওষুধের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার প্রতিদিনের সংবাদ ব্রিফিং-এ দাবি করেছিলেন যে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) – খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক প্রশাসন করোনাভাইরাসের চিকিৎিসার জন্য ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এফডিএ আমেরিকায় কোন ওষুধ ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।
ইতালিতে করোনা ভাইরাস নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রোমের কাছে এক হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা চলছে
“আমরা অবিলম্বে ব্যবহারের জন্য বাজারে এই ওষুধ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছি। এফডিএ এ ব্যাপারে দারুণ কাজ করেছে। তারা অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এবং এর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।”
ম্যালেরিয়া এবং আর্থ্রাইটিস-এর (বাত) চিকিৎসার জন্য স্পষ্টতই ক্লোরোকুইনের ব্যবহার অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু এফডিএ পরিস্কার করে বলেছে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এ আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়নি।
“কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা, নিরাময় বা তা প্রতিহত করার জন্য এফডিএ অনুমোদিত কোন ওষুধ নেই,” এফডিএ বলেছে।
তবে এফডিএ বলেছে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন কাজ করবে কিনা তা নিয়ে গবেষণার কাজ চলছে। তারা আরও বলেছে এই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য বড় পরিসরে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন মি. ট্রাম্প নিজেই।
বিশ্ব জুড়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা কী?
করোনাভাইরাসের রোগীদের নিরাময়ের জন্য যে উপযুক্ত ওষুধ খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে তার অংশ হিসাবে ক্লোরোকুইনের কথা যে ভাবা হচ্ছে তাতে বিস্মিত হবার কিছু নেই।
কারণ এই ওষুধ পরিচিত, সস্তা এবং সহজে তৈরি করা সম্ভব। ম্যালেরিয়ার রোগীদের চিকিৎসায় জ্বর এবং প্রদাহ কমানোর জন্য এই ওষুধ কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
“গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ক্লোরোকুইন সফল হয়েছে। ডাক্তাররা কিছু উদাহরণ হাজির করে বলেছেন এই ওষুধ কাজ করতে পারে বলে মনে হচ্ছে,” বলছেন বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদাতা জেমস গ্যালাহার।
কিন্তু আসলেই কোভিড-১৯ আক্রান্তের ওপর এই ওষুধ ঠিক কীভাবে কাজ করবে সেটা চিকিৎসকদের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে পুরোপুরি পরীক্ষা এখনও করা হয়নি, যেটা খুবই জরুরি। তবে, চীন, আমেরিকা, ব্রিটেন এবং স্পেনে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ নিরাময়ে এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষামূলক গবেষণার কাজ চলছে । নাইজেরিয়ার লেগোসে এক গির্জায় করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রার্থনা। সেখানে গির্জা, মসজিদ সর্বত্র আলোচনা এখন একটাই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এর কার্যকারিতার স্বপক্ষে সিদ্ধান্তমূলক কোন তথ্যপ্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু গবেষণা থেমে নেই।
“এই ভাইরাসের সংক্রমেণর চিকিৎসায় কোন্ ওষুধ বা কীধরনের চিকিৎসা কাজ করবে তা জানার জন্য চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল বা পরীক্ষা আমাদের চালাতে হবে এবং সেগুলো কাজ করছে কী করছে না সে বিষয়ে আমাদের পুরো তথ্যপ্রমাণ পেতে হবে,” বলেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্কের পরিচালক প্রফেসর ট্রুডি ল্যাং।
তবে এই ক্লোরোকুইন নিয়ে ঔৎসুক্য এবং আগ্রহ ইতোমধ্যেই বাড়ছে।
গুগল ট্রেন্ডের তথ্য অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে ক্লোরোকুইন ওষুধ সম্পর্কে খোঁজখবর ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এলন মাস্ক নামে এক ব্যবসায়ী এই ওষুধ নিয়ে যেসব গবেষণা চলছে সে বিষয়ে যে টুইট করেছিলেন তা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন ফেলে দিয়ছিল।
নাইজেরিয়াতে শুরু হয়ে গেছে এই ওষুধ কেনার হিড়িক
করোনাভাইরাস মহামারির খবর এখন নাইজেরিয়ায় প্রত্যেক মানুষের মুখে। গির্জায়, মসজিদে, স্কুলে সর্বত্র আলোচনার বিষয় এখন একটাই – জানাচ্ছেন লেগোসে বিবিসি পিজিন সার্ভিসের ড্যানিয়েল সেমেনিওরিমা।
২০০৫ সালে ক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যাবার পর এখনও দেশটির ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ক্লোরোকুইনের ব্যবহার চালু রয়েছে।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে চীনে ফেব্রুয়ারি মাসে চালানো এক সমীক্ষার খবরের পর বিষয়টি নিয়ে লেগোসে তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়ে যায় এবং লোকজনের মধ্যে ক্লোরোকুইন কিনে ঘরে মজুত করার হিড়িক পড়ে যায়।
এপিএস নিউজ/ফেরদৌসী
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা অনলাইন