সরকারের দেয়া শর্তের ভিত্তিতে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দণ্ডাদেশ স্থগিত করে বিএনপি নেত্রীর মুক্তিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু খালেদার মুক্তির ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে সেটা নিয়ে রয়েছে আইনি যুক্তি।
যেহেতু খালেদা জিয়ার সাজা বিষয়ক দুটি মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে চলমান তাই তার মুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতির প্রয়োজন কি না? সেটিও বিএনপির কাছে বড় কথা নয়। যেভাবে হোক খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছে সেটিই মুখ্য।
তবে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপি স্বস্তি ও আতঙ্ক উভয়ই অনুমান করছেন বলে জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি হাসপাতাল বা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে নেতা–কর্মীদের ভিড় না করার অনুরোধ জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাতে গুলশানের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। আজ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির অনুভূতি কী, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কিছুটা আবেগ আপ্লুত তো বটেই, কিছুটা স্বস্তিও বোধ করছি। আবার কিছু আমরা আতঙ্কিত বোধ করছি এই ভয়ংকর সময়ে তাঁর এই মুক্তি তাঁর কোনো ক্ষতি না ঘটে।’
খালেদাকে মুক্তির সঙ্গে কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এ ছয় মাসে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, অন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারবেন না।
এসব শর্ত প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা (শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি) আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বোধগম্য নয় এ জন্য যে পরিবার আবেদনটা করেছিল তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য। যা–ই হোক, তারপরও বিএনপি নেতা-কর্মীরা এবং দেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করছেন। দীর্ঘকাল পরে আজ খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি ঠিক সময়মতোই কারাগার থেকে বেরোতে পারবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তি পেলে সবাই আবেগে আপ্লুত হবেন খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য। তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা প্রাদুর্ভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার জীবনের জন্য, অন্য সবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে শান্ত থাকতে এবং দূরে থাকতে হবে।
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে এবং ম্যাডামের বাসার সামনে দয়া করে কেউ ভিড় করবেন না। এতে ম্যাডামের ক্ষতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। আপনারা জানেন যে উনি অত্যন্ত অসুস্থ, ডায়াবেটিসের রোগী, আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, ৭৫ বছর বয়স, ওনার এ্যাজমারও সমস্যা আছে। এসব করোনাভাইরাসের জন্য মারাত্মক সমস্যা অর্থাৎ সবচেয়ে ভালনারেবল হয়ে যায়। আবারও অনুরোধ থাকবে নেতা-কর্মীর প্রতি আপনারা স্বস্তি পেয়েছেন। আমাদেরও দায়িত্বশীল হয়ে পালন করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বাসায় তাঁর সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে জানান, খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন না বাসায় চিকিৎসা নেবেন, সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার ১ উপধারা মতে ৬ মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি বিষয়ে মতামত দিয়েছি। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি জানান, খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে তাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বাসায় অসুস্থ হলে তিনি কীভাবে চিকিৎসা নেবেন?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার যদি দরকার হয়, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে মানসম্মত হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আছেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। আর ভবিষ্যতে এ বিষয়টি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে বিদেশে পাঠানো মানে ‘সুইসাইডের’ মুখে ফেলা।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কুদ্দুস।
এপিএস নিউজ/সজল