‘করোনা’ কিছুদিন আগেও এই নামটার সাথে আমরা কেউই পরিচিত ছিলাম না। বেশ ভালই দিন কাটছিলো সবার। হাঠাৎ এক মুহুর্তে কেমন যেন সবার জীবন ওলট-পালট করে দিলো এই অতীশয় ক্ষুদ্রাকার জীবানুটি। সবার মুখে এখন একটাই নাম ‘করোনা’। রাস্তার পাশে খুপরি ঘরে থাকা দরিদ্র থেকে বিশ্ব ধনী সবাই আজ অসহায় এই অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে। খালি চোখে দেখতে না পাওয়া এই ক্ষুদ্র বস্তুটি প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে হাজারো মানুষের প্রান। স্বজন হারানো ব্যাথা সামলানোর আগেই আবারো মানুষ শুরু করছে লড়াই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই , বেঁচে থাকার জন্য লড়াই। বিশ্বের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে। কেউ লড়াই করছে সম্মুখ ভাগে আবার কেউ করছে পশ্চাতে। তবে লড়াই করছে সবাই। সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতক থেকে ষাটোর্ধব বৃদ্ধ সকলেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণপণে। সকলের লক্ষ্য একটাই , জয়ী হওয়া। তবে এই জয় কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি কিংবা কোনো গোল্ড মেডেলের জন্য নয়। এ লড়াই নিজেকে জীবীতদের তালিকায় সামিল রাখার লড়াই।
করোনার সাথে লড়াইয়ে যারা সম্মুখভাগে যুদ্ধ করছে তারাই আসল যোদ্ধা। কারণ তারা নিজেকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে , লড়াই করছে অন্যকে বাঁচানোর। তারা নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে লড়াই করছে। এরা হচ্ছেন চিকিৎসক , পুলিশ, সাংবাদিক, নার্সসহ চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত সকলে। নিজেদের জীবনকে বাজী রেখে তারা যুদ্ধ করছেন। তারা জানেন যুদ্ধে হারলে খেসারৎ দিতে হবে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান বস্ত প্রাণ ভ্রমরা। তবুও তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছেন আপন মনে । আবার যারা সম্মুখভাগের যোদ্ধা নন তারাও যুদ্ধ করছে। তবে তারা শুধু নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধ করছে। তাদের কাঁধে কোনো দায়িত্ব নেই। তাদের লড়াই শুধু মাত্র নিজেকে নিয়ে । তারা শুধু মাত্র নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের মত করে লড়ে যাচ্ছে । করোনা যে শুধু মাত্র মানুষের বেঁচে থাকার পথে অন্তরায় হয়েছে তা নয়। থামিয়ে দিয়েছে জন-জীবন, অর্থনীতি, জীবিকা, যোগাযোগসহ প্রায় পুরো বিশ্বকে। অর্থনীতির চাকা প্রায় অচল হয়ে গেছে এই মহামারীকালীন সময়ে। আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন , পরিবহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , অফিস-আদালত সহ সকল কাজ প্রায় বন্ধ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মানুষের আয়-উপার্জন। চাকরি হারাচ্ছে হাজারো চাকুরীজীবী। বেকারত্বের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ, বাড়ছে হতাশার দীর্ঘ্যশ্বাস। মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটছে দ্বার থেকে দ্বারে। কেউবা করছে পেশার পরিবর্তন। তবুও সবাই চায় খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে। একবুক হতাশা নিয়ে অসহায় মানুষেরা চালিয়ে যাচ্ছে নীরব লড়াই।
করোনা নিয়ে আবার বিশ্ব রাজনৈতিক পর্যায়েও আছে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা । তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মতামত। একপক্ষ বলছে এটা মানুষের তৈরি জীবানু বোমা। দায় এড়ানোর জন্য অন্য পক্ষ বলছে একটা প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট। এ নিয়ে চলমান ইস্যুতে বিশ্ব গবেষকদের কেউ দিচ্ছেন মত আবার কেউ পোষণ করছেন দ্বিমত।
তবে কি এই অদৃশ্য জীবানু থেকে মুক্তি পাবেনা মানব সভ্যতা? পরাজয় বরণ করে নিবে মানুষ? প্রশ্নটা সবার মনে থাকলেও কেউ কেউ দিচ্ছে আশ্বাস। শোনাচ্ছে মুক্তির বাণী। হয়তো মুক্তি মিলবে অতিশীঘ্রই কিংবা অপেক্ষা করতে হবে অতিভবিষ্যতের জন্য। চালাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা ও পরিক্ষা। তবে কি এখন মানুষের কোনো উপায় নেই এই লড়াইয়ে টিকে থাকার? হ্যা ! সেই উপায় ও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানুষকে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যবহার্য্য অস্ত্রের সন্ধানও দিয়ে দিয়েছে। তা হচ্ছে ‘সচেতনতা’। একমাত্র সচেতনতাই হচ্ছে মানুষকে এই লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য একমাত্র অস্ত্র। যতদিন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক, টিকা কিংবা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না হয় ততদিন মানুষকে তার নিজের মত করে লড়াই করতে হবে। এখন সবাই জানে লড়াইয়ের অর্থ , লড়ছেও সবাই। “লড়াইটা বেঁচে থাকার, তবে ফলাফলটা সকলের অজানা “।
জহিরুল ইসলাম শিক্ষার্থী- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ১ম বর্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।