তালহা জাহিদ: হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাতিকতায় ভালমত গবেষণা বা খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হল সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো বা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো। অর্থাৎ হলুদ সাংবাদিকতা মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন, দৃষ্টি আকৰ্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা, সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্ৰতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা, কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্ৰচার করা, অহেতুক চমক সৃষ্টি ইত্যাদি।
ফ্রাস্ক লুথারের মথ এব্যাপারে হলুদ সাংবাদিকতা’র পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন,১. সাধারণ ঘটনাকে কয়েকটি কলাম জুড়ে বড় আকারের ভয়ানক একটি শিরোনাম করা।২. ছবি আর কাল্পনিক নক্সার অপরিমিত ব্যবহার।৩. ভুয়া সাক্ষাৎকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার।৪. সম্পূৰ্ণ রঙিন রবিবাসরীয় সাময়িকী প্রকাশ, যার সাথে সাধারণত কমিক্স সংযুক্ত করা হয়।৫.স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো পরাজিত নায়কদের প্ৰতি নাটকীয় সহানুভূতি।বর্তমানে হলুদ সাংবাদিকতার যেসকল প্রভাব দেখতে পাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা বড় দুর্বলতা হলো, সেখানে যেসব খবরাখবর আদান–প্রদান হয়, সেগুলোর সত্য–মিথ্যা যাচাই–বাছাই করা হয় না, সেগুলো অসম্পাদিত। কিছু বলায় বাছবিচার নেই, যার যা খুশি তাই বলে দিচ্ছে। এবং মিথ্যা কথাও বলছে, নিজেদের মনগড়া কথা বলছে; কাউকে হেয় করার জন্য বা বিপদে ফেলার জন্য বলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে আমরা দেখছি যে এক সম্প্রদায়ের মানুষ আরেক সম্প্রদায়ের মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করছে।
সাংবাদিকতার কাজে মননিবেশ করতে গিয়ে দেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের জীবনী ও তাদের কাজের সর্ম্পকে জানার বেশ ইচ্ছা নিয়ে মাঝে মাঝে বই ঘাটা ঘাটি করে জানতে পাই কুষ্টিয়া জেলায় ঊনবিংশ শতকের অমিত সাহসী সাংবাদিক-সমাজ বিপ্লবী হরিনাথ মজুমদার তথা কাঙাল হরিনাথের কথা? একটি প্রশ্ন আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খায়। তাহলো, আচ্ছা নবীন সাংবাদিকদের মধ্যে এমন অনেক আছে। কিন্তু তাদের নাম কয়জন জানেন বা তার সম্পর্কে কতটুকু জানেন? আমরা কি জানি কুষ্টিয়া জেলায় ঊনবিংশ শতকের অমিত সাহসী সাংবাদিক-সমাজ বিপ্লবী হরিনাথ মজুমদার তথা কাঙাল হরিনাথের কথা? মোনাজাত উদ্দিন তো মাত্র এই বিশ শতকের আর কাঙাল হরিনাথ কিন্তু সেই ঊনবিংশ শতকের। তার প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামবার্র্ত্তা প্রকাশিকা’ ছিল নিতান্তই নির্ভীক সাংবাদিকতার আদর্শ পত্রিকা।
পাবনার তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. হামফ্রে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন ‘এডিটর, আমি তোমাকে ভয় করি না বটে, কিন্তু তোমার লেখনীর জন্য অনেক কুকর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’ এর চেয়ে বড় আত্মসমর্পণ আর কি হতে পারে ভাবুন তো। তাও আবার এক মফস্বল সাংবাদিকের কাছে। তাই বলতে চাই, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা কিন্তু সেই মফস্বলেই, অজপাড়াগাঁয়েই। আধুনিক শহুরে চাকচিক্যময় সাংবাদিকতার ভিত্তি কিন্তু এই গ্রামবাংলায়। হতে পারে শহরে-রাজধানীতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন সংবাদ থাকে, রাষ্ট্র-প্রশাসন যেহেতু সেখান থেকেই পরিচালিত হয় সুতরাং শহুরে-রাজধানীর গুরুত্ব তো বেশি থাকবেই। এটিই স্বাভাবিক। তবে এই বাংলাদেশ শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। অন্যান্য জেলা-উপজেলা-গ্রাম মিলিয়েই সমগ্র বাংলাদেশ। অন্তত আমি বিশ্বাস করতে চাই। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর পেশাতে (একটি সময় তো তাই ছিল, এখনো যে বেশি পরিবর্তন হয়েছে তা বলা যাবে না)’। সে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকেই বলা এসব