গরমে সবারই হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন গরম যেন অনেকদিনই দেখা যায়নি। বৈশাখের শুরুতেই এমন দাবদাহের ঘটনা স্মৃতির সরণি বেয়ে মনে করতে পারছেন না অভিজ্ঞরাও। তীব্র তাপদাহের দাপটে একাধিক অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে। এমনকি হচ্ছে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই।
আমাদের কিডনি থেকে শুরু করে মূত্রনালী পর্যন্ত দীর্ঘযাত্রা পথের কোনো একটি জায়গায় ইনফেকশন হলেই বলা হয় ইউরিন ইনফেকশন। এক্ষেত্রে প্রস্রাব করার সময় জ্বালা, যন্ত্রণা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, পেটে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি ইত্যাদি এই অসুখের লক্ষণ হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, তীব্র গরমে ইউটিআইতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এই সময়ে ঘামের মাধ্যমেই দেহের অনেকটা পানি বেরিয়ে যায়। ফলে ইউরিন আউটপুট বা প্রস্রাব পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না। এই কারণে ইনফেকশনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
অনেকেই ভাবেন, ইউটিআই কেবল মহিলাদের হয়। এই ধারণা একেবারেই ভুল। বরং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই ইনফেকশন হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে গরমে ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ করবেন? আসুন জানা যাক-
পর্যাপ্ত পানিপানই অস্ত্র
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিপান করতে হবে। আসলে শরীরে পানির ঘাটতি হলে ইউরিন হয় না। তখন ইউরিনারি ট্র্যাক্টে বাড়তে পারে ব্যাকটেরিয়া। এই কারণেই সংক্রমণ হয়।
এদিকে ইউরিন আউটপুট ঠিক থাকলে প্রস্রাবের সঙ্গেই ব্যাকটেরিয়া দেহের বাইরে চলে আসে। ফলে ইনফেকশন হওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই গ্রীষ্মের দিনে অন্ততপক্ষে ৩ থেকে ৪ লিটার পানিপান করুন। তাহলেই সুস্থ থাকবেন।
ডাবের পানি ও ফলের রস পান করুন
শুধু পানিপান করেই ইউরিন ইনফেকশন ঠেকানো সম্ভব। তবে অনেকেই দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানিপান করতে পারেন না। তারা সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য ডাবের পানি ও ফলের শরবত পান করতে পারেন।
ডাবের পানি ও ফলের রস থেকে শরীরে পানির ঘাটতি মিটবে। পাশাপাশি দেহে খনিজ, ভিটামিন এবং ইলেকট্রোলাইটস পৌঁছে যাবে। এই কারণে সংক্রমণ অনায়াসে দূর করা যায়। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই বললেই চলে।
বাইরের টয়লেট কম ব্যবহার করুন
ঢাকা শহরের গলিতে গলিতে পাবলিক টয়লেট। এসব টয়েলট ব্যবহারের সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টয়লেট থেকেই এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। তাই চেষ্টা করুন এই সময়টায় অন্তত পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে চলার।
বিশেষত, মহিলাদের পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখাটাও বিপদের কারণ। তাই একান্তই প্রস্রাব পেলে করতে হবে। তবে প্রস্রাব করার আগে টয়েলট ফ্লোরে বিশেষ স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এতে জীবাণু মরে যাবে। ফলে ইনফেকশনের আশঙ্কা কমবে।
প্রস্রাব চেপে রাখলেই বিপদ
প্রস্রাব ধরে রাখলে ব্লাডারে অনেকটা সময় ধরে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকার সুযোগ পায়। আর ভাগ্য খারাপ হলে, এই ফাঁকেই জীবাণু নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতেও পারে। তখন হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন।
এই পরিস্থিতিতে সচেতন থাকা ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই। তাই প্রস্রাব কখনোই ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে রাখবেন না। বরং প্রস্রাব পেলেই ব্লাডার পরিষ্কার করুন। এতেই সুস্থ থাকতে পারবেন। ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা কমবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
অনেকে বছরে একাধিক বার এই অসুখে আক্রান্ত হন। তাদের বিশেষভাবে সচতেন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর নিজের বুদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। এতে ড্রাগ রেজিস্টেন্স তৈরি হয়। পরে আর সেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না।
বরং সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কী কারণে বারবার, এমন সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে দেখতে হবে। তারপর চিকিৎসা। এভাবেই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।
সূত্রঃ (ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/এজে)