স্বপ্নীল দাস (দর্পন)
(আমার জীবনের স্বপ্নদ্রষ্টা নচিকেতা চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করছি)
আপনাকে আমার কখনো শুধু শিল্পী বলে মনে হয়নি।
চারদিকের অবহেলা অমূল্যায়নে যখন ক্লান্ত
তখন ভেবেছিলাম শেষ করে দেবো নিজেকে।
পুতুল নাচের পৃথিবীতে আমি যখন পুতুল হয়ে যাচ্ছিলাম,
যখন অপরাধের মোড়কে ঘেরা ধর্ষিত
সমাজের কাছে মাথা নিচু করার সময় এসে গিয়েছিলো,
সত্যি বলছি তখন মনে হয়েছিলো
আমার পাশে সংস্কৃত শ্লোক পাঠের সময় ঘনিয়ে এসেছে প্রায়।
আমার কাছে মৃত্যুই যখন মুক্তির রাস্তা
তখন আমার কানে ভেসে এসেছিলো
আপনার ‘যখন সময় থমকে দাড়ায়’ গানের কথাগুলো
আমাকেও মৃত্যুর পথ থেকে থমকে দিয়েছিলো সেদিন।
সত্যি বলছি আপনাকে আমার শিল্পী বলে মনে হয়নি সেদিন, ঈশ্বর বলেও মনে হয়নি।
মা আর ছোট বোনের চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাবা যখন অন্ধকার পথের যাত্রী,
তখন আমি মাধ্যমিকের ছাত্র।
স্কুলের ফিস দিতে না পেরে পরীক্ষায় বসতে পারিনি।
অসুস্থ মাকে নিয়ে সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে বসে আছি বাবার অপেক্ষায়। হঠাৎ পাশের বাড়ির মন্টু দা দৌড়ে এসে খবর দিলো চুরির
মাল সহ ধরা পরে দৌড়ে পালাতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় বাবা আর নেই।
খবর শুনে অসুস্থ মাও কোনো সময় দেয়নি।
চলে গেলেন বাবার কাছে।
হয়তো ওদের এমনই চুক্তি ছিলো।
আপনিতো বলেছিলেন এ সমাজটাই চোর।
কই মরতেতো হলো আমার বাবাকেই।
আপনার প্রতিবাদী অক্ষরগুলোতো সেদিন কোন প্রতিবাদ করেনি।
বাবা মা মরে যাবার কষ্ট, ছোট্ট বোনের খেতে না পাবার যন্ত্রণা, হতাশা আর ব্যার্থতায় যখন বিষন্ন আমি,
যখন আমার অন্যায়ের সাথে আপোষ করা কিংবা শেষ বারের মতো আস্থা রাখার কথা এক ফোঁটা বিষের উপর।
তখন আপনার বস্তা বস্তা গান কি দিতে পারে, কি দিতে পারে আপনার লেখা?
কিন্তু তখনো আপনি আমাকে থামিয়ে দিলেন
শুনিয়ে গেলেন অন্তবিহীনপথ চলাই জীবন,আগুনপাখি,অনির্বান,এরই নাম হলো বেঁচে থাকা,রাজশ্রী,ইট’স এ গেইম
ইত্যাদি আরো অনেক।
আমি সেদিনও আপনাকে চিনতে পারিনি।
কিন্তু একদিন সারারাত ধরে আবিষ্কার করলাম এরকম প্রতিটি গানের কথায় কথায় আপনি আমাকে বলে গেছেন,
আপনার গানের প্রতিটি কথায় কি হতাশা,ব্যার্থতা,লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প,ক্ষুধা – দারিদ্র্যতা।
জেনো প্রতিটি অক্ষরে আমাকেই ব্যাখা করেছেন আপনি।
হ্যা গোটা পৃথিবীর প্রতিটি আমিকে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন আপনি।
আপনাকে আমার কখনো শিল্পী বলে মনে হয়নি,
ঈশ্বর বলেও মনে হয়নি কখনো।
মনে হয়েছিলো বাবা-মা মরে যাওয়া,স্বপ্নকে আকড়ে ধরে ছুটেচলা একজন মানুষ
যে ফুটপাতে আমার পাশেই বসে বাঁচতে শিখিয়েছিলো আমাকে।