এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে বর্তমান পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম। নামটি এখন জেলার সর্বত্র সবার মুখে, অসহায় আর্তপীড়িত সাধারণ মানুষদের হৃদয়ে, মাদক ব্যবসায়ী, অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বুকের কম্পন এবং পুলিশই জনগনের শেষ আশ্রয়স্থল এমন ভরসা ও আস্থার জায়গা যিনি তৈরি করেছেন তিনি বর্তমান করোনা মোকাবেলার একজন সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে তার কর্মগুনে একদিকে জেলাবাসীর কাছে মানবিক হয়ে উঠেছেন অন্যদিকে জেলার ১২৫৪ জন পুলিশ সদস্যের কাছে আদর্শ অভিভাবক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। আজ ২৩ শে জুন কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার হিসেবে তার এক বছর পূর্ন হলো।
কর্মক্ষেত্রে ১ম বছরেই যিনি জয় করে নিয়েছেন মানুষের মন। গত বছর ২৩ জুন কুড়িগ্রামের এসপি হিসেবে দায়িত্ত্ব নেন পুলিশের এই মানবিক কর্মকর্তা । সেবা সততা নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে যিনি ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। বলা চলে এই এক বছরে তিনি পুলিশ সম্পর্কে কুড়িগ্রাবাসীর ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন। নিরলস পরিশ্রমী মেধাবি এই কর্মকর্তার কারণে কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষ আজ পুলিশকে তাদের রক্ষক ও সেবক ভাবতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রামের সাধারণ যে কারো কাছে জানতে চাইলে আপনি এই পুলিশ সুপারের প্রশংসা এবং সততার কথা শুনতে পাবেন। কর্মক্ষেত্রে এই এক বছরে তিনি সাধারণ মানুষ এবং ডিপার্টমেন্টের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের তাদের কমিটমেন্টের জায়গাটি বোঝাতে পেরেছেন আর সাধারণ মানুষকে বার্তা দিতে পেরেছেন যে, পুলিশ কোন পেটোয়া বাহিনী নয় ও জনগন থেকেও বিচ্ছিন্ন নয়, জনসাধারণের রক্ষাকবচ হিসেবে পুলিশ তাদের সাথে রয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে তারা যেন পুলিশের সাহায্য নেয়। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এই নীতির কারণে তিনি জেলার মানুষের কাছে এখন আস্থার প্রতীক এবং জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম এখন জনতার শেষ আশ্রয়স্থল ।
জানা যায়, শরীয়তপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের কৃতি সন্তান মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ২৪তম বিসিএসে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে খুলনা রেন্জ ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছয়মাস পর ডিএমপি ডিবি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ইউএন মিশন, এএসপি সংস্থাপন পুলিশ হেকো, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নারায়নগন্জ। পদন্নোতি পেয়ে ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার কাউন্টার টেররিজম বিভাগে যোগদান করেন। জঙ্গীবিরোধী অভিযানে সাফল্যের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম এ ভূষিত হন। গত বছরের ২৩ জুন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন
২৩ জুন কুড়িগ্রামে যোগদান প্রথম চ্যালেন্জ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা:
কুড়িগ্রামে যোগদানের পর পরই ১০ দিনের মাথায় প্রথম চ্যালেন্জ ছিলো কুড়িগ্রামে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে নিয়ে এসে শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। যা বাস্তবে এতটা সহজ ছিলোনা। পুলিশের নিয়োগ নিয়ে সবসময় অনিয়ম এবং উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার মো: মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম কুড়িগ্রামে যোগদানের পরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষনা দেন। সেই সাথে তিনি জনগণকে কোনো রকম প্রতারনার ফাঁদে পা না দিতে সাবধান করেন। এ নিয়ে একটি ভিডিও বক্তব্য বার্তা স্থানীয় ক্যাবল টেলিভিশন কেসিএন এবং ফেজবুক পেজসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়। পুলিশ সুপারের বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারীতে বেশ কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এবং দালাল রয়েছেন মর্মে তিনি নিশ্চিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এতে তার প্রথম কমিটমেন্ট পুরন হয়।
জানা যায়, কুড়িগ্রামে পুলিশ কনস্টবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়িতে বদলী করেন ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। এছাড়াও জনগণের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অপরাধে একজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ বিভাগ। এছাড়াও দুই একাউন্টেন্ডকে বদলী করা হয়েছে। অপরদিকে চুড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে ঘুষ দেয়ার অপরাধে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে টাকা দেয়া প্রার্থীর অভিভাবককে ডেকে টাকা ফেরত দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী সময় অসাধু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা জানা গেছে। কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি বিশ্বস্থ সুত্র জানায়, ২৯ জুন, ২০১৯ ইং কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন মাঠে জেলা পুলিশের তত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে লিখিত, মৌখিক এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চুড়ান্ত নিয়োগের প্রক্রিয়া করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম।
কুড়িগ্রাম জেলা কে মাদকমুক্ত করতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ:
কুড়িগ্রাম জেলা ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদকের প্রবনতা ও পাচার রোধ ঠেকাতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান যোগদানের পর থেকেই পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম ফেজবুক পেজে ও গোপনে সীমান্তবর্তী থানা এলাকার খোজ খবর নিতে থাকেন। তিনি স্থানীয় অনলাইন ও গনমাধ্যকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। তিনি মনে করেন গণমাধ্যকর্মীদের কারনে মাদকসম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও তা যাচাই বাছাই পুর্বক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তিনি মাদকে বেশকিছু অসাধু পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা পান এবং তাদের বিরুদ্ধে মাদকসংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পেয়ে মামলাও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে জেলা পুলিশের করনীয় সম্পর্কে ব্রিফ করেন। তিনি মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী প্রদর্শন পুর্বক বিজিবি পুলিশ সমন্বিত সীমান্ত এলাকায় অভিযানও পরিচালনা করেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের মাদক অভিযানে কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। বেশ কিছু মাদক অভিযান সফল হওয়ার পর তিনি মাদকব্যবসায়ী দের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিজিবি ও থানা পুলিশের সমন্বিত উদ্যোগে বেশকয়েকটি মাদক বিরোধী সমাবেশ করেন। এরমধ্যে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং নাগেশ্বরী থানার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী রামখানায় মাদক বিরোধী সমাবেশ করে ৩৬ জন মাদক ব্যবসায়ীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শর্তে ও থানা পুলিশের নজরদারীতে রেখে আত্মসমর্পনের সুযোগ দেন।
হাজার হাজার শ্রেনী পেশার মানুষদের সামনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ই সেপ্টেম্বর ১৯ ইং ফুলবাড়ি থানার সীমান্তবর্তী এলাকা বালারহাট নামক স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে মাদক বিরোধী সমাবেশ করে ৫২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে একই শর্তে আত্মসমর্পন করার সুযোগ দিয়ে তাদের মাদক ব্যবসা থেকে বিরত রাখতে চেষ্ঠা করেন। মাদক বিরোধী সমাবেশগুলো মাদক ব্যবসা বন্ধে অনেকটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় থানা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম শহর অভিমুখে মাদক পাচার ঠেকাতে দুই ধরলা সেতুর মুখে স্থায়ী পুলিশ চৌকির ব্যবস্থা করে পুলিশ চেকিং অব্যাহত রেখেছেন। গত ১ বৎসরে সমগ্র জেলায় মাদক বিরোধী অভিযানে অনেক চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ও প্রচুর পরিমান মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে।পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল ও গনমাধ্যকর্মী দের মতামত হলো গত ১ বৎসরে একজন নিরাপরাধ মানুষও মাদক অভিযানে হয়রানির শিকার হয় নাই এবং মাদকের প্রবনতা পুর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন:
গত ১ বৎসরে ছেলেধরা গুজব, লবনগুজব সহ করোনা কাল অতিক্রম করছে জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন অগ্রীম জনসচেতনতায় পুলিশিং কার্যক্রমকে বেগবান করে এবং শাসন ও সোহাগে তিনি যুগোপযোগী পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তার নেতৃত্বে বেশকয়েকটি চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস মার্ডারের রহস্য উন্মোচন ও আসামী সনাক্তকরন সহ তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসায় জনগনের মনে পুলিশিং কার্যক্রম যথেষ্ট আস্থাশীল হয়েছে। স্কুল ছাত্রী জিম্মি হত্যা,পল্লীচিকিৎসক হত্যা,শিপন হত্যা, চিলমারীর নৈশপ্রহরী হত্যা এরকম ক্লু লেস হত্যাগুলোর তদন্ত, আসামী সনাক্ত ও গ্রেফতার প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে ও দ্রুত সময়ে নিস্পত্তি হওয়ায় পুলিশের সক্ষমতা বহুগুনে বেরেছে।
এসপি মহিবুলের নেতৃত্বে মানবিক পুলিশিং
২৩ শে জুনের যোগদানের পরই এসপি মহিবুল ইসলাম সর্বউত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অবলোকন করেন। তিস্তা ব্রহ্মপুত্র ধরলা দুধকুমার সহ ১৬ টি নদনদীর দারা বেষ্টিত ও ৪৫০ টির উপর চর বা চরাঞলে বসবাসরত অসহায় দূর্দশাগ্রস্ত বন্যাকবলিত মানুষদের সাথে এক নতুন দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা থেকে পরিচয় ঘটে। তিনি সর্বপ্রথম ঢাকা মনিপুর স্কুল এসএসসি ব্যাচ,বন্ধুদের সহযোগিতায় বর্ন্যাত্যদের মাঝে মানবিক ত্রান কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর ঢাকা কলেজ এইচএসসি এলামনাই এসোসিয়েশন, প্রবাসী বন্ধু, ব্যবসায়ী বন্ধুদের সহযোগিতায় এ ত্রান কার্যক্রম চালিয়ে যান। পরবর্তী সময় শীতমৌসুমেও তিনি কুড়িগ্রামের মানুষদের শীতবস্ত্র সংকট ও কষ্টের জায়গাটি উপলব্ধি করতে সমর্থ হোন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের পুলিশ সুপারের মানবিকতায় নিজেরাও শরীক হন। আবারো ছুটে আসেন ২৪ তম বিসিএস, ঢাকা মনিপুর স্কুল ও ঢাকা কলেজ। এভাবে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার প্রতিটি থানায় শীতার্ত কয়েক হাজার মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল উপহার হিসেবে তুলে দেন।
চিলমারীর সুরভী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু সুরভীর কথা নিশ্চই আপনাদের স্মরনে আছে। যে শিশুটি কে তার মা বাবা পায়ে শিকল বেড়ি দিয়ে রাখতো। সুরভীর এমন খবরে ছুটে যান মানবিক হয়ে ওঠা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। শিশু সুরভীকে শিকলমুক্ত করেন, পরিবারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, সেইসাথে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি সুরভীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। এ পর্যন্ত যে কষ্ট ওনাকে তাড়া করে ফেরে তা একটি নাম এই সুরভী। তিনি সুরভীর বাবা ও পরিবারের তত্বাবধানে শিশু সুরভীর ভালো ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করালেন, নতুন জামা কাপড় কিনে দিলেন, তার খাবারের ব্যবস্থা করালেন, চিকিৎসার সব ব্যবস্থাই করলেন। অথচ দুনিয়ার মায়া বুঝেনা এমন শিশুর প্রতি এসপি মহিবুলের যে মায়া মমতা তৈরি হয়েছিলো সেই সুরভী চিরনিদ্রায় শায়িত হলো। মৃত্যুর খবরে ছুটে গেলেন চিলমারী থানাহাট হ্যালিপেড সংলগ্ন সুরভীর চিরনিদ্রার সেই শায়িত কবরের পাশে। তার ভালোবাসা বা দূর্বলতার আর একটি জায়গা তা হলো নাগেশ্বরী থানার সুখ্যাতি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি স্কুল ও তার প্রায় ৭০ এর উপর অটিজম শিশু। ২৭ শে নভেম্বর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলামের জন্মদিন ছিলো, তিনি তখনই চেয়েছিলেম জন্মদিনটা তাদের সাথে শেয়ার করে কাটাবেন। কর্মব্যস্ততা তখন সহায় না হলেও ফেব্রুয়ারী র প্রথম সপ্তাহে স্কুলের সবার সাথে একসাথে দুপুরের খাবার খান, কথা বলেন, গল্প করেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। তখন থেকে অদ্যবধি কোন উপহার বা কেউ গেলেই এই অবুঝ শিশুরা এটা বুঝে নিতে পারে, যে ইনি একমাত্র তাদের এসপি আংকেল। সুখ্যাতি স্কুলেও তার এক ভালোবাসার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, এক শিশুর হিয়ার টোন মেশিন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছেন। এবার ঈদে প্রত্যেককে ঈদ উপহার হিসেবে নতুন জামা কিনে দিয়েছেন। এরকম আরো অনেক অটিজম শিশু তার ছোয়া পেয়েছে।
করোনা মোকাবেলা যুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধা ও মানবিক পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান
কুড়িগ্রাম জেলায় করোনার সম্মুখ যোদ্ধা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম। করোনা মোকাবেলায় জেলায় সর্বদা নিরলসভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জেলা পুলিশের অনেক অফিসার জানান, করোনা যুদ্ধে আপনারা ঘরে থেকে পুলিশকে সহযোগীতা করুন এমন স্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের এসপি স্যারের নির্দেশে জেলা পুলিশ দিন রাত নিরলস ভাবে জনগনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী যেমন, কাঁচা বাজার, মুদির দোকান নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকবে এবং ঔষুধের দোকান ছাড়া সকল দোকান বন্ধ থাকবে বলে সবাইকে সচেতন করছেন জেলা পুলিশ।
জেলার ১১টি থানার গ্রাম মহল্লা, পাড়ায় পুলিশ প্রশাসনের সকল ইউনিট নিরলস ভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পরে কোন রকম ঘরের বাইরে থাকা যাবে না, এমন প্রচার করেছেন। শুধু তাই নয়,যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদেরকে ঘরে থাকার জন্য জেলা পুলিশের মহড়ার মধ্য দিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার সম্পর্কে কুড়িগ্রাম জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, এসপি মহিবুল ইসলাম কুড়িগ্রামে যোগদানের পর থেকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তিনি কুড়িগ্রাম থেকে মাদক নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। করোনা মোকাবেলায় জেলাবাসীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি জেলা পুলিশকে মানবিক কাজে রুপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। তার ১বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সেই সাথে তার সুন্দর ও সুস্থ্য জীবন কামনা করছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বলেন, ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমন এড়াতে সকলে ঘরে থাকুন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হবেন না। আপনাদের কোন প্রকার সহযোগিতার প্রয়োজনে বা আপনার কাছে কোন গোপনীয় তথ্য থাকলে তা জেলা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এর ইনবক্সে জানাতে পারেন অথবা সরাসরি ফোন করতে পারবেন।তিনি আরো বলেন,জেলার প্রত্যেকটি থানায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।সকল থানার ইউনিয়ন পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই/এসআইদের মোবাইল নম্বর ব্যপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। যাতে মানুষ দ্রুত তাদের সমস্যার কথা পুলিশকে জানাতে পারে। যেকোন প্রয়োজনে ৯৯৯ এ ফোন করার আহবান জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত, জনবান্ধব করা এবং বিট পুলিশিং এর ব্যাপক প্রসারসহ মাদকমুক্ত কুড়িগ্রাম গড়ার পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যদের সার্বিক কল্যানের বিষয়ে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করে এগিয়ে যেতে চাই।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে নিজেই মাঠে থেকে কাজ করছেন পুলিশ সুপার। জেলাবাসীকে সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ অতিরিক্ত ভাড়া এবং যাত্রীদের হয়রানি রোধে প্রশংসনীয় মূলক কাজ করছেন তিনি। এমনকি পুলিশ সুপারের নিজস্ব উদ্যোগে জেলার প্রত্যেক উপজেলা ও দূর্গম চরাঞ্চলের বিধবা, ভিক্ষুক, ক্যাবল নেটওয়ার্ক কর্মী, বাজারের নৈশ প্রহরী, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা) সহ অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে একাধিকবার খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেন মানবিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম।