শাস্তি হিসেবে সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে প্রথমবার কেউ জাল নোটের কারবারে জড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হবে না। এমনকি দ্বিতীয়বারেও নয়। টানা তিনবার ৫০০ পিসের বেশি জাল নোট নিয়ে ধরা পড়লে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়। এই খসড়ার ওপর এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জনগণের মতামত নিচ্ছে।
২০১২ সাল থেকে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থ-সামাজিক ক্ষতির গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে শুরুর দিকে জাল নোটের কারবারিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড সুপারিশ করে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুন্দেস ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘ফেক নোট অ্যানালাইসিস সেন্টার স্থাপন’ বিষয়ক একটি প্রকল্প নেয়। এর উদ্দেশ্য আসল নোটের নিরাপত্তা এবং জাল নোটের কারবার দমনের দক্ষতা বাড়ানো। জাল নোট কারবারিদের মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করায় জার্মানি সরকার ওই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। বুন্দেস ব্যাংক এক বিবৃতিতে জানায়, জাল করা গুরুতর অপরাধ, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও বাড়াবাড়ি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের খসড়াটি সংশোধনে কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালে একবার খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সে বার মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সবশেষে এ মাসে পুনরায় খসড়া চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এখন থেকে জাল নোট বিষয়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মামলা করতে পারবে। এতদিন শুধু পুলিশ জাল মুদ্রার মামলা করতে পারত। আবার কারও কাছে জাল মুদ্রা থাকলেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। ওই জাল মুদ্রার বাহক আত্মপক্ষ সমর্থন বা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পাবেন। বাহক যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি সরল বিশ্বাসে ওই মুদ্রা বহন এবং বৈধ লেনদেনের অংশ হিসেবে ধারণ করেছেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হবে না। তবে জাল মুদ্রার বাহক যে উৎস থেকে এই মুদ্রা পেয়েছেন, তাকেও একই বিষয় প্রমাণ করতে হবে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে জাল মুদ্রার সংখ্যা দশ পিসের কম হতে হবে। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার ও পৌরসভার কাউন্সিলর, প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক বাহকের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। দশ পিসের বেশি জাল মুদ্রা কারও কাছে থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
খসড়া আইনে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রথমবার যে কোনো মানের ১০০ পিসের কম জাল মুদ্রা নিয়ে ধরা পড়ে, তবে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। ১০০ পিসের বেশি তবে ৫০০ পিসের কম হলে শাস্তি হবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আর ৫০০ পিসের বেশি হলে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। তবে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে কারাদণ্ড পাঁচ, সাত ও ১২ বছর এবং জরিমানা পাঁচ, ১০ ও ২০ লাখ টাকা করা হবে। আর তৃতীয় বা তার বেশিবার কেউ এই অপরাধ করলে নূ্যনতম ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এতদিন সিভিল পেনাল কোড অনুযায়ী জাল নোটের অপরাধীদের বিচার হতো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল যার কাছে জাল নোট পাওয়া যেত, তাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হতো। এ জন্য প্রস্তাবিত আইনে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা হয়েছে।