সব
facebook apsnews24.com
বৈষম্য ও বেকারত্ব লাঘবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা - APSNews24.Com

বৈষম্য ও বেকারত্ব লাঘবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা

বৈষম্য ও বেকারত্ব লাঘবে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা

★সুজন বিপ্লব

বৈষম্য ও বেকারত্ব নিরসনের লক্ষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর্মমুখী পেশায় সর্বজনের সেবামূলক জীবিকার সুরক্ষায় আলোচিত সংস্কার প্রসঙ্গে আইন ও বিচার অঙ্গনের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রচলিত বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতির সংস্কার আশু করণীয়। তাই নৈতিকভাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প ভাবনা ও রুপরেখা অনুযায়ী পরিবর্তন এবং বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। ১৯৭১’এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে ৫৩ বছর ধরে ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণি উল্টোপথে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার পালাবদলে সরকারের বদল হলেও শাসকেরা পরম্পরায় জনগণকে ফতুর করেছে। রক্তস্নাত ২০২৪’র গণঅভ্যূত্থানের সিদ্ধান্তে গঠিত অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে সব সেক্টরের বৈষম্য আর বঞ্চনা সমাধানের দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কাঙ্খিত রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়নে নানা সেক্টরে আলাপ বাড়ছে ক্রমশ, তন্মধ্যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারে দীর্ঘদিনের গণদাবিটাও বাস্তবায়নের আবেদন সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। গণঅভ্যূত্থানের টার্গেট মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধানে বিশেষভাবে সবাই প্রাধান্য দিয়েছেন। বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত কর্মসংস্থানের গ্যারান্টির বিষয় ছিল সংঘটিত অভ্যূত্থানের অন্যতম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবি। কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে, এমন ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার খোলনলচে পরিবর্তন করে জনগণের ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তেমন একটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হল আইনজীবী পেশায় আইন স্নাতকের শিক্ষানবিস অন্তে পেশাগত জীবনে প্রবেশাধিকার সংরক্ষণের বিষয় কতটা যৌক্তিক? জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টার সদুত্তরে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কারে বিকল্প প্রস্তাবের ভাবনা ও রুপরেখা প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল হওয়া জরুরি।

প্রখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিঙ্কন-এর উক্তি, “আপনি যদি আইনজীবী হওয়ার জন্য মনস্থির করেন তাহলে ধরে নেন, এর অর্ধেক হয়ে গেছে”। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয় আমরা দেখছি। এলএল.বি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরেও ইচ্ছা পোষণ করলেই আইনজীবী হওয়ার সুযোগ নেই। মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়ে এসে ‘সব হাতে কাজ, সব মুখে ভাত’ স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ হয়েছে? চরম বেকারত্বপূর্ণ ও কর্মসংস্থানের তীব্রতর সংকটে জনজীবন, সেখানে যুক্তিহীন ও অমানবিকভাবে বিশেষায়িত পেশাভিত্তিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বেকার বানানোর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা যায়না। বিশেষায়িত শিক্ষা শেষে নিবন্ধন পরীক্ষা নামক ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় জ্যামিতিক হার ও উলল্ফন গতিতে বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপেক্ষা করতে পারেনা। বেকারত্বের মীমাংসা না করে উন্নত রাষ্ট্রের পরিচয় বহন তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারেনা।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কোন একাডেমিক বা চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান নয়। বার কাউন্সিলের বর্তমান রুপ যেন বেকার তৈরির কারখানা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী অন্তুর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষায় যখন একজন শিক্ষানবিস অনুত্তীর্ণ হওয়ার সময়কালে চাকুরির স্বাভাবিক বয়সসীমাও খুঁইয়ে বসে। তখন বেকারত্বের দুর্ভোগে পতিত শিক্ষানবিস ‘না পায় শ্যাম আর না পায় কুল’ অবস্থায় স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়। বিশেষায়িত আইন স্নাতক হওয়ার পরে পেশা প্রবেশে আইনজীবী সনদ অর্থ্যাৎ অনুমতিপত্রের জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গ মোটেও যৌক্তিক নয়। সনদপ্রার্থীকে লাইসেন্স বা অনুমতিপত্রের জন্য জীবনবৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিক্ষানবিসকাল সম্পন্নের পারফরমেন্স সমেত সিনিয়র আইনজীবী কর্তৃক প্রত্যয়ন যাচাই করে আইনজীবী সনদ প্রদান করার যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দক্ষতার সাথে তদারকি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে যথাযোগ্য বলে বিবেচিত। একাডেমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বার কাউন্সিলের ক্রিয়াকাণ্ড হতে পারেনা। শিক্ষানবিসদের কাঁধে অন্যায়ভাবে আইনজীবী সনদ পরীক্ষা চাঁপানো হয়েছে। অসাধু উদ্দেশ্যে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

মুরুব্বিতন্ত্র ও মোড়লিপনার খপ্পরে স্বপ্নবান তরুণদের আইনজীবী হওয়ার স্বাভাবিক স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। বার কাউন্সিলের টার্গেটের শিকার তারুণ্যের আইন পেশায় ক্যারিয়ারের উচ্চতর লক্ষ্য খুন হয়ে যায়। বার কাউন্সিল শিক্ষানবিসের স্বপ্ন হন্তারকে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষা কখনও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। বরং বার কাউন্সিল পরীক্ষার দুর্নীতি-ভুলনীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। এটাকে ছাঁটাই পরীক্ষা বলা অযৌক্তিক হবেনা। আইন পেশার আদালতকেন্দ্রীকতা, গুরুশিষ্য পরম্পরার ঘরানা, ব্যবহারিক ও কারিগরী বিদ্যার সাথে প্রচলিত তিন ধাপের বার কাউন্সিল আইনজীবী নিবন্ধন পদ্ধতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমানের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণের পদ্ধতি বাতিল করে বিকল্প মূল্যায়ন হিসেবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি চালু হওয়া দরকার। অবস্থাদৃষ্টে তোঘলকি কারবার চলছে। স্বাধীন দেশ সুবর্ণ জয়ন্তী অতিক্রম করলেও স্বাধীন আইন পেশায় আইন স্নাতকের কর্মসংস্থানের স্বাধীনতা নেই, নিশ্চয়তা নেই।

আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি কতটা অপ্রাসঙ্গিক, তার চিত্র দেশবাসী অবলোকন করেছে। বার কাউন্সিল আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণের পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতির পরিবর্তে অচলাবস্থা নিরসনে ইতোমধ্যে বিজ্ঞ ও ভুক্তভোগী মহল থেকে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত দাবিসমূহ আমলে নিতে সদিচ্ছা থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাঁড়া দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক সমন্বিত সিদ্ধান্তে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারে উত্থাপিত বিকল্প দাবিগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায় ভুক্তভোগীরা, অভিভাবক, বিজ্ঞ মহল ও সচেতন দেশবাসী। স্নাতক পর্যায়ে আইন বিষয়ে কাম্য ছাত্রসংখ্যা নির্ধারণ করা হলে বার কাউন্সিল পরীক্ষার কোন প্রয়োজন থাকেনা। ‘গাছের গোড়া কেটে, আগায় জল ঢালা’র মতো বার কাউন্সিল পরীক্ষা পয়দা করা হয়েছে। টেনে-হিঁচড়ে, জোর করে শিক্ষানবিশসদের পরীক্ষায় বসানো হয়। তাতে লাভবান কারা?

বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ সম্পন্নকারী আইনের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীকে স্বাধীন পেশায় আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি বা অনুমতির জন্য বার কাউন্সিল পরীক্ষার মুখোমুখি করে, এইসব পরীক্ষায় অংশ নিতে মোটা অঙ্কের টাকা ফি হিসেবে বেকারের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়।
শিক্ষানবিশি শেষ করতে গিয়ে স্বাভাবিক চাকুরির বয়স পেরোনো বিশেষায়িত আইন স্নাতকগণ বিদ্যমান বার পরীক্ষার মারপ্যাঁচে আবার অনুত্তীর্ণ হয়ে চরম দুর্ভোগে পতিত হচ্ছে। আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণের চলতি পদ্ধতিতে মোড়লিতন্ত্র, সিন্ডিকেট ও আমলাতন্ত্র ‘লাভের গুড়’ খাচ্ছে। এরকম পরীক্ষার নামে ছাঁটাই হওয়ার কারণে জনসেবাখাত আইন পেশা সংকুচিত ও কুক্ষিগত হওয়ায় জৌলুশ হারাচ্ছে।

রাষ্ট্রের নানা কাঠামো সংস্কার চলছে। সবাই সংস্কার চাই, সেসব যেমন যৌক্তিক, তেমনি বাংলাদেশ কাউন্সিল সংস্কারও জরুরি । উচ্চতর প্রফেশনাল বিশেষায়িত ও ব্যবহারিক শিক্ষা আইন বিষয়ে উত্তীর্ণ আইন স্নাতকসম্পন্ন ও ইন্টার্নশিপ-শিক্ষানবিসি শেষে একটি চাকুরিবিহীন স্বাধীন পেশায় প্রবেশাধিকারের জন্য অন্যায্য পরীক্ষা বাতিল করা উচিত। আইন শিক্ষায় কাম্য ছাত্র সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ আইন স্নাতক কি আইন জানে কি-না তার জন্য পরীক্ষা দিয়ে আইনজীবী তালিকাভূক্তিকরণের তলের খবর হল প্রহসন, বাণিজ্য ও দলীয়তন্ত্রের দখলদারিত্বে সাধারণের সুযোগ সংকুচিতসহ অনেকগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতি বহুকাল ধরে চলছে। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে আইনসেবা ও দক্ষ আইনজীবী নিশ্চিতে ওপেন মার্কেটের যে পেশা সেখানে এ ধরণের এমবার্গ খাটেনা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসাবে একাডেমিক যোগ্যতা ও অন্যান্য ফিটনেসের দাখিলকৃত সার্টিফিকেট পর্যবেক্ষণ করে আইনজীবী নিবন্ধন বা তালিকাভুক্ত ওকালতি সনদ প্রদানের মাধ্যমে বেকারত্বপূর্ণ ও আর্থিক সঙ্গতিহীন আমাদের মতো দেশের জন্য কল্যাণমূলক। এটা কর্তারা কানে তোলেননা। যিনি পারফর্ম করতে পারবেননা, তিনি বাধ্য হয়েই হাত গুটাবেন। প্রচলিত আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি একারণে হয়রানিমূলক ও মুরুব্বিতন্ত্রের ছাঁটাই প্রক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী অন্তবর্তীকালীন সরকার বার কাউন্সিলের অব্যবস্থাপনার অপসারণে সংস্কারের তাগিদ অনুভব করুক। হাজারো আইন শিক্ষার্থী, শিক্ষানবিস, অভিভাবক ও জনগণের প্রত্যাশিত বার কাউন্সিল হয়রানিমুক্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হোক।

বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতির দূর্নীতি-ভুলনীতির সীমাহীন নৈরাজ্যের মুখে বর্তমানে প্রচলিত ত্রিস্তরের পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে যুগ ও পেশার উপযোগী করা বা পূর্বতন পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। কোনো সংশয় নেই যে, আইন একটি গুরুমুখী ব্যবহারিক বিদ্যা। আবার, আইনপেশা কোনো চাকুরিও নয়, স্বাধীন ব্যবসা। বার কাউন্সিলের সনদ হলো তা পরিচালনার লাইসেন্সমাত্র। ফলে এই সনদের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) বা সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) কিংবা অপরাপর চাকুরি পরীক্ষার মতো প্রিলিমিনারি, লিখিত আর মৌখিক পরীক্ষার বন্দোবস্ত রাখা কতোটা যৌক্তিক- তা ভেবে দেখার দরকার আছে। পেশার উপযোগী কোনো বিকল্প পদ্ধতিই এক্ষেত্রে গড়ে তোলা উচিত।

আইন পেশা ছাড়া আর কোনো বিশেষায়িত পেশায় এই “তালিকাভুক্তি পরীক্ষা” নামক সিস্টেমের অস্তিত্ব নাই। বার কাউন্সিল যদি মনে করেন তিন দফা কঠিন পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আইনজীবীদের সংখ্যা কমানো ও দক্ষতা যাচাই করে থাকে, তাহলে দেশে কী সংখ্যক আইনজীবী প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেই সংখ্যক ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সনদ লাভের জন্য শুধু আইনের শিক্ষার্থীদের তিন দফা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয় অত্যন্ত অসম্মানজনক ও বৈষম্যমূলক। অতএব, এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সুদীর্ঘকাল ধরে আইন পেশা সমাজের কাছে অত্যন্ত সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জনজীবনের নানা সংকটে ন্যায়বিচার পেতে মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হন। বাদী এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবীগণ তাদের মেধা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যাসত্য নির্ণয়ে ভূমিকা রাখেন, যার ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংকট নিরসন করেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীদের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কাজ করে আসছে।
একটি সেবামূলক বৃত্তি হিসেবে ন্যায়পরায়ণতা ও মানবাধিকার সংরক্ষণে নিজেদের যুক্ত করতে অসংখ্য তরুণ নিজেদের আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। আমাদের দেশে চলমান পদ্ধতি অনুযায়ী একজন আইনের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক বা এলএলবি (সম্মান) অথবা এলএলবি (পাস) উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারেন না। তাকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে আবার তিন ধাপের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর আইনজীবী সনদ দেয়া হয়। কখনো-কখনো এ তিন ধাপের পরীক্ষা একবার সম্পন্ন হতে তিন-চার বছর সময় লেগে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ বেকারত্ব বৃদ্ধির হারে বিশ্বে শীর্ষের তালিকায় অবস্থান করছে। সেইসঙ্গে অধিকাংশ তরুণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন নয় যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরও দীর্ঘ সময় উপার্জনহীন অথবা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পিছে ছুটতে পারবেন। ফলে দেখা যায় যে আইনে স্নাতকদের শতকরা আশি জনেরও বেশি আইন সম্পর্কিত পেশায় যুক্ত হতে পারছেন না। এ প্রেক্ষিতে আইন পেশার বাইরে অন্য কোন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে জনগণ একদল চৌকস, স্বপ্নবান, মেধাবী তরুণের সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।
স্নাতক পর্যায়ে আইনশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখা কোর্স হিসেবে পড়ানো হয়। কোন কোন বিষয় পড়া প্রয়োজন তা বিবেচনা করেই পাঠ্যসূচি নির্ধারিত হওয়ার কথা। এসব বিষয় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পেশা প্রবেশের পথে আবার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। অথচ আইনজীবী কোনো বেতনভুক্ত চাকুরে নন। এটি একটি অসঙ্গতি হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আইনে স্নাতক সম্পন্ন করাটাই আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা নির্দেশক। স্নাতক ডিগ্রি যদি যোগ্যতার পরিচায়ক না হয় তবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শিক্ষা পদ্ধতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে অথবা ত্রুটি নির্দেশ করে। আইন শিক্ষায় ত্রুটি থাকলে পাঠ্যসূচি ও পঠন-পাঠন পদ্ধতি সংস্কার করে ত্রুটি দূর করার প্রয়োজন নির্দেশ করে। ইতোপূর্বে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তকরণ পরীক্ষা নিয়ে অনিয়মের বহু অভিযোগ উঠেছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও আস্থার প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলদেশ বার কাউন্সিলের ভাবমূর্তিকেও যা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ সহজেই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মত সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান এসব বিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারত। প্রতি বছর দু’বার প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ার নিয়মনীতি থাকলেও কর্তৃপক্ষ আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দুর্নীতি-ভুলনীতির মাধ্যমে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি বাতিলের বিকল্প নেই। আবার এ পরীক্ষা, উত্তীর্ণদের পেশাজীবনে কোনো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে না। বরং বিকল্প উপায়ে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সনদ প্রদান করা সম্ভব ছিল। শিক্ষানবিশকালে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও অ্যাসাইনমেন্টে অংশগ্রহণমূলক সৃজনশীল পদ্ধতির ভিত্তিতে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে অধিক সহায়ক বলে আমাদের কাছে বিবেচিত।
আমরা দেখতে পাই, চিকিৎসাও এমন সেবামূলক পেশা, যাদের হাতে মানুষের বাঁচা-মরা সবসময় নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে কেউ এমবিবিএস পাস করার পর নির্দিষ্ট মেয়াদের শিক্ষানবিশকাল শেষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের ফরম পূরণ সাপেক্ষে ব্যক্তিগতভাবে পেশা জীবনে প্রবেশ করতে পারে। একই কথা খাটে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রেও।
আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালিসহ প্রভৃতি দেশের প্রথিতযশা আদালতেও এরূপ পরীক্ষা পদ্ধতির অস্তিত্ব নেই। ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের পদ্ধতিও আমাদের তুলনায় সরল। ১৯৮১ সালের আগে আমাদের দেশেও এরূপ পরীক্ষা ছিল না। ২০১২ সালের আগে চলমান তিন ধাপের পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল না। পরীক্ষাহীন পদ্ধতিতে সনদ পেয়েও তৎকালীন আইনজীবীদের অধিকাংশই নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে আদালত ও বিচার ব্যবস্থার মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
মামলাজট নিরসন ও বিচারিক ব্যবস্থার সেবা জনগণের নাগালে নিতে উপজেলা পর্যন্ত আদালত সম্প্রসারণ, এমনকি গ্রাম আদালতে বিচারক, আইনজীবী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করার মাধ্যমে আইন সংশ্লিষ্ট পেশায় অধিক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশে কোর্ট লয়্যার ও অ্যাডভাইজার লয়্যার পৃথকভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে প্রয়োগ করা যেতে পারে যা বিশেষায়িত কর্মক্ষেত্র হিসেবে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এসব উদ্যোগে অনেকগুলি সংকট সমাধান করা সম্ভব। এসব বিবেচনা থেকে আইন স্নাতকদের ভোগান্তি দূর করে পেশাজীবনে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে একটা কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বানে দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী সনদ প্রদানের জন্য প্রণীত ও উত্থাপিত ৪ দফা ভিত্তিক বিকল্প আইনজীবী তালিকাভুক্তি পদ্ধতি যৌক্তিক বিচারে সর্বমহলে গ্রাহ্য ও প্রবর্তনের আবেদন রয়েছে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশেষায়িত কর্মক্ষেত্র হিসেবে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আর এসব উদ্যোগে অনেকগুলি সংকট সমাধান করা সম্ভব। আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ ৪ দফা প্রস্তাবনা ও বিকল্প পদ্ধতিঃ
১.জটিল, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও হয়রানিমূলক তিন ধাপের পরীক্ষা নামক ছাঁটাই প্রক্রিয়া বাতিলপূর্বক বিশেষায়িত, কর্মমুখী ও ব্যবহারিক শিক্ষা আইন বিষয়ে স্নাতক উত্তীর্ণদের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ ও অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে শিক্ষানবিশকাল অন্তে আইনজীবী সনদ প্রদান করা।
২.আইনে স্নাতক পযার্য়ে কাম্য ছাত্র সংখ্যা নিধার্রণ, সিলেবাস ও পেশাগত সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩.আদালত সম্প্রসারণ, উপজেলা আদালত চালু ও গ্রাম আদালত পর্যন্ত বিচারিক নিয়োগ এবং আইনজীবীদের কার্যক্রম বিস্তৃত করা।
৪.বিজ্ঞ আদালতে মামলা পরিচালনায় নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত আইন শিক্ষানবিশ অংশগ্রহণের ব্যবস্থা, ন্যূনতম শিক্ষানবিশ সম্মানী নির্ধারণ ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

জনগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের জীবন-জীবিকা-মর্যাদা ও সর্বসাধারণের অত্যাবশ্যকীয় সেবা সংক্রান্ত আলোচ্য আইনজীবী নিবন্ধনের বিষয়টি রাষ্ট্র সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। আইন পেশার সংকট নিরসন ও সেবার মান উন্নতকরণে, তারুণ্যের স্বপ্ন বাঁচাতে, কর্মসংস্থানের পথ সুগম করতে অবিলম্বে প্রচলিত বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতির বৈপ্লবিক সংস্কার করতে হবে। কর্মমূখী, বিশেষায়িত ও ব্যবহারিক আইন শিক্ষা শেষে পেশাগ্রহণের পথ আটকানো অনুচিত। আইন পেশায় তালিকাভুক্তির জন্য আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার যৌক্তিকতা সর্বমহলে প্রশ্নবিদ্ধ! যৌক্তিক সংস্কার ভাবনা অনুযায়ী বিকল্প আইনজীবী তালিকাভুক্তি পদ্ধতি চালুর বিকল্প নেই। জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে ও আইনসেবা নিশ্চিতে আইনজীবী তালিকাভূক্তি পদ্ধতি সংস্কার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনিবার্য হয়ে ওঠেছে।

সুজন বিপ্লব: সংগঠক ও গবেষক
sujonbiplob24@gmail.com

 

আপনার মতামত লিখুন :

সুপ্রিম কোর্টে মারামারির ঘটনায় আইনজীবী পিটিয়ে বরখাস্ত ৩ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল

সুপ্রিম কোর্টে মারামারির ঘটনায় আইনজীবী পিটিয়ে বরখাস্ত ৩ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করার ফলাফল ও প্রাসঙ্গিকতা

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী হলেন ৫ হাজার ৯৭২ জন

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

আইনজীবী নিবন্ধনে পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্টকরণ ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ভার্চুয়াল সভা

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

জমি অধিগ্রহণ কি, কেন, কখন, কিভাবে?

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট যে কোন দিন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj