ফুটবল রাজ্যের এক অনিন্দ্য, শৈল্পিক,মুকুটহীন রাজকুমার লিওনেল মেসি।মুকুটহীন বললাম কারণ তেমন কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি সে অর্জন করতে পারে নি।আন্তর্জাতিক ট্রফি ছাড়া কি মেসির বড়ত্ব কমে যাবে? না কখোনোই কমবে না।তবে হ্যা তারপরেও কিছু নিন্দুক আছে যারা নিজেদের এক একটা ফুটবল বুদ্ধা মনে করে,যারা কখোনোই মানতে চাই না যে মেসি গ্রেট।তাদের সাথে আমিও তর্কে যেতে চাই না। কারণ মেসি যে কি জিনিস সেটা তাদের কাছ থেকে জানতে হবে না।মেসির বড়ত্ব বা গ্রেটনেস পুরা ফুটবল বিশ্ব অবলোকিত করছে।এইতো গত ২০১৭ সালে স্প্যানিশ অভিধানে লিওনেল মেসির নাম থেকে উদ্ভব হয়েছে ‘ইনমেসিওনান্তে’ নামের প্রশংসাসূচক শব্দটি। যার অর্থ করলে দাঁড়ায়, “The perfect way to play soccer” বা ফুটবল খেলার সবচেয়ে সঠিক উপায়।হ্যা বিশ্বের সকল গ্রেটরাই মেনে নিছে যে মেসিই হলো ফুটবল খেলার সবথেকে সঠিক উপায়।মেসি তেমন কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারে নি তাইবলে কি সে গ্রেট না।তাহলে এতো এতো গোল,এতো এ্যাসিস্ট,মাঠে এতো সুন্দর প্লেম্যাকিং তার কোনোই মূল্য নাই?গত ৫০০ ম্যাচে গোল করেছে ৫০০ টি আর এ্যাসিস্ট করেছে ২০০ টি, তার মানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট ৭০০ গোলের সাথে সরাসরি জড়িত।এটা কি কিছুই না?এমনি এমনি কি ছয়বার বিশ্বসেরা হইছে?এমনি এমনিই কি ২০১৪ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়?এছাড়াও কোনো ক্লাবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড পেলের যা তিনি করেছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে ৬৪৩ টি,আর এইদিকে ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসি ২০০৫ থেকে আজ পর্যন্ত বার্সার হয়ে করেছে ৬১৮ টি গোল,তার মানে পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে আর মাত্র দরকার ২৫ টি গোল।বর্তমান ফর্ম ধরে রাখতে পারলে এবছরই হয়তো ভেঙে যেতো পেলের রেকর্ডটি।কিন্তু মহামারী করোনা এসে থমকে গেছে সবকিছু সাথেও ফুটবলও।এতোসব কিছু কি মেসির গ্রেট হওয়া থেকে বঞ্চিত করে?আমি পেলে-ম্যারাডোনার যুগে জন্মায় নি আর তাদের খেলাও দেখি নাই,তবে তাদের খেলা আমি ইউটিউবে দেখেছি। কিন্তু তারা যে পর্যায়ে খেলতো আর মেসি-রোনালদোরা যে পর্যায়ে খেলে সেখানে আমি মেসি-রোনালদোর যুগটাকেই প্রাধান্য দিবো।কারণ মেসি-রোনালদোর যুগে যতোটা শৈল্পিক ফুটবল উপভোগ করি ততোটা শৈল্পিক ফুটবল পেলে-ম্যারাডোনার যুগে দেখা যায় নি।এছাড়াও মেসি গ্রেট সেটা আমাদের নিন্দুকেরা না মানলেও ফুটবলের সাবেক গ্রেটরা কিন্তু ঠিকই মেনেছে।তাদের মধ্যে আদ্রিয়ানো গ্যালিয়ানি, এসি মিলান ফুটবল ক্লাবের প্রধান। তিনি বলেন,”আমি পেলে এবং ম্যারাডোনা দুজনকেই খেলতে দেখেছি। তবে মেসি তাদের চেয়ে সেরা।গ্যারি আর্মস্ট্রং। সাবেক এই ইংলিশ ফুটবলার বিভিন্ন সময়ে মিশেল প্লাতিনি, ম্যারাডোনা, ক্রুয়েফ, জর্জ বেস্টদের মতো মহানায়কদের সাথে খেলেছেন। স্বয়ং তিনি মেসিকে তাদের চেয়ে এগিয়ে রাখলেন। তিনি বলেন,
“আমি প্লাতিনি, ম্যারাডোনা, ক্রুয়েফদের মতো ফুটবলারদের বিপক্ষে খেলেছি। আমি জর্জ বেস্টের সাথে একই দলে ফুটবল খেলেছি। অনেক বড় বড় নাম এগুলো। কিন্তু তারা কেউই সেটা করতে সমর্থ হননি যা মেসি করে দেখিয়েছে। ২ বছর আগেও আমি বলেছিলাম, সেরা খেলোয়াড় যার বিপক্ষে আমি খেলেছি তিনি হলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আর সেরা খেলোয়াড় যার সাথে একই দলে আমি খেলেছি তিনি হলেন জর্জ বেস্ট। কিন্তু আমি এখন এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, আমি কখনোই মেসির মতো সেরা খেলোয়াড় দেখিনি। সে নিজের মাত্রায় নিজেই অনন্য।”ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনি মেসির সম্বন্ধে বলেন,”মেসি একটি কৌতুক। আর আমার কাছে সর্বকালের সেরা।”আর্সেনালের কিংবদন্তী কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, এ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কে? তখন তিনি অকপটে উত্তর দেন, লিওনেল মেসি। এর পরের প্রশ্নেই তাকে যখন আবার জিজ্ঞাসা করা হয় সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় কে? তখন তিনি মুচকি হেসে আবার বলেন, মেসি।এমনকি অবিসংবাদিতভাবে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়, ৩ বারের বিশ্বকাপজয়ী শতাব্দীর সেরা ফুটবলার পেলে নিজেও মেসিকে তার সম পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি মেসিকে অনেক পছন্দ করি। সে একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। সত্যি বলতে, আমরা দুজন একই স্তরের খেলোয়াড়।” এছাড়াও বিখ্যাত আরো খেলোয়াড়,কোচ আছে যারা মেসিকে গ্রেট হিসেবে মেনে নিয়েছে অকপটে।তারা তো মেসিকে গ্রেট মানতে আন্তর্জাতিক ট্রফি দেখে নি।তারা দেখেছে ফুটবলিও সৌন্দর্য যেটা লিওনেল মেসির মধ্যে ১০০% আছে।৭১ টিভির সাংবাদিক ফাহিম রহমানের এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন ফুটবল রুপকথার রাজকুমার লিওনেল মেসি।তাইতো বিউটিফুল গেম মাথা নত করে শ্রদ্ধায়,ভালোবাসায়।আমি বলবো গ্রেটদের নিন্দা নয় শ্রদ্ধা করতে হয়।আর ভালোবাসা সে তো বাসতে হয় নিঃশ্বার্থ ভাবে।সবসময় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকবে ফুটবল রাজ্যের রাজকুমার, Greatest of all time লিওনেল মেসি।
রাসেদ হোসাইন,
আইন বিভাগ, ইবি।