ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর
এককালে ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন সেই দেশের প্রধান বিচারকও। ঐ সময়ে রাজার লিখিত আদেশ বা “Written order of the King” লোকমুখে সংক্ষেপ হয়ে যায় Writ. রাজার ব্যস্ততার কারণে এবং বহু বছরের বিবর্তনে আলাদা বিচারব্যবস্থা তৈরী হয়ে Writ শব্দটির ভিন্ন অর্থ দাড়ায় যা বিশেষ ধরণের মামলাকে বোঝায়। এখন Writ কে academic বইপত্রে আমরা Judicial Review বলে আখ্যায়িত করা দেখতে পাই।
মরহুম মাহমুদুল ইসলাম স্যারের বিখ্যাত সাংবিধানিক আইনের বই Constitutional Law of Bangladesh এ Writ এর উপর যে অধ্যায়টি আছে সেটার নামও কিন্তু Judicial Review যদিও এই শব্দটি আমরা দৈনন্দিন জীবনে না বলে Writ শব্দটাই বলে থাকি।
যুক্তরাজ্যে রীটগুলোর নাম এককালে ছিলো ল্যাটিন ভাষার শব্দ থেকে তৈরী।
কারণ আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে ৪৩ সালে রোমান সাম্রাজ্য ইংল্যান্ড জয় করেছিলো। সেই রোমান সাম্রাজ্যের অফিসিয়াল ভাষা ছিলো ল্যাটিন। ফলে ইংরেজিতে বিশেষ করে আইনী ইংরেজিতে ল্যাটিন ভাষার অজস্র শব্দ রয়ে গেছে।
ইংল্যান্ডের রীটগুলোর নাম এই কারণে এতোদিন ল্যাটিন ভাষায় ছিলো। বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রক্রিয়া হিসেবে আইনের ল্যাটিন শব্দগুলো যেমন রীটের নামগুলো তারা বদলে ফেলে জনগণের কাছে সহজবোধ্য সব ইংরেজী নাম দিয়েছে।যেমন Mandamus হয়ে গেছে Mandatory order, certiorari হয়ে গেছে Quashing order; যদিও Habeas Corpus তার আগের সেই ঐতিহ্যবাহী নামেই রয়ে গেছে।
রীট সংক্রান্ত কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত পরিবর্তন আমাদের দেশেও কেস ল এর মাধ্যমে এসেছে।
এদের মধ্যে FAP case এর কথা আমরা অনেকেই শুনেছি, যদিও Liberty Fashions মামলার কথা তুলনামূলকভাবে কম জানাজানি হয়েছে। কিন্তু দুইটাই চরম গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বা Bangladesh Environmental Lawyers Association (BELA) এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মহিউদ্দিন ফারুক সাহেবের করা অতি আলোচিত মামলা Mohiuddin Faruq vs Bangladesh 1997 BLD AD যা FAP – 20 বা Flood Action Plan মামলা নামেও পরিচিত।
এটির মাধ্যমে সারাদেশে বন্যারোধক বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করা বিষয়ক মেগা প্রজেক্ট দেশের পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বলে আদালতের রায়ে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।
এর মাধ্যমেই রীট ভিত্তিক Public Interest Litigation এর বাদী হবার দরজা সাধারণ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত হয় যার ফলে বর্তমানে এতোসব জনস্বার্থ মামলা করা সম্ভব হচ্ছে। এই মামলায় জনস্বার্থে মামলাকারীদের locus standi শিথিল করে আদালতের ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয় – যে নাগরিকের হৃদয়ে দেশ কিংবা সমাজের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি দেখে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে PIL করতে পারবেন।
যদিও কেস ল বা মামলার নজীর প্রায়ই পড়তে গিয়ে চরম একঘেয়ে বা নিরস লাগে, কিন্তু এই মামলার লাইনগুলি পড়লে পরিবেশ রক্ষা এবং জনস্বার্থ বিষয়ে আইনজীবী ও বিচারকদের সেই সময়কার গভীর আবেগ অনুভূতির বিষয়টা বেশ ভালোমতোই অনুভব করা যায়।এই ঐতিহাসিক মামলায় ড. মহিউদ্দিন ফারুক সাহেব হাইকোর্টে locus standi ইস্যুতে হেরে যান।
কিন্তু পরবর্তীতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব এটিএম আফজালের নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের রায়ে জয়লাভ করেন।
এই মামলার পিটিশনার ও বেলার প্রতিষ্ঠাতা এডভোকেট ড. মহিউদ্দিন ফারুক ১৯৯৬ সালে আপীল বিভাগ রায় ঘোষণার একবছর পরেই মাত্র ৪৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৯৭ সালে খুব অল্প বয়সে হঠাৎ করে মারা গেলেও জনস্বার্থ মামলার নতুন দিগন্তের সাহসী পথপ্রদর্শক হিসেবে এই বিজ্ঞ আইনজীবী, গবেষণামূলক লেখক ও সুদক্ষ সংগঠক বাংলাদেশের আইনী ইতিহাসের পাতায় উজ্বল নক্ষত্র হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যে বেঁচে আছেন।
বাংলাদেশের জনস্বার্থ মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে আগ্রহী সবারই এই হৃদয়স্পর্শী মামলাটি পড়া উচিত।
অপরদিকে কিছু মামলা আছে, যেগুলো সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো কেস ল তৈরী না করলেও জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা বিষয়বস্তুর কারণে আকর্ষণীয় ও আলোচিত।
এসবের মধ্যে আবার কিছু মামলা আছে যা দুই দিক থেকেই আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
Liberty Fashions vs Accord Foundation 6 CLR (HCD) (2018) মামলাটি হচ্ছে সেরকম একটি চরম জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা যা মিডিয়ায় আলোড়নের পাশাপাশি যুগান্তকারী কেস ল বা আইনের নজীরও সৃষ্টি করেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত বৃহৎ ভূমিকা পালন করা অজস্র গার্মেন্টসের জন্য এটি যেমন অস্তিত্ব সংক্রান্ত মামলা;
ঠিক তেমনিভাবে -বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে একদম সরাসরি রীট করার বৈপ্লবিক নজীর সৃষ্টিকারী এক যুগান্তকারী মামলাও বটে।
খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে এই মামলা দায়েরের মূল কাহিনীর পিছের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় দুইটা বিরাট বিরাট দুর্ঘটনার ফলে।
প্রথমটা ছিলো তাজরীন গার্মেন্টসের ঘটনা।
ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠে, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর একটি মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডে মোট ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক অসহায় অবস্থায় মারা যান এবং ২০০ জনেরও অধিক গুরুতর আহত হন।
ভয়ানক এই দুর্ঘটনায় ঐ পোশাক কারখানার নয়তলা ভবনের ছয়তলা একেবারে ভস্মীভূত হয়ে যায়।
জীবন্ত আগুনে পুড়ে মারা যান ১০১ জন পোশাকশ্রমিক আর আগুনে পুড়ে মরার পরিবর্তে ভবন থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে মারা যান আরো ১০ জন।
পরে আহত অবস্থায় অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যান আরো কয়েকজন।
এই বিশাল ও দেশ কাঁপানো দুর্ঘটনাটির ফলে ২৭ নভেম্বর ২০১২, মঙ্গলবার, সমগ্র বাংলাদেশে শোক দিবস পালিত হয়।
এই ঘটনার মাত্র পাঁচ মাস পরেই ঘটে এর চাইতেও বহুগুণ বিশাল, ভয়ঙ্কর এবং দুঃস্বপ্নতুল্য এক দুর্ঘটনা ঘটে সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে রেকর্ড করা হয় !
এরকম আরো বিভিন্ন ছোট বড় দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে নাড়াচাড়া পড়ে যায়।
আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় হবার পর এবং পশ্চিমা তথা বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা সামান্য মজুরির বিনিময়ে নির্মম, অমানবিক শোষণ এবং অনিরাপদ পরিস্থিতির শিকার বলে প্রকাশিত হয়।
পোপ ফ্রান্সিস ঢাকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই অবস্থাকে ঘৃণ্য দাসপ্রথার সাথে তুলনা করে শ্রমিকদের নূন্যতম মানবিক নিরাপত্তা দেবার দাবী জানান – (“Pope condemns Dhaka slave labour” – BBC, 1st May 2013)
এসবের ফলশ্রুতিতেই উত্থান ঘটে Accord এবং Alliance নামে দুইটি বিশাল গ্রুপের।
Accord হচ্ছে মূলতঃ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ইউরোপীয় গার্মেন্টস ক্রেতাদের/ ব্যবসায়ীদের ফেডারেশন ও সমিতিগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী সংগঠন যারা বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য কেনার কিংবা না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
রানা প্লাজার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পরিবেশ নিরাপদ করার লক্ষ্যে মূলত ইউরোপীয় এবং তার সঙ্গে আরো কিছু দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো The Accord on Fire and Building Safety in Bangladesh (The Accord) নামের পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করে ১৫ই মে, ২০১৩ তারিখে।
ফলে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে The Bangladesh Accord Foundation (সংক্ষেপে Accord) এর জন্ম হয়।
এটির নিবন্ধন হয় নেদারল্যান্ডসে।
২০টি ইউরোপীয় দেশ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৯০ টি পোশাক কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং ইউনি গ্লোবাল নামক দুইটি আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের ৮টি ট্রেড ইউনিয়ন এই একর্ডের চুক্তির স্বাক্ষরদাতা।
এইটা যেমন ইউরোপের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত, তেমনি করে আমেরিকানদেরও একটা সমতুল্য ধরণের সংগঠন আছে যার নাম Alliance.
বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর রকম বিশাল সব দুর্ঘটনার কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে Accord এবং Alliance বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া এবং কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সুবিধা দেওয়া সংক্রান্ত বেশকিছু শর্ত আরোপ করে।
সেইসব শর্ত বাস্তবায়নের জন্য তারা বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিক সমিতি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলো পরিদর্শন করানো শুরু করে।কেউ এইসব শর্ত পালন না করলে তারা সেখান থেকে কেনাকাটা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
শুধু ঘোষণা দিয়েই তারা বসে থাকে নাই।
ঘোষণা অনুযায়ী তারা পরিদর্শনের পর সত্যি সত্যি শর্ত মানা ও নিরাপদ বলে ঘোষিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে এবং সেগুলো ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা বন্ধ করে দেয়।ফলে অনেকগুলো গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায় এবং অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যায়।পাশাপাশি যেসব গার্মেন্টস শর্ত মেনে নিরাপদ ঘোষিত হয়েছে তাদের ব্যবসা আবার ভালো চলতে থাকে।এটা নিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা অনেকেই ক্ষেপে যায়, এমনকি গার্মেন্টস মালিক সমিতিও এসব নিয়মের বিরুদ্ধে বলা শুরু করে।
তাদের অনেকেই এসব শর্তের বিভিন্ন অংশকে অযৌক্তিক আখ্যা দেয় এবং বিদেশীরা এসব শর্ত আরোপের পর কেনো পণ্য মূল্য আরো বাড়াচ্ছে না এরকম বিভিন্ন ইস্যুতে পুরো বিষয়টাকে বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিতে থাকে।
সরকারের মন্ত্রীরাও এই বিদেশী সংগঠনগুলোর দেশ ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন এবং দাবী করেন যে তাদের কাজ সরকারই করতে সক্ষম।এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয় এবং আদালতে উভয়পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা হয়।
এটা নিয়ে টানাটানির এক পর্যায়ে বিষয়টা আদালতে গড়ায় এবং আদালত তাদেরকে অর্থাৎ বিদেশী সংগঠনগুলোকে দেশ ছাড়ার এবং তাদের কাজ দেশীয় সংগঠন ও সরকারকে বুঝিয়ে দেবার আদেশ দেন।
এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের সংক্ষিপ্তসার এবং পটভূমি জানা না থাকলে সংশ্লিষ্ট মামলা গভীরভাবে বোঝাটা একটু কঠিন।ধরেন একটা গল্প বা উপন্যাস কেউ যখন মাঝখান থেকে পড়ে তখন ঘটনার কোথায় কি হচ্ছে বা কেনো হচ্ছে তা বুঝতে অনেকসময় একটু কষ্ট হয়।
এজন্য কখনো কখনো কোনো মামলা পড়তে গিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন পত্রিকা এবং ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাটা একটু নিয়ে নিলে বিষয়টা বোঝা সহজ এবং গভীর হয়।
অবশ্য সব মামলার সংশ্লিষ্ট ঘটনার আলোচনা অনলাইনে পড়ার এরকম সুবিধা নেই। শুধু আলোচিত ঘটনা পত্রিকায় আসলে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থাকলেই এটা সম্ভব।
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে একটা গার্মেন্টস কোম্পানি যার নাম Liberty Fashions তারা হাইকোর্টে Accord এর বিরুদ্ধে একটা রীট দায়ের করে বসে।খেয়াল করে দেখেন, রীটটার প্রতিপক্ষ আসলে কিন্তু সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান না।যারা রীট সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালোমতোই জানেন যে রীট দায়ের করতে গেলে সেটা সরকার তথা সরকারি বা আধা সরকারী কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে করতে হয়।
যদিও Accord সরকারি বা আধা সরকারী কতৃপক্ষ ছিলোনা তবু একটি রীট সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়।
এই রীটের অন্যতম ইস্যু ছিলো যে প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীট করা যায় কিনা।
যারা সারাজীবন শুধু সরকারের বিরুদ্ধে রীট হতে দেখে এসেছেন, এই ধরণের প্রশ্ন তাদের অনেকের কাছেই অদ্ভূত বা হাস্যকর মনে হতে পারে।
কিন্তু, ব্রিটিশ তথা কমন ল জুরিসডিকশনের দেশগুলোতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীটের অনুমতি দেয়া হয় যদি সেই প্রাইভেট পার্টি পাবলিক নেচারের কাজ করে।
এই বাক্যের “বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে” কথাটা খেয়াল করেন। কারণ এই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রটা বোঝা খুব জরুরী।
যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম R v Panel for Takeovers and Mergers, ex parte Datafin [1987] 1 QB 815, নামের ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী মামলায় সেই দেশের কোর্ট অফ আপিল (Court of Appeal) সিদ্ধান্ত দেয় যে বেসরকারী সংগঠন বিশেষ জন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা সরকারের করার কথা তা করলে তাদের জুডিশিয়াল রিভিউ তথা রীটের আওতায় আনা যাবে।
এই জন্যই এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ডাটাফিন মামলা সেই দেশের কোম্পানি, সাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক আইনের সবচাইতে বেশী উল্লেখ যোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে একদম প্রথম সারিতে পড়ে।
যদিও এর পরের একটি মামলাতে প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীটের ক্ষেত্রকে আরো সীমিত করা হয়, কিন্তু তারপরেও ডাটাফিন মামলার গুরুত্ব এখনো আগের চেয়ে কমেনি।
বেসরকারী কোম্পানি কিভাবে পাবলিক নেচারের কাজ করে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ, প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীটের অনুমতি দেওয়ার অর্থ এই না যে আপনি চাইলেই যদু মধু বা টম ডিক হ্যারি জাতীয় যেকোনো প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে খেয়াল খুশি মত রীট করতে পারবেন।
Accord সংক্রান্ত রীটের রায়টি খুব খেয়াল করে পড়লে দেখা যায়, যে প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছিলো।সেই দায়িত্বটি আসলে সরকারেরই পালন করার কথা ছিলো।পাশাপাশি প্রভাবের দিক থেকে Accord গ্রুপ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি সমগ্র গার্মেন্টস সেক্টর তথা জাতীয় অর্থনীতিকে হেলিয়ে ফেলার বা ধস নামিয়ে ফেলার মতো ক্ষমতাধর।সুতরাং একে একটি রীটে সরকারের মতো সেইম ফুটিং বা ওয়েট দেওয়া মোটেও অযৌক্তিক কিছু না বরং হাইকোর্টের প্রজ্ঞা ও গভীর দূরদর্শিতারই লক্ষণ।
হাইকোর্টের এই রায়টা লিখেছেন বিচারপতি জনাব মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি জনাব আশরাফুল কামাল।
বিচারপতি জনাব মঈনুল ইসলাম চৌধুরী অবসরে গেছেন এই বছরের জানুয়ারী মাসের আট তারিখে। উনি অতীতেও বহু সাহসী এবং অসাধারণ রায় লিখে গেছেন।
এই রীটে ওনার লেখা রায় বাংলাদেশের আইনী ইতিহাসের একটি ল্যান্ডমার্ক এবং মাস্টারপিস।
ওনার আইনী জ্ঞান এবং সৌজন্যমূলক আচরণ ছিলো মুগ্ধ করার মতো। একদম অখ্যাত বা একেবারে জুনিয়র কোনো আইনজীবীও আইন ব্যাখ্যার বিষয়ে গভীরতা এবং পারদর্শিতা দেখালে, তিনি তাকেও বিপুল সমাদর এবং সম্মান প্রদর্শন করে উৎসাহ দিতেন।
একদিন ওনার কোর্টে বসেছিলাম।
ঐ সময় একজন আইনজীবী জনস্বার্থ মামলার শুনানি করতে গেলে তিনি বললেন – এটা আসলে দুইটা রীট হবে। যদিও বিষয়বস্তু কানেকটেড, কিন্তু এর ভেতরে একটা prayer হচ্ছে Quo Warranto আর আরেকটা Mandamus. দুইটা prayer এক রীটের ভেতরে এভাবে একসাথে করা ঠিক হচ্ছে না। আপনি এটা ফেরত নিয়ে নতুন করে দুটো আলাদা আলাদা রীটের পিটিশন দিন।
এরপর তিনি তাকে হাসিমুখে উৎসাহ দিয়ে বললেন -“আপনি এটি করায় ভালো হয়েছে। আপনি দেশের স্বার্থে এই মামলা করেছেন। We appreciate it. আর হাইকোর্টের এসব প্রসিডিউর তো আমি আপনাদের কাছ থেকেই শিখেছি। আমি নিম্ন আদালতের বিচারক ছিলাম। সেখান থেকে এখানে আসার পর এসব আপনাদের মতো বিজ্ঞ আইনজীবীরাই আমাকে শিখিয়েছেন। আমি এখনো আপনাদের কাছ থেকে অনেক নতুন নতুন জিনিস শিখছি। I am still in the process of learning.”
ওনার রায় নিয়ে লিখতে গিয়ে ওনার মৃদু হাসিমাখা মুখের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো।
উনি অবসরে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে সত্যিকার অর্থেই এক গভীর শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই রীটে বেসরকারী বা প্রাইভেট পার্টিকে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের মতো গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার বিষয়টি দেখে যারা ভুরু কুঁচকাচ্ছেন তাদের একটু মনে করিয়ে দেই যে –
আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে একটি বেসরকারী কোম্পানি মাত্র ২০০ জন ইংরেজকে নিয়ে আর ১৮০০ জন ভারতীয় সৈন্য ভাড়া করে, এই দেশের প্রধান সেনাপতি এবং তার সহযোগীদের ক্ষমতায় বসাবার মুলা দেখিয়ে, বাংলার ৫০ হাজার সৈন্যের চোখের সামনে পুরো দেশটাই দখল করে নিয়েছিলো।
সেই বেসরকারী কোম্পানিই এরপর একটা একটা করে দেশ দখল করতে করতে পুরো ভারতবর্ষ দখল করে বসেছিলো।
ব্রিটিশ সরকার নিজেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি ক্ষমতা নেবার আগে পর্যন্ত সেই বেসরকারী কোম্পানির গভর্নিং বডিই পুরো উপমহাদেশ শাসন করতো।
সেই কোম্পানির তৈরী করা নয়টা আইন এখনো এই দেশে পুরোদমে চালু আছে।
যারা একে মান্ধাতার আমলের উদাহরণ বলে অগ্রাহ্য করবেন, তাদের বিনীতভাবে আরেকটু মনে করিয়ে দেই যে –
আধুনিক রাষ্ট্রের এমন সব কাজ এখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান করে, যা আগে কল্পনাও করা যেতনা।
ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার একটি বেসরকারী কোম্পানি লকহিড মার্টিন যুদ্ধ বিমান তৈরী করে।
আমেরিকার আরেক বেসরকারী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, “রেথিওন” (Raytheon) বিশ্বের সবচেয়ে বেশী গাইডেড মিসাইল, রাডার এবং মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম নির্মাণ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকান পিতা ও কানাডিয়ান মায়ের ছেলে যিনি এখন আমেরিকান নাগরিকত্ব নিয়ে বিজ্ঞানী ও ধনকুবের হয়ছেন, সেই ইলোন মাস্ক (Elon Musk) এর নেতৃত্বে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান SpaceX মহাশূন্যে নিজেদের তৈরী করা বিশ্বের প্রথম রিইউসেবল রকেট পাঠাচ্ছে। অথচ এটাকে NASA পর্যন্ত এক আজগুবি ও অবাস্তব পরিকল্পনা বলে একসময় হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও Elon Musk এর কোম্পানি SpaceX এর রকেট দিয়েই উৎক্ষেপিত হয়েছিলো।ইলোন মাস্ক মহাসাগরের তলায় টানেল করে সেখানে সুপার হাই স্পিড ম্যাগনেটিক ট্রেন তৈরীর জন্য গবেষণা করছেনএবং মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী উদ্যোগ নিচ্ছেন,
আর ওনার কোম্পানি টেসলার তেল-গ্যাস বিহীন ইলেকট্রিক গাড়ির মত বিভিন্ন সুপারহিট জিনিসের কথা তো মোটামুটি সবাই জানে, ওগুলো আর না বলি।
অথচ –
সবই হচ্ছে তার পরিচালিত #বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে ! ! ! !
আর যুক্তরাজ্যের সুপার টাইকুন ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন (Richard Branson) সাহেব তো ৭০ সালে ছোট্ট দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরুর পর এখন হাই স্পিড রেল, এয়ারলাইন্স, ক্রুজ শিপ, মোবাইল ফোন, মহাকাশ যাত্রা ও ভ্রমণ, রোবট, ভার্জিন কোলা ও ড্রিঙ্কস, ওষুধ গবেষণা, জিমনেশিয়াম চেইন, হোটেল গ্রুপ, ট্রাভেল গ্রুপ, ভিডিও গেমিং, মিডিয়া, বই প্রকাশনা, রেসিং, চ্যারিটি থেকে শুরু করে অজস্র দানবাকার গ্রুপ সম্বলিত ভার্জিন নামে এক সুপার গ্রুপ খুলে বসে আছেন।
এরা এমন এক অদ্ভুত শক্তিশালী অবস্থানে পৌছে গেছেন, যেখান থেকে সরকারের অনেক কাজই কাজ তারা করে ফেলতে পারেন।
বিজনেস ওয়ার্ল্ডের মুকুটহীন সম্রাট বিল গেটসের মাইক্রোসফট, চীনের অতিশয় ক্যারিশমাটিক টাইকুন জ্যাক মা এর আলীবাবা, এসব দানবাকার কোম্পানি বা গ্রুপগুলোর কথায় আর গেলাম না।
সাইজ, প্রভাব বা ক্ষমতার দিক থেকে এদের গুরুত্ব এবং কাজকর্ম মোটামুটি অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পড়ে।
এরা অনেক ক্ষেত্রেই অনেক দেশের সরকারের সমান তো বটেই বরং সরকারকেও ছাড়িয়ে যায়।
এরা এমন সব কাজও করে যা অনেক দেশে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের করার কথা সেসব দেশের অনেকে কল্পনাও করতে পারবেনা।
সেসব দেশের সরকারের সীমাহীন উদার নীতি এবং আইন কানুনের কারণে এগুলো সম্ভব হয়েছে।
বেসরকারী খাতের অতি মুনাফাখোরীর পাশাপাশি অনেক ভালো দিকও আছে।
শক্তিশালী প্রতিযোগিতা আইন/Competition law / Anti-trust law এবং consumer protection law সেইখানে থাকার ফলে মনোপলি বা সিন্ডিকেট তৈরী করে পাবলিকের মাথায় ইচ্ছামতো কাঁঠাল ভাঙ্গার কিংবা পাবলিকের পকেটে যখন তখন অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির ছুরি চালানোর সুযোগ আসলেই কম।
“সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল” কিংবা, যা সরকারের তা সবার, আর যা সবার তা তো কারোরই না – এই দায়িত্বহীন মানসিকতার কারণে সরকারি খাত অনেক সময়ই উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং আর্থিক লাভের ক্ষেত্রে পিছে পড়ে থাকে।
এজন্যই প্রাইভেটাইজেশন অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ফলাফল দেয়।
সরকারী এবং বেসরকারী খাতের কাজের সীমানা যেখানে মিলেমিশে একাকার সেখানে রীটের পরিধি বা আওতা পুননির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা সম্ভব না।সাভারের জিরানি এলাকার বেশ বড় একটা গার্মেন্টস Liberty Fashions, ইউরোপে নিবন্ধিত সংগঠন Accord Foundation এর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে একটা রীট দায়ের করে Accord এর নেওয়া গার্মেন্টস নজরদারির ক্ষেত্রে বেশকিছু ত্রুটি তুলে ধরে।Liberty Fashions আদালতকে দেখায় যে Accord তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব দিয়েছিল ব্রিটিশ কোম্পানি Tesco কে।
শুধু তাই না, Tesco আবার সেই দায়িত্ব দিয়েছিল Medway Consulting Services (MCS) কে।মানে delegated power কে আবারো delegate করা হয়েছিলো।
Liberty Fashions মেরামতির পর Accord কে তাদের করা Accord agreement অনুযায়ী সরাসরি পরিদর্শন করার অনুরোধ করলে Accord রাজি হয়নি এই বলে যে Tesco এর দেওয়া রিপোর্টটা খারাপ। বহু চেষ্টা তদবির করেও পরিদর্শনের জন্য Accord কে রাজি করাতে না পেরে তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়।
Liberty Fashions তাদের রীটে Accord agreement এর clause 10 উল্লেখ করে বলে যে এটা সরাসরি Accord এর পরিদর্শন করার কথা।ফলে হাইকোর্ট কাগজপত্র দেখে ও যুক্তি তর্ক শুনানির পর ২০১৫ সালে Accord কে Liberty Fashions পরিদর্শন করার জন্য আদেশ দেন।
Accord এর পরেও পরিদর্শন না করে মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়।অবশেষে Accord দুই বছর পর এসে ২০১৭ সালে পরিদর্শন করে Liberty Fashions এর তিনটি ভবনের একটিকে ঝুঁকি পূর্ণ বলে মত দেয়।
এরপর Liberty Fashions নতুন করে BGMEA কে দিয়ে পরিদর্শন করালে তারা একে নিরাপদ বলে রিপোর্ট করে। এছাড়া বুয়েট থেকে পরিদর্শনের পর বলা হয় যে ২য় ভবনটি সাবধানে ব্যবহার করা যাবে। এর পাশাপাশি Liberty সরকারের কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে দিয়েও পরিদর্শন করিয়ে তাদের কারখানা নিরাপদ মর্মে রিপোর্ট পায়।কিন্তু ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে Accord এর রিপোর্ট থাকার ফলে পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা বন্ধ থেকে সকল বিদেশী ক্রেতা হারায় Liberty Fashions
ফলে তাদের বাৎসরিক ৩৫০ কোটি টাকার রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় এবং ৫০০০ শ্রমিক বছরের পর বছর বসে থাকার কারণে বেকার হয়ে চাকরি হারায়।
একইভাবে বাংলাদেশের আরো বেশকিছু গার্মেন্টস কারখানা Accord এর কাছ থেকে clearance না পাবার কারণে বিদেশী ক্রেতা হারিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৭ সালে Liberty Fashions, Accord Foundation এর বিরুদ্ধে সরাসরি তথা Accord কে ১ নং প্রতিপক্ষ করে আরো একটি রীট দায়ের করে। সেখানে তারা Accord এর অনুমোদিত নিরাপদ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করানোর আদেশ চায় এবং এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ আদালতে দাখিল করে।
আদালত সবকিছু দেখেশুনে Accord এর মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করলেও Liberty Fashions এর বিষয়ে তাদের পরিদর্শন ব্যবস্থার গাফিলতির সমালোচনা করেন এবং Accord Foundation অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় Liberty Fashions এর নাম অন্তর্ভুক্ত করে তা অবিলম্বে Accord এর ওয়েবসাইটে যুক্ত করার আদেশ দেন।
এতো বিশাল এবং সুদীর্ঘ একটা মামলার কাহিনী এবং পটভূমি সহজবোধ্য বা আকর্ষণীয় করে লেখা দুরূহ বিষয়।
কেউ পুরো ঘটনাটি বুঝতে চাইলে এসব মামলার নজীরগুলো দয়া করে পুরোপুরি পড়ে নেবেন। এই সংক্রান্ত Source test এবং Functionality test এবং সেগুলোর প্রাসঙ্গিক নজির ভিত্তিক উদাহরণ বিশদ আলোচনা করতে গেলে এই লেখা আরো বড় হয়ে যাবে। সুতরাং সেই আলোচনা আরেক দিনের জন্য তোলা থাকুক।আমি কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।সবার সব যুক্তি এবং আদালতের সব আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে পুরোপুরি বলা সম্ভব না।
আইনি আলোচনার পাশাপাশি এই পুরো ঘটনাটা থেকে আমার মনে হয়েছে Accord জাতীয় সংগঠনের ভুল বা গাফিলতি আছে কিন্তু তারা যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলোও মানবেতর অবস্থায় থাকা শ্রমিকদের জন্য অনেকক্ষেত্রেই দরকার ছিলো যদিও এরমধ্যে বাড়াবাড়ি থাকা অসম্ভব না।
আর দেশীয় গার্মেন্টস বন্ধ হবার বা মন্দা অবস্থার দায় এদের উপর এককভাবে চাপানোও ঠিক হবেনা।কারণ এসবের পিছে যে আরো বেশকিছু বড় বড় কারণ আছে সেগুলো রুবানা হক এবং বিজিএমইএর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিজেরাই বলেছেন।
যদিও এসব আলোচনা এই লেখার জন্য খুব বেশী জরুরী না কারণ লেখাটি আইন বিষয়ক, তবুও প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এই সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।এই মামলার রায়ে সৃষ্ট কেস ল এর গুরুত্ব এই মুহূর্তে পুরোপুরি অনুধাবন করা না গেলেও প্রাইভেট পার্টির বিরুদ্ধে রীটের সুযোগ সৃষ্টি হওয়াটা সাধারণ প্রতিকার প্রার্থীদের জন্য একটি বিজয় হিসেবে ভবিষ্যতে আখ্যায়িত হবে।
মহান জাপানী স্ট্র্যাটেজিস্ট Toyotomi Hideyoshi এজন্যই বলেছিলেন- “Small triumphs have the seeds of great victory in them.”
লেখা : ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর,
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ।
মতামত সম্পূর্ণই ব্যাক্তিগত পত্রিকা এ বিষয়ে কোন দায় নিবে না।