মোঃ নজরুল ইসলাম
ক্লাস সেভেনে “সিরাজুদ্দৌলা” নাটক পাঠ্য ছিলো। পরীক্ষায় এসেছে “মীর জাফরের চরিত্র অংকন কর”। আমাদের পাঠ্য, রেপিড রিডারে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ও খারাপ দিক ছাড়া কিছুই ছিলো না। মীর জাফরের ভালো কিছু দিক থাকতে পারে এ ধারণা আমরা কোনদিন করিওনি। আমার সহপাঠীরাও পরীক্ষায় মীর জাফরকে একেবারে ধূয়ে দিয়েছিলো। আমি বড় ভাইয়ের (যিনি প্রফেসর ছিলেন) একটি বইতে মীর জাফরের ভালো দিক নিয়ে একটা ঘটনা পড়েছিলাম। আমি ঐটা পরীক্ষায় লিখে দিয়েছিলাম। ঘটনাটা এরকম- মীর জাফরের সহযোগীরা মীর জাফর কে বুদ্ধি দিয়েছে যে সিরাজ কে যখন ধরে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তখন সবাই দাড়িয়ে থুথু দিবে। মীর জাফর সে সময় বলেছিলো, “অতটা কেনো?”। ঐ প্রশ্নে স্যার আমাকে বেশি নাম্বার দিয়েছিলেন। তার মানে মীর জাফরকেও একটুখানি “”ভালা পাইছি”।
করোনা ভাইরাসটি আমাদের সব শেষ করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। কত মায়ের বুক খালি করছে। কত সন্তান প্রিয় বাবা মাকে হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের জীবন জীবিকাকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে। এ মহামারি আমাদের জন্য শুধুই অভিশাপ। তবু একটুখানি তারেও “ভালা পাইছি”। এর কারণে দীর্ঘ দিন আমরা অনেকে পরিবারের সাথে থাকতে পেরেছি । এখন তাতে ছেদ পড়েছে। সাধারণ ছুটি শেষ। সবাইকে কর্মস্থলে ছুটতে হবেে। ছেড়ে যেতে হবে প্রিয় পরিবারকে। একসাথে আমরা কখনোই এতদিন পরিবারের সাথে ছিলাম না। একটা মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েছি। একসাথে ইফতার, সাহরি উপভোগ করেছি। শত আতঙ্কের মধ্যেও হাসি, আনন্দ, বেদনা ভাগাভাগি করেছি। পরিবারে বাবা,মা, স্ত্রী, সন্তানের মধ্যে রচিত হয়েছে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ।
মায়া দু অক্ষরের খুব ক্ষুদ্র শব্দ হলেও এটি পুরো ভূবণকে অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে ফেলে। যে এ অক্ষরগুলোর মায়ায় পড়েছে সে জানে এর মূল্য কতটুকু। যে ছেড়ে যায় সে জানে দুঃখ কতটুকু। এই যে অনুভূতি, এটি দেহ ও মনের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। তারপরেও যেতে হবে। পরিবারের সুখের জন্য হয়তো বের হতে হবে সবাইকে। সুখ আসলে বলা যায় না। একটু সমৃদ্ধি বা স্বচ্ছলতার খোঁজে ছুটবে সবাই। সুখ তো আপনার প্রিয় সন্তান, জনক জননী আর প্রিয়তমাতে। বাইরে আপনি অন্য সবকিছু আপনার চারপাশে পেলেও ঐ মায়াকে পাবেন না।
হুমায়ুন আহমেদের কথা- “ঘর খুলিয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই হাতভর্তি চাঁন্দের আলো ধরতে গেলে নাই।” তাইতো একটুখানি মন খারাপ হয়েই আছে। তবে বাস্তবতার নিরিখে, দেশের প্রয়োজনে সবাইকে সাড়া দিতেই হবে। এদেশটি তো আমাদেরই। একে দাঁড় করার দায়িত্ব আমার, আপনার সকলের।
“করোনা” আমাদের জন্যই পুরোই অভিশাপ। এ কয়দিন ঘরে থাকতে পেরেছি বলে আলাদা একটু দ্যোতনা সৃষ্টি করলেও এর চরিত্রকে কোনরূপ অলঙ্কৃত করবো না। কলঙ্কিতই থাকবে সে। তবু মন তো। মানানো কঠিন। যাঁরা পরিবার ছেড়ে দূরে যাবেন তাঁরা অপরিসীম স্নেহ, মায়া মমতায় ঘেরা প্রিয় ঘরখানির পরশকে মিস করবেন নিশ্চিত । হতে পারে সেটা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো করেই- “কতোখানি ডাক শুনে ছুটে যায় এ মুগ্ধ মানুষের অভ্যন্তরে কতোখানি উৎসবে সব পথ ভেঙে একখানা পথ শুধু একখানা ঘর জেগে উঠে মর্মের মর্মস্থলে।।”
মোঃ নজরুল ইসলাম, লেখক ও কথা সাহিত্যিক।