মোঃ নজরুল ইসলাম
ছোট বেলার এ কৌতুকটা সবার জানা, তারপরেও বলি। ভদ্রলোক সৌদিতে খুরমা খেজুর বিক্রি করে দেশে এসে বাড়িতে বসে বলছে তিনি চীন,জাপান, ইউরোপ ম্যারিকা সব দেশ ভ্রমন করে এসেছেন। শুনে কলেজ পড়ুয়া স্মার্ট এক ছেলে বললো “আংকল, আপনার তো জিওগ্রাফি সম্পর্কে অনেক ধারণা”। ভদ্রলোক বললেন, “ওখানেও আমি দুই বছর ছিলাম”।
এসব বিষয় বলে আমরা অনেক মজা পেতাম। কিন্তু কেন জানি বিষয়গুলো একটু ভিন্নভাবে আবার ফিরে এসেছে । হতাশার বিষয় হচ্ছে এগুলো ঘটছে আমাদের সোনালী ভবিষ্যৎ, আমাদের সন্তান যারা গতকালও অনেকে সোনালী এ প্লাস পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও।
“অপারেশন সার্চলাইট মানে অপারেশন করার সময় যে লাইট দেয়া হয়, বিজয় দিবস ২৬ শে ডিসেম্বর, ভুটানের রাজধানী নেপচুন, আমার একটা ছাগল ছিলো- আই ওয়াজ এ গোট সর্বোপরি আই অ্যাম জি,পি এ ফাইভ”
সাধারণত প্রত্যেকবার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর বড় বড় শিক্ষা গবেষক, পন্ডিত ব্যাক্তিগন বলেন যে, পাশের হার বেড়েছে, শিক্ষার গুনগত কোন পরিবর্তন হয়নি ।
এসব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে ইত্যাদি ইত্যাদি এরপর যথারীতি চা খেতে খেতে আলোচ্যসুচী ভুলে যাওয়া এবং আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা। তিনারা ভাবতে থাকুক। আপনি এক কাজ করুন। বিশেষ করে বাবাদের বলছি, যাদের সন্তান ভালো পাশ করেছে। সন্তানের গোল্ডেন প্লাস নিয়ে খুশিতে বুঁদ হয়ে থাকার সুযোগ নেই। সন্তানের সাথে কথা বলুন। সময় দিন। তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করুন। কিভাবে? এসময়ে তাকে পত্রিকা পড়তে দিন, পাঠ্য বই ব্যাতীত ভালো ভালো বই কিনে দিন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ,ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি উপর বই সংগ্রহ করে দিন।
ইংরেজিতে ভালো করার জন্য কোয়ালিটি গ্রামার বইগুলো কিনে দিয়ে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিন। ধর্মীয়ভাবে সমৃদ্ধ করুন। সহীহ, সঠিক কোরান হাদিসের ব্যাখ্যাসহ কিতাবাদী পড়ার ব্যাবস্থা করে দিন। অন্যরা তাদের ধর্মগ্রন্থ সমুহ পড়বে। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় অনুশাসনই আপনার সন্তানকে ট্র্যাকে টিকিয়ে রাখবে। বিশ্বের ভালো ম্যগাজিনগুলো তাকে পড়তে দিন। তাকে নিয়ে ঐতিহাসিক স্থাপনা ভিজিট করুন ( এখন নয়)। এসব বিষয় নিয়ে দুকলম বাংলা, ইংরেজি লিখতে দিন। আপনিই তদারকি করুন। হুমায়ুন আহমেদ একটা কথা আমার প্রায়শই মনে পড়ে- ” বাবাই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
যে সন্তান গোটা জীবন বাবার সাথে বসে রাতের খাবার খায় সে কখনো নীতি বিচ্যুত হতে পারে না।” যাঁদের সন্তান খারাপ করছে এবার তাঁদের নিয়ে বলি। একটা বিষয় নিয়ে বারবার “কাইন্দেন” না। যা হওয়ার হয়েছে। এক কৌতুকাভিনেতা একটি প্রচন্ড হাসির কৌতুক বলার পর হলভর্তি দর্শকেরা অনেক হাসলো। তিনি একই কৌতুক আবার বললেন। অল্প কয়েকজন হাসলো।
কৌতুক টা আবার বললে কেউ আর হাসে নি। একই বিষয় নিয়ে বারবার না হাসলে একই বিষয় বারবার কাঁদারও দরকার নেই। সন্তান কে আবার রেডি করুন। আর যাঁদের সন্তান ভালো করেছে তাঁরা উপরের আমলগুলো করলে আপনার সন্তান সত্যিকার অর্থে গোল্ডেন হবে; আই ওয়াজ এ গোট হবে না( বলবেনা) নিশ্চিত । তবে অনেক লেবু চিপে ফেলে বেশি।
সন্তান কে ওভারনাইট আইনস্টাইন বানাতে চায়। এটা করা যাবে না। এমনও শুনেছি ছেলেকে বলেছে এসময় “ভোকাবুলারি ডেভেলপ করার জন্য পুরো ডিকশিনারির মুখস্থ করে ফেলবি” । এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমনটা হয়েছিল – পোলা ডিকশনারি ঘাটতে -ঘাটতে, পড়তে -পড়তে ডিকশিনারির বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে।
ডিকশিনারিতে আছে Garlic – রসুন। পোলা এ পর্যন্ত আসার আগেই ক্যামনে জানি রসুনের” র” এর বিন্দুটা ঘষে বা ছিড়ে গিয়েছে। একদিন তাদের বাসায় মেহমান আসলে আইনস্টাইন বনে যাওয়া পোলাই কইলো” আংকল, গার্লিক প্লিজ।
মোঃ নজরুল ইসলাম, লেখক ও কথা সাহিত্যিক।