মোবাইল কোর্ট নিয়ে বিতর্ক বহু পুরাতন। এর নানা কাজ নানা সময়ে বিশিষ্টজন কতৃক সমালোচিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ভ্রাম্যমান আদালত রবিউল ইসলাম রিপন নামে একজন আইনজীবীর ৭ দিনের সাজা দেয়। যে ঘটনাও সারা বাংলাদেশের বিশিষ্টজন কতৃক সমালোচিত হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের এমন কাজে ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া সংক্ষুব্দ হয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে রিট করেন। এছাড়াও তিনি E-Judiciary & E-Court Room স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে রিট, বাংলাদেশের সকল আদালত প্রাঙ্গনে টাউট, ভুয়া আইনজীবী, দালাল ও মুহুরীর দৈরাত্ত্য বন্ধ চেয়ে রিট, স্বাধীন Prosecution Service Commission গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট, সারা বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিদ নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে রিটসহ Deputy Attorney & Assistant attorney নিয়োগের গ্যাজেট চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছেন ও প্রতিকার পেয়েছেন। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি তার দ্বায়িত্ব আর সামাজিক ন্যায় বোধের জায়গায় সরব বলে নাগরিক দ্বায়িত্ব হিসেবেও সমাজের সামাজিক মর্যাদা আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছেন।
বর্তমানে ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে একজন আইনজীবী হিসেবে তার দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার পেশাগত জীবনে যেমন সৎ আর উদার তেমনি সামাজিক ও নাগরিক দ্বায়িত্বের জায়গাতেও । মানবাধিকার বিষয়েও তিনি সক্রিয়। তার সাথে এপিএসনিউজ২৪.কম এর একটি কথোপকথনের সুযোগ হয়। আইন ও সমাজসহ নানা বিষয় নিয়ে এপিএসনিউজ২৪.কম এর সাথে বিশেষ এ কথোপকথনে আইন ও সমাজ সমন্ধে তার উন্নত চিন্তা ও কাজের প্রকাশ ঘটে। বিশেষ এই কথোপকথনে এপিএসনিউজ২৪.কম এর পক্ষে ছিলেন নূরুন্নবী সবুজ।
এপিএস নিউজ২৪ঃ উকালতিকে অনেকে ব্যবসা বলে থাকেন। এটি আসলে পেশা না ব্যবসা?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ উকালতিকে কখনোই ব্যবসা বলা যায় না। ব্যবসার সাথে মূলত মুনাফার সম্পর্ক। এখানে পণ্য বিক্রি করে তার থেকে লাভ করা হয়। আইন নিশ্চয়ই কোন পণ্য নয় আর এর সাথে মুনাফার কোন সম্পর্ক নাই। উকালতির মাধ্যমে নাগরিক অধিকারসহ সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়। উকালতি একটি সেবার নাম ও এটি একটি সম্মানজনক পেশা। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে কিছু রায়েও উকালতিকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এটি পেশা না ব্যবসা সে বিষয়ে দ্বিমত থাকা উচিত না।
এপিএস নিউজ২৪ঃ একজন আইনজীবী হিসেবে আইন যারা তৈরী করে ,যাদের জন্য তৈরী হয় ও যাদের মাধ্যমে তা প্রয়োগ হয় তার মাঝে কোন সম্বনয় বা সম্বনয়হীনতা আছে কি না?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃসংসদে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সাধারনত জনস্বার্থের কথা মাথাই রেখে আইন তৈরী করে। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের কাজও জনগণের জন্য আইন তৈরী করা। কিন্তু সংসদে যে সব আইন তৈরী হয় তার খসড়াগুলো মূলত তৈরী করা হয় আমলা দ্বারা যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন নি। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও অনেক ক্ষেত্রে আইন সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় আইনের মহৎ উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হয় না।
সমাজের নতুন পরিস্থিতিতে কোন আইন দরকার সে বিষয়েও আমাদের খুব বেশী গবেষণা বা জরিপ থাকে না তাই অনেক ক্ষেত্রে আইন তৈরী হবার পর কিছু দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। যে আইন তৈরী হচেছ তা সবার জন্য প্রয়োগ করা যাবে কিনা সে বিষয়েও আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ আছে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। তাই আইনগুলো আরো বস্তুনিষ্ট ও কার্যকরী করতে আইন তৈরীর সময় আইনজ্ঞ ও যাদের জন্য আইন তৈরী করা হচ্ছে তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
এপিএস নিউজ২৪ঃফেীজদারী মামলায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ এটি ন্যায় বিচারে বাধা নাকি ন্যায় বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করে?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ মূলত বাদীপক্ষের উপর মামলা প্রমাণের দায় ভার বর্তায়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে বিবাদীর উপরও প্রমাণের দায়ভার পড়ে। আইনের কাজ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা ও প্রকৃত অপরাধীকে সাজা দেওয়া। আইনের একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে ‘ দশজন অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরাপধী যেন শাস্থি না পায়’। ফেীজদারী মামলায় সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ আইনের বিধান। আর এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে যে অপরাধী তাকে শাস্তির বিধানটি নিশ্চিত করা হয় । এই বিধানটি যেহেতু আইনের বিধান ও সঠিক অপরাধী প্রমাণ করে শাস্তি দেবার বিধান তাই এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা বলে আমি মনে করি না।
এপিএস নিউজ২৪ঃ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ধারণার মত যদি সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি বিভাগে গঠন করার কথা বলা হয় তাহলে আপনার মন্তব্য কি হবে?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃবাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধুমাত্র ঢাকাতেই সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে। আর তাই সাংবিধানিকভাবে আমাদের এমন কাজ করার কোন সুযোগ নেই । যদি সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি বিভাগে শাখা গঠনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে আগে সংবিধানের বিধান পরিবর্তন করতে হবে । সংবিধান পরিবর্তন হলেই এর ভিত্তি তৈরী হবে তার আগে নয়।
তবে রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রয়োজন অনুসারে সার্কিট বেঞ্চ গঠন করতে পারে কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কার্যালয় গঠন করার কোন সাংবিধানিক বৈধতা নেই। সময়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে গঠন করার অদেী কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা জরুরী। আর এ গবেষণার পর প্রয়োজনে এ আলোচনা আসতে পারে।
এপিএস নিউজ২৪ঃ মামলা জট কমানোর জন্য আপনার তাৎক্ষণিক পরামর্শ কি হবে?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ
১. বিচার বিভাগের সাথে সম্পর্কিত আইনজীবীসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. কিছু কিছু আইন হালনাগাদ করা জরুরী। যেমন Negotiable Instrument Act হালনাগাদ করা বর্তমান সময়ে খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।
৩. দক্ষ এবং সৎ বিচারক নিয়োগ করে তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. গণমাধ্যমগুলো আইন না মানলে বা আইন সমন্ধে সচেতনতা তৈরী করতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে সামাজিক প্রচারাভিযানও চালাতে হবে।
৫. বিচারকদের Case Management & Court Management সমন্ধে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
৬. উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে তা যথাযথ বাস্তবায়ন করে সৎ , মেধাবী ও দক্ষ আইনজীবীকে বিচারক নিয়োগ করতে হবে।
এপিএস নিউজ২৪ঃ আপনি বলছিলেন কিছু আইন পরিবর্তনের দরকার আছে। যে আইনগুলো পরিবর্তন দরকার তার দ্বারা মেীলিক অধিকার লঙ্ঘনের কোন সম্ভাবনা আছে কি না ?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ মেীলিক অধিকার লঙ্ঘন হয় বিষয়টি এমন না। ব্রিটিশ আমলের আইন হলেও তার সুদুরপ্রসারী চিন্তা থেকে তৈরী হয়েছে বলে এখনো কিছু কিছু আইন খুবই কার্যকর । তবে কিছু কিছু বিধান সংশোধন করলে তা আরো গতিশীল হবে। যেমন, দন্ডবিধি, দেওয়ানী কার্যবিধি, ফেীজদারী কার্যবিধি, Negotiable Instrument Act প্রভৃতি আইনের কিছু বিধানের পরিবর্তন করা জরুরী।
Negotiable Instrument Act -এর অধীনে কিছু বিধান যুগোপযোগী করা খুবই প্রয়োজন। বাদী বিবাদীর সাথে সত্যিকার অর্থে কোন আর্থিক লেনদেন ছিলো কিনা এ জাতীয় বিষয়গুলোও এখানে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। যেমন, আমার এক ক্লায়েন্ট ছিলো রিক্সা চালক। একব্যক্তি তার কাছ থেকে ফাকা চেক নিয়ে পরবর্তীতে সেখানে ১ কোটি টাকা বসিয়ে মামলা করে। অথচ এরকম আজগুবি ও অসংগতিপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিবাদীর প্রতিকার পাবার কোন সুযোগ নাই বললেই চলে। আদালত এমন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতো ও আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকতো থাহলে নিরীহ মানুষরা হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা পেত।
এপিএস নিউজ২৪ঃ যে আইনগুলোর বিধান পরিবর্তন করা দরকার তার পরিবর্তন চেয়ে রিট করার জন্য কোন locus standi তৈরী হয় কিনা?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ যদি আদালতে প্রমাণ করা যায় আইন পরিবর্তনের উপযোগিতা আছে তাহলে locus standi তৈরী হতে পারে। যুগের পরিবর্তনে তাল মিলানোর জন্য বা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আইন সংশোধন করা জরুরী এই যুক্তিতে locus standi আছে তা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যেতে পারে। যদি এমন উপযোগীতা প্রমাণ করা যায় তাহলে তার পরিপ্রেক্ষিতে রিট দায়ের করা যাবে। এছাড়াও কেউ সংক্ষুব্দ হয়ে আদালতে যেতেই পারে।
এপিএস নিউজ২৪ঃ সাম্প্রতিক সময়ে আপনি ভ্রাম্যমান আদালত কতৃক একজন আইনজীবীর সাজা হওয়ায় সংক্ষুব্ধ হয়ে রিট করেছেন। এই রিট সমন্ধে কিছু জানতে চাই?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ রিটের শুনানি যেহেতু এখনো শুরু হয় নি তাই সেটি সমন্ধে এখন না বলাই ভালো। ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদও হয়েছে । এর সমন্ধে কোন সিদ্ধান্ত বা অর্ডার না আসা পর্যন্ত আপাতত কোন মন্তব্য নয়।
এপিএস নিউজ২৪ঃ আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবী দীর্ঘদিনের। বর্তমানেও বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন। আইনজীবী সুরক্ষা আইনের কি প্রয়োজনীয়তা আছে?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন অতীব প্রয়োজন ও সময়ের দাবী। একজন আইনজীবী আদালতের অফিসার। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীর ভূমিকা অস্বিকার করার মত না। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আদালতে লড়তে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিপক্ষ দ্বারা এদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। অনেক আইনজীবী আক্রান্ত হয়েছে ও হচ্ছে এমনকি আইনজীবী হত্যা করার মত ঘটনাও আমাদের দেশে ঘটেছে। এমন অবস্থায় যারা ন্যায় বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তাদের সুরক্ষার জন্য জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর আইন তৈরী করা উচিত।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী যদি আইনজীবী হিসেবে আচরণ লঙ্ঘন করে তাহলে তাহলে তার শাস্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু কোন আইনজীবী যদি কারো দ্বারা আক্রান্ত হোন বা সে সম্ভাবনা থাকে তাহলে কি করা হবে সে সম্পর্কে কোন বিধি বিধান রাখে নি। আইনজীবীগণ নিজেরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তাদের উপরও ন্যায় করা দরকার।
এপিএস নিউজ২৪ঃ বর্তমান সময়ে অনেকেই বার সনদের পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা তুলে দেবার বিষয়ে বলে থাকে বিশেষ করে রিটেন ও ভাইভা। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ এটি সত্যি বলতে একটি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক। বর্তমানে আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য যে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তার মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে প্রবেশাধিকার পাবার আগে জানা বুঝার স্থর যাচাই করা হয়। আইন পেশার মত সম্মানিত ও জ্ঞান নির্ভর পেশার জন্য এ পদ্ধতির দরকার আছে। পরীক্ষা ছাড়াই বা নামে মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে যদি আইনজীবী নিয়োগ দেয় হয় তাহলে শুধু আইনজীবীর সংখ্যা বাড়বে কিন্তু সেবার মান বাড়বে না।
ভালো আইনজীবী হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ও মেধার পরিচয় দিতে হবে । পেশাগত যোগ্যতা, দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রম করে আইন পেশায় কেউ সফল হয়নি এমন নজির নেই। কিন্তু দুংখজন বিষয় হলো অনেকেই আইন পেশায় অল্প সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আর গাড়ি বাড়ির স্বপ্ন নিয়ে আসে ও আইন পেশার সম্মান নষ্ট করে।আর এমন মানসিকতা নিয়ে যারা আইন পেশায আসে তার অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় বা ভালো আইনজীবী হবার সুযোগ পায় না।আবার অনেকে দালাল বা মুহুরী নিয়োগের মাধ্যেমে আইন পেশায় উন্নতি করতে চায় যেটিই তার ক্যারিয়ারের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আইন পেশার সম্মান নষ্ট করে।
মানসম্মত ও যোগ্যদের এই পেশায় আসার আনার জন্য বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক আছে। যে এই পেশায় যে আসে তাকে ধরেই নিতে হবে ৫-৭ বছর কোন ইনকাম হবে না। এমন কঠোর মানসিকতা নিয়ে না কেউ আসলে সে উন্নতি করতে পারবে না। আইনজীবী হিসেবে প্রবেশ করার আগে ও পরে এরকম সহনশীল ও ধৈর্যশীল হবার যে শিক্ষা তা পরবর্তী পেশা জীবনে কাজে লাগে। তাই আদালতের ও বিচারের মান বজায় রাখার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির দরকার আছে।
সঠিক সময়ে আইনজীবী তালিকভূক্তির পরীক্ষা হয় না বলে অনেকের ক্ষোভ আছে। সঠিক সময়ে পরীক্ষা হওয়া উচিত। অবশ্য সঠিক সময়ে পরীক্ষা নেবার জন্য বার কাউন্সিলের বাধ্যবাধকতা আছে। এই বিষয়ে একটি রিট করা হয়েছে। আর তাই বার সনদের জন্য পরীক্ষা বাদ না দিয়ে বরং সঠিক সময়ে পরীক্ষা নেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এপিএস নিউজ২৪ঃ টাউট ও ভুয়া আইনজীবীর সনাক্ত ও নির্মুল করতে আপনার কাজ করছেন বলে জানি। আপনাদের কার্যক্রম সমন্ধে জানতে চাই।
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ আইন পেশা আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে স্বিকৃত একটি সম্মানজনক পেশা। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু টাউট, ভুয়া আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী বা মুহুরী নিরীহ মানুষদের প্রতিকার দেবার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় যা আইন, আইনজীবী ও আদালতে সম্মান নষ্ট করে। তাই এদের থামানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ” টাউট, দালাল, দূর্নীতি নির্মূল আন্দোলন” নামে আরো কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তায় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নিয়মিত ভাবে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির সহায়তায় আমাদের সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। যারা নানা ভাবে আইন পেশার সম্মান নষ্ট করছে তাদের নির্মূল করতে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় ” টাউট, দালাল, দূর্নীতি নির্মূল আন্দোলন” কাজ করতে চায় ও কাজ করে যাচ্ছে।
এখানে বলে রাখা ভালো গত মার্চ মাসে ( ২০২০ ইং) বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি যেখানে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি আদালত ও আইনজীবী সমিতি থেকে ভুয়া আইনজীবী, টাউট, দালাল, আইনজীবী সহকারী ও মুহুরীদের দেীরাত্ত বন্ধে কার্যকর নির্দেশনা চাই। মহামান্য হাইকোর্ট শুনানি শেষে Rule Issue করেন ও ৯০ দিনের মধ্যে সারা বাংলাদেশ থেকে টাউট, দালাল, ভুয়া আইনজীবী সনাক্ত ও এ সক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সংশিষ্ট কোর্টে Affidavit আকারে জমা দেবার নির্দেশ দেন।
এপিএস নিউজ২৪ঃ যারা নতুন আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করতে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন?
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ আমাদের আইন পেশার মান মর্যাদা রক্ষার জন্য যারা আইন পেশায় আছেন তাদের আরো বেশী সচেতন হতে হবে। যারা এই পেশায় নতুন আসবেন তাদেরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। ভালো আইনজীবী হতে হলে অনেক পড়াশুনা ও জানাশুনা থাকতে হয়। শুধু টাকার জন্য সব কেস হাতে নিলে কখনোই লক্ষ পূরণ করা যাবে না। একজন আইনজীবীকে সকল রকমের জ্ঞানের সাথে পরিচয় রাখতে হয়। বিশেষ করে ভালো আইনজীবী হতে হলে অবশ্যই ইংরেজিতে দখল থাকতে হবে। ইংরেজিতে দখল থাকলে কেস ভিত্তিক পড়াশুনা করা সহজ হয়। আইনজীবীদের রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়াই ভালো । ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন আইনজীবীদের একটি মহৎগুন। তাই সকল ক্লায়েন্টের সাথে সহজ ও সাবলীল ব্যবহার করতে হবে।।
আইন পেশায় ধৈর্য ধারণ করতে হয়, গুণ থাকলে সফলতা আসবেই। আমরা একটি উদাহরণ দিতে পারি যে জিনিস দ্রুত গরম হয় তা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় আর যে জিনিস ধীরে ধীরে গরম হয় তা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়। আপনি লোহার খন্ডকে যদি তাপ দেন তা গরম হতে অনেক সময় নেয় ও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়। কিন্তু সিলভার বা অন্য কোন মেটাল দ্রুত গরম হয় ও দ্রত ঠান্ডা হয়। আইন পেশায় নিজের মেধা আর সহনশীলতা নিয়ে থাকতে হবে। দ্রুত কিছু করার মানসিকতা না রেখে ধীরে ধীরে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সামনে আগাতে হবে।
এপিএস নিউজ২৪ঃ আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও আপনার জন্য শুভকামনা।
ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়াঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।