সব
facebook apsnews24.com
ইসলাম ধর্মে অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের অধিকার - APSNews24.Com

ইসলাম ধর্মে অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের অধিকার

ইসলাম ধর্মে অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের অধিকার

অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

বর্তমান বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা একটি অতি স্পর্শকাতর বিষয়। তাই এ বিষয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্মের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও দিক নির্দেশনা সকল মানুষেরই জেনে রাখা দরকার। পবিত্র ইসলাম ধর্মের স্কলারদের মতে- অমুসলিম নাগরিকের উপর জুলুম করা মুসলিম নাগরিকের উপর জুলুম করার চেয়েও বেশী মারাত্বক। কেননা তার মৃত্যুর পর তার কাছ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তীর কোন আশা নেই। এমনকি অন্য কারও ধর্মীয় উপাসনালয় ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। মসজিদ, মন্দির বা গির্জায় হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। হযরত উমর ইবনুল আব্দুল আজিজ (রাঃ) খেলাফত গ্রহনের পর খ্রিস্টানরা এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নিয়ে খলিফার দরবারে গেলে খলিফা তৎক্ষণাৎ এক ফরমান পাঠিয়ে খ্রিস্টানদের গির্জা যেভাবে ছিল, ঠিক সেভাবে তৈরি করার নির্দেশ জারি করলেন। এক কথায় ইসলাম শান্তি, সাম্য, উদারতা ও মানবিকতার ধর্ম। তাই অমুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে ইসলাম কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে। সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ নয়- শান্তি সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার ধর্ম হল ইসলাম ধর্ম। ইসলাম কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয়না।

যে সকল উৎস থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ লাভ করে,তার মধ্যে বাড়াবাড়ি অন্যতম উৎস। যেহেতু ইসলাম ধর্মে বাড়াবাড়ির সামান্যতম সুযোগ নাই, সেহেতু ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নাই । ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয়না বরং সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ লাভের সব উৎসকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার,দূর্নীতি, দূরাচার,ব্যাভিচার, খুন, ধর্ষন, চুরি, রাহাজানি, ডাকাতি, ছিনতাই, জুলুম নিপীড়ন, বাড়াবাড়ি, সীমালঙ্ঘন, নিত্যকার সব বিষয়কে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।ইসলাম এসব অশালীন কর্মকান্ডকে শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং এসবের শাস্তি বর্ননার পাশাপাশি এগুলো নির্মূলের চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিশোধ স্পৃহাকে ইসলাম উদারতা ও মহানুভবতার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে। ইসলাম শুধু মুসলমান নাগরিকদের জানমাল ও সম্মানের অধিকার প্রদান করেনি বরং অন্য ধর্মাবলম্বীদের যথাযথ অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তার বিধান করে থাকে। একটি মুসলিম রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কিছু করা যাবে না। তুমুল যুদ্ধাবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে- শিশুদের হত্যা করবে না, গির্জায় যারা (খ্রিস্টান ধর্মযাজক) ধর্মীয় উপাসনায় জীবন উৎসর্গ করেছে,তাদের ক্ষতি করবে না। কখনও নারী ও বৃদ্ধদের হত্যা করবে না; কারো গাছপালা, ঘরবাড়ি কখনও ধ্বংস করবে না”। যুদ্ধের সময় যদি এইরুপ বিধান থাকে ,তাহলে যুদ্ধ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় যে তাদের প্রতি কোন ধরনের নির্যাতন করা যাবে না,তাদের অধিকার ক্ষুন্ন হয়-এমন কিছু করা যাবে না-এটাই স্বাভাবিক।

মুসলিম শাসক কর্তৃক বিজিত দেশগুলোর সংখ্যালঘু অধিবাসীদের সর্বদা স্বাধীনতা প্রদান করেছেন তাঁরা। ফলে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কখনও কোন প্রকার বাঁধার সম্মুখীন হয়নি।দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রাঃ) তাঁর শাসনামলে অমুসলিম নাগরিকদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তৎকালীন সিরিয়ার গভর্ণর আবু উবাইদা (রাঃ) কে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তুমি মুসলমান কর্তৃক অমুসলমান নাগরিকের উপর কোন প্রকার অত্যাচার, প্রহার এবং তাদের ধন সম্পদ অবৈধভাবে ভোগদখল করতে নিষেধ করবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরত করে তৎকালে মদিনায় বসবাসরত বিভিন্ন গোত্রের পৌত্তলিক ইহুদি নেতাদের সহিত আলাপ-আলোচনা করে কতকগুলো নীতিমালার ভিত্তিতে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন; যা মদিনার সনদ নামে খ্যাত। এই সনদের মাধ্যমে ইহুদি,খ্রিস্টান,পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমন্ময়ে একটি সাধারন জাতি গঠিত হয়। যাতে সবার নাগরিক অধিকার ছিল সমান। সব সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না। কোন সম্প্রদায় বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবাই সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। এভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুসলিম-অমুসলিমদের সময়ে মদিনায় একটি স্থিতিশীল ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সনদের আলোকেই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আদর্শ ইসলামী সমাজ ও আর্ন্তজাতিক শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানেরা তাদের কাজে কর্মে তা অনুসরন করবে এটাই স্বাভাবিক।

ইসলাম একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড বা নির্ধারিত জনগোষ্ঠীর ধর্ম নয়; বরং গোটা মানব সম্প্রদায়ের ধর্ম। এ লক্ষেই পবিত্র কুরআনুল কারিমে বহুবার-হে মানব জাতি, হে মানব জাতি, হে মানব মন্ডলি বলে মানুষকে আলাহ রব্বুল আলামিন সম্বোধন করেছেন। অন্যদিকে মুসলমানদের আল্লাহ তায়ালা তাদের নিজস্ব বিচার বুদ্ধিকে জাগ্রত রাখার তাগিদ দিয়ে বলেছেন -এমনি ভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি,যাতে রাসুল স্বাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। সূরা বাকার ১৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের মধ্যপন্থি সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে উঠতে বলেন এবং সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা করেন যে- কার ও প্রতি বাড়াবাড়ি করো না; সীমালঙ্ঘন কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। তাছাড়া আরাফাতের ময়দানে বিদায় হজ্জের ভাষনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না,একের ধম্য অন্যের উপর চাপিয়ে দিও না।

বিগত সাড়ে চৌদ্দশত বছর ধরে কুরআন আল্লাহর অনুরাগীদের মধ্যে একটি সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। যে ধর্মের উদ্দেশ্য মানুষের ইহকালীন ও পরকালীণ কল্যাণ সাধন,সে ধর্ম মানুষের মধ্যে হানাহানির বিষ ও সাম্প্রদায়িকতার নেশা ছড়িয়ে দিতে পারে না। যদি কেউ তা করে তাহলে বুঝতে হবে সে সীমা অতিক্রম করছে এবং সে ধর্মকে মানছে না। কোন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে শান্তিময় পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে এটা কারো কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন –এমন কোন বিষয়ের পিছনে লেগোনা যে সম্পর্কে তোমাদের পরিষ্কার কোন জ্ঞান নেই, শ্রবনশক্তি, দৃষ্টি শক্তি ও অন্তঃকরন সবকিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে”। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেন- কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শোনে (তার সত্যাসত্যি যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায় বা প্রচার করে”। ইসলামের দিক নির্দেশনা পরিষ্কার। শুধু শুনে যাচাই- বাছাই না করে কারো অনুমানের উপর হামলে পড়া যাবে না। বিশেষ করে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর তো নয়ই। তাহলে বিশ্ববাসীর কাছে একটি ভুল বার্তা যাবে এবং এর সুযোগ নিতে চাইবে স্বার্থান্বেষী মহল যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।

লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, কলামিস্ট ও আইনজীবী, জজ কোর্ট, মেহেরপুর, E-mail:mizanmpur06@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj