সব
facebook apsnews24.com
রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি - APSNews24.Com

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নামাযের পরেই মুসলমানদের প্রতি যে ইবাদাতটা ফরয করেছেন তা হচ্ছে রমযান মাসের রোযা। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখার নামই রোযা। নামাযের ন্যায় এ রোযাকেও আবহমানকাল থেকে সকল নবীর শরীয়াতেই ফরয করা হয়েছে। এ প্রসজ্ঞে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন-
يَآيُّهَا الذِّيْنَ اَمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمْ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّكُوْنَ ـ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল , যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। ( সূরা আল বাকারা: ১৮৩).

আমাদের দেশে এই সময়ে রোযা রাখা সত্যিই কঠিন, তারপরও রোযা রাখে কেন?

একবার চিন্তা করেন তো, এই প্রচন্ড গরমে যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে রোযা রাখে সে লুকিয়ে কিছু পানাহার করে না, কঠিন গরমের সময় পিপাসায় ভিতরটা যখন ফেঁটে যাবার উপক্রম হয়, তখন যে এক ফোঁটা পানি পান করে না-অসহ্য ক্ষুধার দরুন চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলেও কোন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করে না- সেই ব্যক্তির ঈমান কত মযবুত? আল্লাহ তাআলা যে আলেমুল গায়েব সেই কথা সে কতখানি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করে। কত নিসন্দেহে সে জানে যে, তার কাজ দুনিয়ার লোকদের কাছে অজানা থাকলেও সারাজাহানের মালিকের কাছে কিছু অজানা নয়। তার মনে আল্লাহর ভয় কত তীব্র, অসহ্য কষ্ট স্বীকার করা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আল্লাহর ভয়েই সে এমন কাজ করে না যাতে তার রোযা ভেঙ্গে যেতে পারে। পরকালের বিচারের প্রতি তার আকীদা-বিশ্বাস কত দৃঢ়, তার তাকওয়া কত মজবুত।

প্রকৃতপক্ষে এ মাস সমগ্র পরিবেশকে নেকী আর পরহেযগারীর পবিত্র ভাবধারায় উজ্জল করে তুলে। গোটা জাতীয় জীবনে তাকওয়া পরহেযগারীর সবুজ তাজা ফসল বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল নিজেকেই গুনাহ হতে বাঁচাতে চেষ্টা করে না বরং তার মধ্যে কোনো প্রকার দুর্বলতা থাকলে তার জন্য অন্য সব রোযাদার ভাই তার সাহায্য ও সহযোগিতা করে। রোযা রেখে গুনাহ করতে প্রত্যেকটি মানুষের লজ্জাবোধ হয়; পক্ষান্তরে প্রত্যেকের মনে কিছু ভাল ও সওয়াবের কাজ করার ইচ্ছা জাগে। সম্ভব হলে গরীবকে একবেলা খাবার দেয়, উলঙ্গ ব্যক্তিকে কাপড় দান করে, বিপন্নের সাহায্য করে। কোথাও নেক কাজ হতে দেখলে তাতে অংশগ্রহণ করে। আর কোথাও প্রকাশ্যভাবে পাপ অনুষ্ঠান হতে থাকলে তা বন্ধ করতে চেষ্টা করে। এভাবে চারদিকে নেকী ও তাকওয়ার একটি মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

রোযার সময় আমাদের দেশের প্রকৃত (Actual) অবস্থাটা কেমনঃ

রোযার এই মাসে আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাই আমাদের দেশের পরিবেশটা পুরটাই উল্টা। যেমন রোযাদার ব্যক্তি কেমন করে মিথ্যা কথা বলতে পারে ? কেমন করে পরের “গীবত” করতে পারে, কথায় কথায় তারা লড়াই-ঝগড়া কেমন করে করতে পারে? তাদের মুখ থেকে গালি-গালায ও অশ্লীল কথা কেমন করে বের হয়? মসজিদে কুপিয়ে ভাইকে মারে? চিনি, লবন, তেল, চাল, লেবু, শশা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিশপ্ত্রের দাম কেমন করে আকাশ্চুম্বি করে ব্যপক লাভ করে, পরের হক তারা কিভাবে কেড়ে নেয়? হারাম খাওয়া ও অন্যকে হারাম খাওয়ানোর কাজ কেমন করে করতে পারে?

আমাদের দেশের মুসলমানদের মনে ইবাদাতের অর্থ এবং সেই সম্পর্কে যে ধারণা রয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। তারা মনে করে যে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু না খাওয়া, কিছু পান না করাকেই রোযা বলে। আর এটা করার নামই ইবাদাত। এজন্য দেখা যায় যে, মুসলমান রোযার খুব সম্মান করে, খুব যত্নের সাথে রক্ষা করে চলে- তাদের মনে আল্লাহর ভয় এতবেশী হয় যে, যেসব কাজে রোযা ভংগ হবার আশাংকা হয়, তা থেকে তারা দূরে সরে থাকে। এমনকি প্রাণের আশংকা দেখা দিলেও কেউ রোযা ভাংগতে রাজী হয় না।

রোযার প্রকৃত উদ্দেশ্য (Purpose) কি?

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ একথা জানে না যে, কেবল ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার নামই আসল ইবাদাত নয়, এটা ইবাদাতের বাহ্যিক অনুষ্ঠান মাত্র। বরং এ অনুষ্ঠান পালন করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা জাগিয়ে তোলা মাত্র। তাদের মধ্যে যেন এতদূর শক্তি জেগে ওঠে যে, তারা বড় বড় লাভজনক কাজকেও কেবল আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে ভয় করে (নিজের মনকে শক্ত করে) তা পরিত্যাগ করে। আর কঠিন বিপদের কাজেও যেন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিজের মনকে শক্ত করে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। এ শক্তি আমাদের মধ্যে তখনি আসতে পারে, যখন রোযার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে এবং রমযানের পূরা মাস আল্লাহর ভয় ও ভালবাসায় নিজের মনকে নফসের খাহেস হতে ফিরিয়ে রাখবে, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রস্তুত হবে।

এ জন্যই আল্লাহতায়ালা বলেছেন যে, ‘তোমাদের জন্য রোযা ফরয করা হয়েছে সম্ভবত তোমরা মোত্তাকী ও পরহেযগার হতে পারবে।‘ আল্লাহ পাক একথা বলেননি যে, রোযা রেখে তোমরা নিশ্চয়ই পরহেযগার ও মোত্তাকী হতে পারবে। কারণ রোযা হতে যে সুফল লাভ করা যায় তা রোযাদারের নিয়ত, ইচ্ছা-আকাংখা ও আগ্রহের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। যে ব্যক্তি এর উদ্দেশ্য জানতে ও ভাল করে বুঝতে পারবে এবং তা দ্বারা মূল উদ্দেশ্য লাভের চেষ্টা করবে সে তো কম বেশী মোত্তাকী নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু যে এর উদ্দেশ্যই জানবে না এবং তা হাসিলের জন্য চেষ্টা করবে না, রোযা দ্বারা তার কোনো উপকারই হবার আশা নেই।

এ কারনেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নানাভাবে রোযার আসল উদ্দেশ্যের দিকে ইংগিত করেছেন এবং বুঝিয়েছেন যে, উদ্দেশ্য না জেনে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকায় কোনোই সার্থকতা নেই। তিনি বলেছেন:
مَنْ لَّمْ يَدْعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِه فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِيْ اَنْ يَّدْعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَه ـ
‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করবে না তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই।‘

কাজেই রোযার আসল উদ্দেশ্য না বুঝে আমরা শুধু বাহ্যিক অনুষ্ঠান পালনের কারনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু না খাওয়া, কিছু পান না করাকেই রোযা হিসেবে পালন করছি। এ কারনেই আমাদের সমাজে রোযা রাখার পরও বিশেষ কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা।

আল্লাহ্তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ব্যারিস্টার।

আপনার মতামত লিখুন :

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

লোক দেখানো ইবাদত মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

রমযানের রোযা ও আমাদের প্রাপ্তি

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

হিজরি নববর্ষ বয়ে আনুক করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন পয়গাম : বাংলাদেশ ন্যাপ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বাংলাদেশ থেকে এবারও হজে যেতে পারবেন না কেউ

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

৫৬০ মডেল মসজিদের মধ্যে অর্ধশত উদ্বোধন আজ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj