মোঃ সাইফুদ্দীন হোসাইন
ছোটগল্প
শাকিল ও শাহিনার দুই বছরের সংসার। কয়েক মাস হলো কেন জানি তাদের সম্পর্ক টা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। একটু চুন থেকে পান খসলেই শাকিল শাহিনা কে গায়ে হাত তুলতে উদ্যত হয়। তার উপর শাহিনার মা বাবার আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তার শ্বাশুরী ও ননদের টিপ্পনী তার যেন দিনে দিনে অসহনীয় পর্যায়ে যাচ্ছিলো। মফস্বল মহকুমার ঝিনাইদহে একটা কলেজে ইন্টারমেডিয়েট প্রথম বর্ষ পড়ার সময় শাকিলের সাথে শাহিনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শাকিল সে সময় বি, এ শেষ পর্বের ছাত্র। প্রেম বলতে এই তো চোখাচোখি আর শাহিনার বান্ধবী বিলকিসের মাধ্যমে চিঠি চালাচালি। শাকিল বি,এ পরীক্ষার শেষ করে তার এলাকায় ফিরে যায় এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি হাই স্কুলে চাকুরী নেয়।
পারিবারিক ভাবে শাকিলের পরিবার বেশ স্বচ্ছল।শাকিলের গ্রাম সিলিমপুর৷সিলিমপুর গ্রামে দেশের প্রচলিত আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক শাসন বিদ্যমান। শাকিল বলা যায় এই গ্রামের প্রথম বি,এ পাস করা ছাত্র। তাকে সবাই প্রগতিশীল মানুষ বলেই জানে। শাহিনা কলেজে নিয়মিত থিয়েটার করতো, মোটামুটি নাচতে ও নজরুল সংগীত জানতো। বিয়ের পরে কয়েক দিন গলা ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি গান গেয়েছিলো। এ নিয়ে মহল্লার মানুষ শাকিলের বাবাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলো। শ্বাশুড়ি কথায় কথায় শাহিনা কে ঢিঙ্গি বৌমা বলে টিপ্পনী কাটে। শাকিল ও মাঝে মাঝে শাহিনা কে বলে আসলে বৌ হওয়ার মতো মেয়ে ছিলে না। সবই আমার কপাল। শাকিলের মা তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে শাকিল কে বিয়ে ঠিক করেছিলো। শাকিলের মামার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করলে কি সহায় সম্পদ পেতো, সেগুলোর বর্ননা সুযোগ পেলে শাহিনা কে কথা শুনাতে শাকিল পিছপা হতো না। একদিন স্কুল থেকে ফিরে আসার পরে শাকিলের মা অনেক মিথ্যা কথা ইনিয়ে বিনিয়ে ছেলেকে বলে। শাকিল এই দিন বউয়ের গায়ে হাত তুলে। তাদের চিৎকার, চেচামেচি তে আশেপাশের বাড়ির কিছু মানুষ এসে হাজির হয়৷ শাহিনা বলে সব জেনে শুনে আমাকে বিয়ে না করলেই পারতে। শাকিল বলে যা তোরে আমি তালাক দিবো। এক তালাক, দুই তালাক……. বাইন তালাক।
শাকিলের চাচার হস্তক্ষেপে ঐদিনকার পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়। শাকিলের চাচার বাড়িতে শাহিনার ঠাই হয়। কিছুক্ষন পরে শাকিল বুঝতে পারে, তার তালাক দেওয়া ঠিক হবে না। শাহিনা কে বলে দেখ, যা হবার হয়েছে। আমি তোমাকে খাতা কলমে তালাক ও দেয়নি। বাড়িতে চলো। শাহিনা বলে না, তালাক যখন একবার মুখে বলতে পারছো তো তোমার ঐ খাতা কলম সর্বস্ব সংসার আমি করবো না। শাহিনা তার মা মরা বাবার সংসারে ফিরে গেলে কি হবে সেইটা ক্ষনিকে ভেবে রাজি হয়। ইতোমধ্যে সিলিমপুর গ্রাম জুড়ে মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে শাকিল তার বউ কে তালাক দিয়ে আবার তালাক দেওয়া বউ ঘরে তুলছে সংসার করবে বলে!
শাকিলের পরিবারের সাথে সামাজিক ভাবে দীর্ঘ দিনের বিরোধ থাকা তরফদার ও বিশ্বাস গোষ্ঠী এই ঘটনার প্রচার বেশি বেশি করতে থাকে। পরের দিন দুপুরে এই ঘটনার বিচারের জন্য স্থানীয় মাতব্বর খয়ের উদ্দিন স্বপ্রনোদিত ভাবে লোকজন ডাকে। শাকিল ও তার পরিবারের লোকজন কে শালিসে উপস্থিত থাকার জন্য আগে থেকে বলা হয়। সমাজের বিত্তশালী, মসজিদের ইমাম সহ গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ মানুষ অতি অতি উৎসাহে সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলো। গ্রামের একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত ছেলে ও তার বউ কে নিয়ে সালিশ এ নিয়ে মানুষের মাঝে বাড়তি আকর্ষন কাজ করছিলো। অপেক্ষাকৃত উত্তমের পতন দেখে মজা নেওয়ার স্বভাব বাঙালির মজ্জাগত। সিলিমপুরের মানুষ তার ব্যতিক্রম ছিলো না।
সালিশ বৈঠকে মাতব্বর জিজ্ঞেস করে,শাকিল সত্য করে বলো তো, তুমি কি তোমার বউরে তিন তালাক দিয়েছিলে? শাকিল বলে জি চাচা। কোমর উদ্দিন তরফদার বলে শিক্ষিত হয়েছো ভালো কথা, তো ধর্মীয় বিধান কি তোমার জন্য প্রযোজ্য না? শাকিল নীরব থাকে। সালিসি বৈঠক থেকে হুজুরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই ঘটনার ধর্মীয় সমাধান। হুজুর বলে শাকিল কে এই বউ নিয়ে সংসার করতে হলে অন্য ব্যক্তির সাথে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। তার তিন মাস পরে শাকিল আবার তার বউরে পুনরায় বিয়ে করে সংসার করতে পারবে। শাকিল বলে উঠে, হিল্লা বিয়ে তো আইন করে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর আমি তো আমার বউরে তালাক কাগজে কলমে দেয়নি। মাতব্বর বলে রাখো মিয়া, বাইন তালাক দিয়ে ঐ বউ নিয়ে সংসার করা আর বেশ্যাপাড়ার মেয়ে নিয়ে লুটুপুটু করা একই বিষয়। সাফ কথা তুমি ঐ বউ নিয়ে সংসার করতে হলে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। তবে হ্যা তোমার বউকে তুমি ইচ্ছামতো যে কারো সাথে হিল্লা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের কোন সমস্যা নাই। তবে হ্যা তিনটি শর্ত মানতে হবে।
১. যার সাথে বিয়ে দিবে তার সাথে তোমার বউকে তিন মাস থাকতে হবে।
২. এই সময়ে তোমার বউয়ের সাথে তুমি দেখা করতে পারবে না।
৩. হিল্লা স্বামীকে তিন মাস পরে আমাদের সালিশী বোর্ড কে জানাতে হবে যে, শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের বিয়ে পূর্নতা পেয়েছিলো।
এই সব শর্ত আর হিল্লার কথা শুনে শাকিলের সম্পর্কে চাচাতো, মামাতো কয়েক জন বিয়ে উপযুক্ত ছোট ভাই নিজেদের কে ভাবীর জন্য উপযুক্ত ছেলে হিসাবে ভাবতে শুরু করে। শাকিল বলে আমাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেন। শাকিল বাড়ি ফিরে যায় এবং শাহিনা কে সব শর্ত ও ঘটনা খুলে বলে। শাহিনা বলে আমার জন্য এসব শর্ত মানা অসম্ভব। শাহিনা জানায় তার থেকে বরং তুমি আমাকে পুনরায় নিয়ম মেনে তালাক দিয়ে মুক্তি দাও। আমার বাবার বাড়ি চলে যায়। শাকিল ঘরের দরজা বন্ধ করে অনেক কান্নাকাটি করে। শাহিনা সিদ্ধান্তে অনড়৷ শাকিল এক পর্যায়ে শাহিনার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে। বলে দেখ, এক সময় এই বাংলার কত মহিলা স্বামীর মৃত্যুতে অকালে নিজেদের চিতায় উঠেছে হাসিমুখে। আমার জন্য তুমি না হয় নিজেরে বিসর্জন দাও। আর আমি কথা দিচ্ছি, এর পরে আমি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবো। তোমাকে আমি সুখের স্বর্গরাজ্য রাখবো। শাহিনা বলে আমি রাজি হতে পারি এক শর্তে, আমি ফিরে আসার পরে আমরা অন্য কোথাও গিয়ে ঘর বাধবো। সিলিমপুরে আর থাকবো না। শাকিল বলে তোমার এক শর্ত কেন, হাজার শর্তে আমি রাজি। শুধু এই যাত্রায় তুমি আমার মাফ করো।
শাকিল বুদ্ধিদীপ্ত একজন মানুষ। নিজের বউয়ের জন্য হিল্লার পাত্র খুজতে শাকিলের কানে আসে যে, তারই চাচাতো ভাই কদম আলী হিল্লা বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু শাকিল ভাবে যে, তিন মাস পরে ঐ বউ নিয়ে সংসার করবো আর আমার সামনে দিয়ে কদম আলী হেটে বেড়াবে। প্রতি মুহূর্তে আমি নরক যন্ত্রনায় ভুগবো। শাকিলের প্রথম পছন্দের তালিকায়, গ্রামের মনা পাগলা। আরো ভাবে যে, তিন মাস পরে মনা পাগলা কে চুরির অপবাদ দিয়ে গ্রাম ছাড়া করবে। মা বাবা হারা মনাকে গ্রাম ছাড়া করা শাকিলের জন্য কঠিন কোন কাজ নয়। মনা এক সময় শাকিলের প্রাইমারি স্কুলে সহপাঠী ছিলো। নবম শেনীতে পড়ার সময় মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। আর ভালো হয়নি। দেখতে সুস্থ, সবল, ভালো মানুষের মতোই। মনা মাঝে মাঝে কথা বলে অসংলগ্ন। মনার সংসার চলে অন্যর ক্ষেতে মজুর খেটে। মনা যতটা না পাগল তার থেকে পাগল নাম প্রচার হয়েছে বেশী। মনার বিয়ে ঘর সংসার করা হয়ে উঠে নাই। গ্রামের এক কোনে বিলের ধারে এক চিলতে জমিতে তার একটি খুপরী ঘরে বসবাস। মা বাবা কে হারিয়েছে কয়েক বছর হলো।
মনা পাগল নাম বটে কিন্তু তার অনেক মানবিক গুনাবলি আছে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে কর্দমাক্ত রাস্তায় মাইলের পরে মাইল ঘাড়ে করে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে এই মনার ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে অনেকেই। মনা ভালো বাশি বাজাতে পারে।পরের ক্ষেতে কাজ শেষে সময় পেলে বিলের ধারে বসে বাশি বাজাতে।
শাকিল মনার কাছে প্রস্তাব নিয়ে নিজেই যায়। মনা বলে কি বলো মাষ্টার সাহেব? আমাকে মাফ করবেন। শাকিল মনার হাত জড়িয়ে ধরে বলে যে, দেখ মনা তুমি তো একসময় আমার ক্লাসমেট ছিলে। আমাকে এতটুকু উপকার করো। মনা পাগলা এক পর্যায়ে রাজি হয়। মনা পাগলা কে শাকিল তিনটা শর্তের কথা জানিয়ে দেয় এবং বলে যে আজকেই সন্ধ্যার সময় বিয়ে হবে৷ শাকিল ফিরে এসে গ্রামের মাতব্বর কে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলে। ছোট অনুষ্ঠানে গ্রামের মসজিদের হুজুর তাদের বিয়ে পড়ায়।
বিয়ের পরে শাহিনা কে নিয়ে তার বিলের ধারে ছোট্ট খুপরী ঘরে যায়। মনা শাহিনা কে বলে যে, দেখেন আমার ঘরে ছোট একটি খাট। আমি নিচেই শুবো, আর আপনি উপরের খাটে শুবেন।প্রথম কথাতেই শাহিনা কেমন যেন ভালো বোধ করে। কারন শাহিনা ভাবছিলো নাম যার মনা পাগলা, প্রথম রাতেই হয়তো তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে কিনা। শাকিলের সাথে শাহিনার দুই বছরের জানা শুনার পরে বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের পরে প্রথম রাত শাকিলের কাছে থেকে কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরন মনে হয়েছিলো। প্রথম রাত এভাবে কেটে যাওয়ার পরে সকাল হতেই মনা পাগলা পরের ক্ষেতে কাজে বেরিয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে।সন্ধ্যায় বিলের ধারে বসে মনা বাশি বাজায়। শাহিনা ঘরেই থাকে।
দ্বিতীয় দিন থেকেই শাহিনা রান্নাবান্না করা শুরু করেছে। মনা পাগলা স্থানীয় কুসুমপুর বাজারে যায়, ফিরে আসার সময় তরিতরকারি কেনার সাথে সাথে শাহিনার জন্য হাতের চুড়ি,পুথির মালা নিয়ে আসে। শাহিনা এগুলো দেখে একটু মুচকি হাসে। দিন যত যায় মনা আর শাহিনার মাঝে সম্পর্কে দূরত্ব কমতে থাকে৷ মনা পাগলা এখন বিলের ধারে বাশি বাজালে শাহিনা তার পাশে যেয়ে বসে। মনের অজান্তেই গভীর রাতে তারা বিলের ধারে বসে একসাথে চাঁদ দেখা শুরু করেছে৷ এভাবেই এক মাস কেটে যায়। একদিন তারা দুই জন সালিশী বোর্ডের ৩ নং শর্ত পূরনে নয় বরং প্রাকৃতিক নিয়মে ও ভালো লাগা থেকে ঘনিষ্ঠ হয়। মনা পাগলা এই প্রথম নারী সঙ্গ পেয়েছে। একদিন পরে পথের মধ্যে মনার সাথে শাকিলের দেখা হয়।শাকিল মাথা নিচু করে চলে যায়। শাকিল কে দেখেই মনার মনে হয় শাহিনা কে এই শালা আমার কাছে থেকে কয়েক দিন পরে আবার নিয়ে নিবে।
মনা আর শাহিনার সাথে সম্মন্ধে এখন আপনি থেকে তুমিতে ঠেকেছে। মনা প্রায়ই বাজার থেকে ফেরার সময় শাহিনার পছন্দের বুন্দিয়া আর সিংগাড়া নিয়ে আসে। মনা মাঝে মাঝেই মাঠ থেকে ফিরে পেছন থেকে শাহিনা কে আলতো ছোয়া দিয়ে চমকিয়ে দেয়। এগুলো শাহিনার প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন তার কাছে মনে হয় এগুলোই বুঝি ভালোবাসা। শাকিলের কাছে থেকে কত চিঠি পেয়েছে শাহিনা। চিঠিতে শাহিনা কে মাঝে মাঝে মমতাজ আর নিজেরে শাহজাহান বলে পরিচয় দিতো শাকিল।প্রতিটা চিঠিটিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অর্ধেক শব্দ ভালোবাসা বা ভালোবাসি দিয়ে ভরা থাকতো! বিয়ের পরে তারা দুই জন প্রেমের স্বর্গরাজ্য করতে চেয়েছিলো। অথচ দুই বছর শাহিনা কিনা কত নরক যন্ত্রনায় না ভোগ করেছে!!
শাহিনা প্রথম প্রথম দিন গুনতো কবে মুক্তি পাবো? আর এখন কেন জানি মনের অজান্তেই দিন গুনে কবে বুঝি তিন মাস ফুরিয়ে যাবে। মনা পাগলা এই আড়াই মাসে কখনো শাহিনা কে ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারন করে নাই। শাহিনার কাছে মনে হয়েছে মনার প্রতিদিনকার তার প্রতি সহজাত যত্ন, আলতো ছোয়া, রাতের আধারে বিলের ধারে বসে চাঁদ দেখা এই গুলোই বুঝি ভালোবাসা। এখন তারা প্রায়ই ঘনিষ্ঠ হয়। শাহিনা যেন ভুলতে বসেছে যে,মনা পাগলা তার স্বামী নয়। তিন মাসের জন্য স্বামীর পাপ মোচন আর নিজের উদারতার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে থেকে মনা পাগলা তার জন্য যেন চরম উপহার । মনা পাগলা ছেড়া জামা কাপড় পড়ে থাকেন বটে কিন্তু শাহিনার চোখে মনা যেন কুড়েঘরের রাজপুত্র। তিন মাস পুরতে আর মাত্র তিন দিন বাকি।মনা কেমন যেন আনমনা হয়ে বসে থাকে। ক্ষেতে কাজে যায় না। শাহিনা বললো আর মাত্র চব্বিশ ঘন্টা বাকি। তুমি আমার জীবনে কেন তিন মাসের জন্য আসলে। সৃষ্টিকর্তা কি তোমাকে আমার জন্য আজীবনের জন্য রাখতে পারতেন না! আচ্ছা মনা তুমি কি আমাকে এখন বিয়ে করবে স্থায়ীভাবে। মনা চুপ থাকে।মনার চোখে রাজ্যের আনন্দ।কিন্তু চুপ কেন মনা। কথা বলো। মনা বললো হ্যা পারি। কিন্তু সেটা তো মাষ্টার সাহেবের সাথে বর খেলাপ। শাহিনা বলে যে, যে ব্যক্তি সমাজের চাপে দেশের প্রচলিত আইনের বাহিরে যেয়ে নিজের বউরে হিল্লা হিতে পারে, তার সাথে আবার বরখেলাপ! মুহুর্তেই মনা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। মনা জানায় আজকেই সে শাকিল রে জানিয়ে দিবে যে, আগামী পরশু শাহিনা রে আমি স্থায়ীভাবে বিয়ে করবো।
শাকিলের বাড়িতে যায় মনা পাগলা। শাকিল রে বলে মাষ্টার সাহেব আপনি আর শাহিনা কে পাবেন না। শাহিনা কে আমি আগামী রবিবার বিয়ে করবো।শাহিনা এই বিয়েতে রাজি। শাকিল শুনে তো আশ্চর্য! শাকিল চালাক মানুষ। সে ভাবলো যে, মনা পাগলার সাথে গন্ডগোল করলে নিজেরই যতটুকু অবশিষ্ট মান সম্মান আছে, সেটুকু চলে যাবে।
শাকিল কিছুক্ষন পরেই মাতব্বর খয়ের উদ্দীন কে ঘটনা খুলে বলে। খয়ের উদ্দীন বলে আগামীকাল সকাল দশটায় সালিশে বৈঠকে তোমার বউরে ফেরত দিবো। আর গাদ্দারীর জন্য মনার বিচার হবে। তখনই মনা পাগলার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে পরের দিন হিল্লার বউ সহ সালিশে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। পরের দিন যথারীতি সালিশি বৈঠক বসলো। এগারোটা বেজে যায় অথচ মনা বা শাহিনা কেউ উপস্থিত হয় না। খয়ের উদ্দিন গোটা চারেক ছোকরা ছেলেকে পাঠায়, মনা পাগলাকে ধরে নিয়ে আসার জন্য। শাহিনা শাকিলের কূটবুদ্ধি ও নিলজ্জতা সম্বন্ধে ওয়াকিবহোল ছিলো। শাহিনা মনা পাগলা কে সাথে নিয়ে আগের রাত এগারোটার সময়ে অজানার উদ্দেশ্য সমাজের চোখে ভিন্ন রকম আর নিজেদের চোখে সত্যকার ভালোবাসার খোজে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।
(বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বর্তমানে Muslim family Laws Ordinance 1961 ধারা ৭ এর বিধি অনুযায়ী বউকে তিনবার পর পর তালাক দিলেই, তারপর একইভাবে চর্তুথবার বউকে তালাক দিলে হিল্লা বিয়ের দরকার হয়।বিশেষভাবে উল্লেখ্য হিল্লা বিয়ে শব্দটি সরাসরি ধর্মীয় বিধান কিংবা MFLO তে ব্যবহার করা হয়নি। অথচ ২০/২৫ বছর আগেও গ্রামাঞ্চলের খোজ নিলে দেখা যায় অজস্র নিষ্ঠুর বা খামখেয়ালির এমন ঘটনা)
লেখক মোঃ সাইফুদ্দীন হোসাইন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, যশোর।