উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটি কক্ষের ৬০ পরীক্ষার্থী মধ্যে
৫২ জনই গণিতে ফেল করে। নতুন ফলাফলে ওই ৫২ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। আগে ঘোষিত ফলাফলে ফেল করা ৫২ শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের পর সবাই পাস করার পাশাপাশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ জন।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ি (১৭৭ নং ) এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি কক্ষে ৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জনেই গণিতে ফেল করেছিল। সারাদেশের মতো গত মাসের ২৮ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়।
ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ি (১৭৭ নং) এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৮ নং কক্ষের ৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জনই গণিতে ফেল করে।
এ নিয়ে ঢাকা টাইমসের অনলাইন সংস্করণে পরেরদিন ২৯ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে টনকনড়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষের। এরপর উত্তরপত্র নিরীক্ষণ করে ২ ডিসেম্বর এ ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। তাতে দেখা যায় ফেল করা ৫২ জনই পাস করেছেন।
জানা যায়, জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি কলেজ কেন্দ্রের ৮নং কক্ষে মোট ৬০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই ৬০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী ছাড়া বাকি ৫২ জন ছেলে পরীক্ষার্থীর সবাই এসএসসির ফলাফলে গণিতে ফেল করে। ওই কক্ষের সবাই ছিল ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র।
কাঙ্খিত ফল পেয়ে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা যখন গোটা দেশ তখনই বিষাদে ছেয়ে গিয়েছিল আঠারবাড়ি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৫২ পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও
অভিভাবকের হৃদয়। ফলাফলের পর পরীক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষকসহ অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই কেন্দ্রের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের জন্য কলেজের ৮ নম্বর কক্ষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়। ওই বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল ৬০ জন। এর মধ্যে ৮ জন মেয়ে ৫২ জন ছেলে ছিল। মেয়ে ৮ জনই সব বিষয়ে পাস করলেও ছেলেরা গণিত বিষয়ে ফেল করে।
ওই হলের পরীক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত প্রান্ত বলেন, গণিত পরীক্ষা আমার খুব ভালো হয়েছিল। তাই আগের ফল মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিরবে অনেক
কেঁদেছি। আল্লাহ রহমতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছি। এখন খুব ভালো লাগছে।
কেন্দুয়া উপজেলার শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের বিদ্যালয় প্রতি বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করে আসছে । এ বছর ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ী এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে আমাদের বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
সাইন্স বিভাগ থেকে ২৯ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ২৭ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন । অন্যরা জিপিএ ৪.২৮ থেকে ৪.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৬ জন অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৩ জন মেয়ে ১৩ জন ছেলে। মেয়ে ৩ জনের মধ্যে দুজন জিপিএ-৫ ও অন্যজন জিপিএ ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পুনঃ প্রকাশিত ফলাফলে ফেল করা ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে, অন্যজন জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আগের ফলাফলে পেয়ে আমাদের সবার মাঝে এক প্রকার শোকের আবহ কাজ করছিল। যারা পাস করেছিল তারাও কোনরকম আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি। নতুন ফলাফল পেয়ে আমরা সবাই এক সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করছি। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছি।
আগের ফলাফল পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে আঠারবাড়ি হলের কেন্দ্র সচিব আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, আঠারবাড়ি কেন্দ্রে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৮ নং কক্ষের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের গণিতে ফেল করা ৫২ জন পরীক্ষার্থী সবাই পাস করেছে। কেন্দ্রের ওই কক্ষে আঠারবাড়ি এম সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৪ জন ও কেন্দুয়া উপজেলার শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ১৬ জন শিক্ষার্থী ছিল। মোট ৬০ জনের মধ্যে আঠারবাড়ি এম সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ জন ও শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ৩ জন মেয়ে ছিল তারাই সকল বিষয়ে পাস করেছিল। নতুন এই ফলাফলে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ফেল করা ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
আর অন্যজন জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং আঠারবাড়ি এম সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৯ জনের মধ্যে দুইজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন জিপিএ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছে। নতুন ফলাফল পেয়ে আমাদের সবার মূখে হাসি ফুটেছে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রশ্নের সেট বিড়ম্বনার কারনে হয়তো এমনটি ঘটেছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে গণিতে ফেল করা ৫২ জনেই বিভিন্ন জিপিএ নিয়ে পাস করেছে।