মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
বাংলাদেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা কমন ল আইনব্যবস্থায় গড়ে উঠেছে যা ঔপনিবেশিক আমলের দান। ব্রিটেনের প্রায় ২০০ বছরের শাসন আমলে ছিল ভারতবর্ষ। সেই সময়ে ১৭৭০-১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতে পর্যায়ক্রমে বিচারিক সিদ্ধান্তের ওপর তৈরি হওয়া ব্রিটিশ আইন সরাসরি এবং ঔপনিবেশিক আইনপ্রণয়নের মাধ্যমে মোটামুটি সবই ভারতবর্ষে প্রয়োগ করা হয়েছে। বিচার পদ্ধতি, পুলিশ পদ্ধতি, অপরাধ আইন, দেওয়ানি আইন, চুক্তিগত আইন সহ মৌলিক আইনসমূহের সবকিছুই কমন ল এর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখন পর্যন্ত আইনগুলো সামান্য সংশোধিত বা বিশেষ আইন তৈরি হলেও মৌলিক বিষয়গুলো ২৫০ বছরে আজও বহাল আছে। অপরদিকে উপমহাদেশের কমন ‘ল’ ব্যবস্থার দেশ ভারতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানে দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন হলেও আইনগুলো আমরা অনুসরণ করে চলেছি যা এককথায় সেকেলে এবং আমাদের আধুনিক বিচারব্যবস্থার প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে বললে ভুল হবে না। আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বয়ং বৃটেনে ২৫০ বছরে বহুল পরিবর্তন হয়েছে বিচারব্যবস্থায় ও আইনসমূহে কিন্তু আমরা এখনো সেগুলো ব্যবহার করে চলেছি।
মামলাজট
মামলাজট আসলে কি? মামলা জট কেনো বলছি বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরা যাক। কমন ল বিচার ব্যবস্থার দেশগুলোতে এই পরিভাষাটি ব্যাপক ব্যবহৃত। মামলাজট বলতে আসলে বোঝায় নির্দিষ্ট সময় সীমার চেয়ে বেশি সময় ধরে আদালতে বিচারাধীন থাকা মামলাসমূহ। এই সময় সীমা কখনো নির্দেশনামূলক মাত্র। যেমন সাধারণ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার। এটি আবার কখনো কখনো বাধ্যতামূলক যেমন বিশেষ আইনসমূহ বা বিশেষ আইনে বর্ণিত অপরাধসমূহের বিচার যা সাধারণত ট্রাইব্যুন্যালে সম্পন্ন হয়। দেওয়ানি বিষয়ক মামলার ক্ষেত্রে উদাহরণ অর্থঋণ আদালত। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ বিধান থাকার পরেও অনেক ক্ষেত্রে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না।
মামলাজটের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। কারণগুলিকে কয়েকটি বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়। ক) আইনগত বা টেকনিক্যাল কারণ খ) পলেসি বা নীতিনির্ধারণ জনিত কারণ গ) সামাজিক ও অন্যান্য কারণ।
ক) আইনগত বা টেকনিক্যাল কারণ
দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এর ক্রটিসমূহ যা মামলা জটে সরাসরি দায়ী:
১) সমন ও নোটিশ জারিতে বিলম্ব
আদি এখতিয়ারসম্পন্ন দেওয়ানি আদালতসমূহে মামলা দায়েরের পরবর্তী পর্যায়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিলম্বিত হয় মামলার সমন ও নোটিশ জারিতে অস্বাভাবিক সময় ব্যয়ের জন্য। মূলতঃ যথারীতি সমন জারি দেওয়ানি মামলার গতিশীলতার পূর্বশর্ত হলেও দেশের আদালতসমূহে সমন জারিতে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণে কোনো একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়েরের পর ক্ষেত্রবিশেষে, শুধু এই কারণেই কয়েক বছরের দীর্ঘসূত্রিতার সূত্রপাত ঘটে।
শতবর্ষী বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলের সমন সংক্রান্ত বিধান কিছুটা সংশোধন হলেও মৌলিক বিষয়গুলো একই রয়েছ পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব বিভিন্ন জেলায় সমন জারিতে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে মামলার প্রাথমিক পর্যায়েই দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যায়।
২) লিখিত জবাব দাখিলে বিলম্ব
সমন/নোটিশ জারিতে অস্বাভাবিক বিলম্বের পরেই মামলার পরবর্তী পর্যায় তথা জবাব দাখিলে বিবাদী/প্রতিপক্ষের বিলম্বের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রায়ই দেখা যায় মামলার বিবাদী/প্রতিপক্ষ লিখিত জবাব দাখিলের জন্য পুনঃপুনঃ সময় নেয় যার মাধ্যমে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বৃদ্ধি পায় যা মামলাজট বৃদ্ধিতে অন্যতম কারণ।
৩) টাইম পিটিশন
এক মামলা চলমান থাকা অবস্থায় প্রত্যেক শুনানিতে আইনজীবীর সময় চাওয়া তথা টাইম পিটিশন চাওয়ার কোনো সীমা নেই। একটি মামলার তারিখ আাসার পর বাদী বা বিবাদীপক্ষের আইনজীবী শুনানি না করে সময় চাইতে পারেন এবং আদালত সাধারণত সময় দিয়ে থাকেন। একটি মামলা শুনানি হওয়ার দিনে শুনানি না করলে কমপক্ষে ২ মাস পর আবার আরেকটি তারিখ আসতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মামলা চালানোর প্রস্তুতির অভাবে, মামলা হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় নিছক টাইম পিটিশন করা হয় যা একটি স্বাভাবিক মামলাকে কমপক্ষে ২-৩ বছর পিছিয়ে দিতে পারে।
৪) বাদীপক্ষ কর্তৃক পুনঃপুনঃ আরজি সংশোধন
মামলার পর বাদীপক্ষ কর্তৃক পুনঃপুনঃ আরজি সংশোধন মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অনেক সময়েই বাদীপক্ষ মামলার প্রয়োজনীয় সকল দলিলাদি ব্যতিরেকে অথবা অপ্রতুল দলিলাদি নিয়ে মামলা দায়ের করে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বাদীপক্ষকে পরবর্তীতে আরজি সংশোধনের দরখাস্ত করতে হয় এবং মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে এসব দরখাস্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রহণ করা হয়। আবার এ ধরনের দরখাস্ত পুনঃ পুনঃ দাখিল ও মঞ্জুর হলে অনেক ক্ষেত্রেই নতুন করে তদবির গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় কিংবা অনেকক্ষেত্রে বিবাদীপক্ষকে অতিরিক্ত জবাব দাখিলের সুযোগ দিতে হয়। যার ফলে সামগ্রিকভাবে মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে বাধ্য।
৫. ছানি মামলা
কোনো দেওয়ানি মামলায় বাদী গরহাজির থাকায় মামলা খারিজ হলে কিংবা বিবাদী গরহাজির থাকায় মামলা একতরফা শুনানি হলে আদালতের সেই খারিজ আদেশ বা একতরফা আদেশের রহিত করতে যে মামলা করা হয় তার নাম ছানি মামলা। একটি মামলার এতরফা শুনানি এবং ডিক্রি প্রদান করা হয় বাদী বা বিবাদীর অনুপস্থিতিতে যা প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট গ্রাউন্ডসে কিন্তু আইন বলছে অনুপস্থিত বাদী/বিবাদী পুনরায় কারণ দেখিয়ে একতরফা ডিক্রি বা জারি ডিক্রি বাতিলের আবেদন করতে পারে কিংবা মূল মামলায় ফেরত আসতে পারে। ফলে পুনরায় একটি মামলা নতুন করে দুই তরফা শুনানি শুরু হয় আর মাঝখানে কেটে যায় বছরের পর বছর। এ ধরনের সানি মামলা বাংলাদেশে ব্যাপক পরিমাণে করা হয়।
আবার দেখা যায় একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন, আপিল ও ছানি মামলার তমাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রতিনিধিত্ব মামলায় একই সাবজেক্ট ম্যাটারে নতুন কোনো ইস্যুতে আপিল দায়ের করে মূল মামলায় ফেরত যাওয়ার আবেদন করা হয় এবং আদালত তা মঞ্জুর করেন; ফলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হতে থাকে একটি মামলা।
৬) অন্তবর্তীকালীন দরখাস্ত দাখিলের প্রবণতায় মামলাজট
এছাড়া মামলা চলাকালীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রদত্ত আদেশ অনেকক্ষেত্রেই মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন আদালতে মামলার বিচার চলাকালে এরূপ অন্তর্বর্তীকালীন দরখাস্ত ও আদেশ যেভাবে মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে তার কয়েকটি নমুনা সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে:
(১) মামলার বিচার পর্যায়ে discovery inspection, injunction এর দরখাস্ত আনয়ন
(২) এডভোকেট কমিশনের নিয়োগে বিলম্ব
(৩) পুনঃপুনঃ কমিশনের দরখাস্ত আনয়ন ও কমিশনার নিয়োগ
(৪) কমিশন রিপোর্ট দাখিলে অস্বাভাবিক বিলম্ব এবং প্রায়শঃই রিপোর্টের উপর আপত্তি প্রদান।
আবার অনেক ক্ষেত্রে এ ধরণের দরখাস্তসমূহের ওপর আদেশ প্রদান করা হলে তার বিরুদ্ধে রিভিশন দাখিল করা হয় এবং ক্ষেত্র বিশেষ উক্ত রিভিশনসমূহ নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়, ফলে সামগ্রিকভাবে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বৃদ্ধি পায়।
৭) সাক্ষ্য উপস্থাপনে অনীহা
দেশের বিভিন্ন জজশিপের বিচারকবৃন্দের সহিত আলোচনা ও মামলার পরিসংখ্যানে মামলার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক সাক্ষ্য উপস্থাপনে অনীহার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রতিফলিত হয়। এ ব্যাপারে সকল আইনজীবীর অফিস অধিকতর সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করা প্রয়োজন তাছাড়া দ্রুত মামলা নিস্পত্তি সম্ভবপর নয়।
০৮) এজলাস সংকট
দেশের প্রতিটি উপজেলার জন্য একটি করে আদি এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানি আদালত থাকলেও জেলা জজ আদালতসমূহে সমসংখ্যক এজলাস কক্ষ নেই। যার ফলে প্রায় সব জাজশিপেই একাধিক বিচারককে একই এজলাস ও খাস কামরা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়। অনেক জাজশীপে জেলা জজ আদালত পরিদর্শনকালে এজলাস ভাগাভাগির বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। একই এজলাস একাধিক বিচারক কর্তৃক ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার ফলে একজন বিচারকের একটি কর্মদিনের মোট কর্মঘণ্টা বিভাজ্য হয়ে যায়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারাধীন মামলার শুনানীতে যে সময় ব্যয় করা প্রয়োজন, তা ব্যয় করা সম্ভবপর হয় না। তাছাড়া এতে কাজের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়, কাজের স্পৃহা নষ্ট হয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভবপর হয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অধস্তন নিম্ন আদলতসমূহের মৌলিক তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। অধস্তন আদালতসমূহ The civil courts Act 1887,Code of Civil procedure 1908, এবং Code of Criminal Procedure 1898, The evidence Act 1872 অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। দেওয়ানি বিষয়গুলোর আদালতকে জেলা জজ এবং নিম্নে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ। ফৌজদারি বিষয়সমূহের আদালতকে দায়রা আদালত এবং নিম্নে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসমূহ গঠন ও কার্যাবলি আলাদা হলেও আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একই বিচারকগণ একই সাথে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলার বিচার করে আসছেন।
আলাদা এজলাস বা কোর্ট নয় বরং যখন একজন জজ ক্রিমিনাল মামলার বিচার করেন তখন তিনি দায়রা জজ এবং আদালতের নাম দায়রা জজ আদালত আবার যখন একজন বিচারক দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ এবং আদালতের নাম জেলা জজ আদালত।
একই বিষয় যুগ্ম এবং অতিরিক্ত জেলা/দায়রা জজদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নির্বাহি বিভাগ হতে আলাদা হওয়ার ফলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটগণ একই সাথে দেওয়ানি মামলার বিচার করেন না বা সহকারী বা সিনিয়র সহকারী জজগণ দেওয়ানি বিষয়সমূহের সাথে সাথে একই সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেসি না করলেও বিচারিক পদন্নোতিতে রদবদল করে ক্রিমিনাল এবং দেওয়ানি দুই বিষয়েই বিচার করানো হয় এবং দক্ষতা বাড়ানো হয়। এমনকি পরবর্তীতে বিশেষ আইনের অধীনে দ্রুত বিচার নিশ্চিতে প্রতিস্থাপিত ট্রাইবুন্যালগুলিও একই জেলা জজ বা দায়রা /অতিরিক্ত/যুগ্ম জজ বিচারকগণকে দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে! একই বিচারক কর্তৃক একাধিক বিষয়ে বিভিন্ন আদালত পরিচালনা করায় যথেষ্ট সময়ে একটি মামলার সমাধান আসা অনেক কঠিন। যার ফলে মামলাজটে তা অন্যতম একটি কারণ।
ফৌজদারি আইন:
কমন ল আইনব্যবস্থায় ফৌজদারি মামলায় বিলম্বের পেছনে বিচারকশূন্যতা বা আদালত অবকাঠামো যতোটা না দায়ী তার থেকে বেশি দায়ী রয়ে যায় তদন্ত সংস্থা হিসেবে পুলিশের সক্ষমতা, মামলা প্রমাণে প্রসিকিউশনের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতার ওপর। মামলা প্রমাণে বা অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানে পুলিশ ও রাষ্ট্রপক্ষ/ প্রসিকিউশনের ভূমিকায় ঠিক করে দেয় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে নাকি বিলম্ব হবে।
অপরাধের তদন্তে তদন্তকারী সংস্থাসমূহের অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের প্রবণতা:
ফৌজদারি কার্যবিধিতে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শুরুতে মামলা নিম্পত্তিতে প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। শুধু ফৌজদারি কার্যবিধি নয় অন্যান্য বিশেষ আইনে দায়েরকৃত মামলা সঠিক সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় মামলা বিচার ও নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়।
নারাজি দরখাস্ত শুনানিতে সময়ক্ষেপণ:
অনেকসময় দেখা যায় পুলিশ বা অন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর তা ত্রুটিপূর্ণ বা সঠিক হোক সেটি না মেনে মামলার অভিযোগকারী বা বাদী আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দরখাস্ত দাখিল করে থাকে। এবং বিচার এড়াতে যেকোনো পক্ষ উক্ত নারাজি দরখাস্ত শুনানিতে অহেতুক সময় নেয়। যেখানে একটা উল্লেখযোগ্য সময় নষ্ট হয় এবং মামলার বিচার সঠিক সময়ে শুরু করা সম্ভব হয় না।
আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা:
এ কথা অনস্বীকার্য যে, দেশে administration of criminal justice প্রতিষ্ঠায় যথাযথ সাক্ষী উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ। সমগ্র দেশের আদালতসমূহে ফৌজদারি মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার প্রধান কারণ ফৌজদারি মামলার বিচার স্তরে উন্নীত হওয়ার পরে আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। এর মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার অনুপস্থিতির হার সর্বাধিক। এরপরেই রয়েছে ফৌজদারি মামলায় জব্দকৃত আলামত প্রদর্শন করার জন্য অত্যাবশ্যক জব্দ তালিকার সাক্ষীদের অনুপিস্থিতি ও মেডিকেল অফিসারের অনুপস্থিতি।
খ) পলিসি বা নীতিনির্ধারণ জনিত কারণ
ক. বিচারক অপ্রতুলতা ও আদালত সংখ্যা:
১. বিচারক বৃদ্ধি ও বিচার বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে মামলাজট নিরসনে উদ্যোগ বা পলেসি সরকারকে নিতে হবে। বিসিএস প্রশাসনে প্রতিবছর সাধারণ ও টেকনিক্যাল ক্যাডারে যেখানে ২০০০ জন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে অথচ বিজেএস এর মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ১২০ জনের বেশি নিয়োগ দিচ্ছে না সরকার। অথচ বিচার প্রশাসনে বিচারক স্বল্পতা তীব্র। বিচারক স্বল্পতা ও ব্যাপক বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত উচ্চারিত হলেও সরকার এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে আসলে কতোটা ভাবার বিষয়। কিন্তু, বিদ্যমান বিচারক সংকট নিরসনে অতিদ্রুত আরও বিচারক নিয়োগ অতীব জরুরি। বর্তমান বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই সময়সাপেক্ষ ও জটিল। প্রায় প্রতিবছরই বিচারক নিয়োগে সার্কুলার হলেও আবেদন থেকে শুরু করে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর লেগে যাচ্ছে। ফলে বিচারক সংকটের সহসাই সমাধান হচ্ছে না।
একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি একবার বলেছিলেন আমেরিকার ৩২ কোটি জনসংখ্যার জন্য ৮৬,০০০ বিচারক থাকলে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের জন্য অবশ্যই ৪৩ হাজার বিচারক থাকা উচিৎ। তিনি তখন বিচারক সংখ্যা অতিদ্রুত ৫ হাজারে উন্নীত করারও তাগিদ দেন। যেকোনো বিচারে ৫ হাজার বিচারক পর্যাপ্ত ধরলেও বর্তমানে প্রায় ২ হাজার বিচারক কর্মরত আছেন। নিয়োগের এমন ধারা চললান থাকলে আরও ৩ হাজার বিচারক নিয়োগ হতে আরও কয়েক যুগ লেগে যাবে। তখন দেশের মামলাজট কোথায় পৌঁছবে তা সকলেরই অনুমেয়!
২. সারাদেশে জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারক শূন্যতা কাটাতে স্পেশাল বিসিএসের মত স্পেশাল বিজেএস পরীক্ষা হতে পারে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও মানসম্মত আইনের ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা আসছেন। তারা নিঃসন্দেহে মেধাবী ও বিচারিক পেশার প্রতি আগ্রহী। শিক্ষার্থীদের যোগান ও বিচার বিভাগের অবস্থার কথা বিবেচনায় একসাথে ৩০০-৫০০ বিচারক নিয়োগ করা যেতেই পারে।
৩. দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচারক সংকটের মাত্রা একেক রকম। বড় জেলা শহরগুলোতে বিচারক সংকট কম থাকলেও ছোট ও স্বল্প আধুনিক জেলা শহরে বিচারক সংকট প্রকট।
উত্তরবঙ্গের এক জেলায় ১৩টি সহকারী জজ আদালতের জন্য বিচারক আছেন মাত্র পাঁচজন! একেকজন সহকারী জজ ২-৩টি আদালতের ভার বহন করছেন। ভারপ্রাপ্ত আদালতের মামলা নিষ্পত্তি সাধারণত তেমন হয় না তাই ওই আদালতগুলোতে মামলাজট বাড়ছেই। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতেই বাস্তবতা এমনই। শুধু তাই নয় বড় জেলাগুলোতেও অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী/সহকারী জজ আদালতগুলোতে বিচারক সংকটের কারণে বিচারক পদায়ন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সরকার নতুন নতুন জেলা উপজেলা বা থানা সৃজন করলেও সেখানে সহকারী জজ/ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদ সৃষ্টি করছে না। সেখানে একজন বিচারকের ওপরে একাধিক উপজেলা বার থানার দায়িত্ব পড়ে যায় এবং মোকদ্দমার জট লেগে যায়।
শুধু তাই নয় বড় জেলাগুলোতেও অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী/সহকারী জজ আদালতগুলোতে বিচারক সংকটের কারণে বিচারক পদায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে সে আদালতগুলোর মামলাও দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন রয়ে যাচ্ছে।
এতো গেল জজশিপের কথা। এবার ম্যাজিস্ট্রেসির প্রসঙ্গে আসা যাক। জজশিপের মতোই ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারক সংকট প্রকট। এই সংকটের দুটো দিক রয়েছে। অনেক জেলায় অরগানোগ্রামে নির্ধারিত সংখ্যক বিচারক নেই আবার অনেক জেলায় উপজেলার সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৎসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নেই। যেমন একটি জেলায় ১৭টি উপজেলা হলেও ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন মাত্র পাঁচজন! ৪. বিচারক নিয়োগ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে এলেই অনেকে বিচার বিভাগের বিদ্যমান অবকাঠামো সংকট তথা এজলাস ও খাসকামরা সংকটকে সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু, এ সমস্যার সমাধান একটি সময়সাপেক্ষ বিষয় যার জন্য মামলাজট থেকে থাকবে না। তাছাড়া বর্তমানে বিচার বিভাগে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে।
বিচারকের অভাবে আদালতের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার চেয়ে দুজন বিচারক শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দুটি আদালতের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে করোনাত্তোর এই সময়ে বর্তমান মামলাজটের বিভীষিকা কমাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৩০০-৫০০ বিচারক নিয়োগ করা হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু তদারকির মাধ্যমে স্বল্পসংখ্যক বিচারক দিয়ে পাহাড়সম মামলাজট নিরসন সম্ভব নয়, যদিনা সঠিক কর্মবণ্টন করা হয়। তাই মামলাজট নিরসনে বিচারক বৃদ্ধিই হোক প্রথম উদ্যোগ!
খ.বিচার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ:
সাধারণ মানুষের দ্বারে বিচার পৌঁছে দিতে উপজেলাভিত্তিক আদালত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আলাদা আদালত গঠন করতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অস্থায়ী বেঞ্চ থাকতে হবে। এই পলিসি ও নীতিমালাগত সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন।
গ) সামাজিক ও অন্যান্য কারণ:
আইনজীবীর মনোভাব:
নিম্ন আদালতের অধিকাংশ আইনজীবীর ব্যক্তিচিন্তা হলো মক্কেলকে মামলা করতে বলা বা করতে উৎসাহিত করা যেখানে মামলার ভবিষ্যত কি হতে পারে বা মেরিট কি হবে তা বিবেচনা করা হয় না, এবং এই মামলাকরণকে একটি কারেন্ট আয়ের উৎস বলে মনে করা হয়। নিয়মিত হাজিরাতে আয় হচ্ছে বিধায় অনেক ক্ষেত্রেই শুনানি করে শেষ করেন না। মামলায় মক্কেল আদৌও জিতবে কিনা বিষয়টি ততোটা গুরুত্ব পায় না। এ কারণেই মামলাজট এখন প্রায় ৩৯ লাখ।
আদালত প্রশাসনের দুর্নীতি
মামলাজটের পেছনে অন্যতম আরেকটি কারণ হলো আদালত প্রশাসনের দুর্নীতি। সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে একটি সাধারণ মানুষকে যেমন বেগ পোহাতে হয় কাগজ চালাচালিতে সময়ক্ষেপণ হয় উৎকোচ ছাড়া ফাইল নড়ে না। আদালত প্রশাসনে আসীন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম নয়। অধস্তন আদালত হতে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত লবিংস না থাকলে মামলার ফাইল বেগ পায় না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। অনেক পণ্ডিতগণ মনে করেন মামলাজটের পেছনে বিচারক অপ্রতুলতা যতোটা না দায়ী, আদালত প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি কাঠামোগত ক্রটি, আদালত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাব বহুলাংশে মামলাজট বৃদ্ধির কারণ।
প্রতিযোগিতামূলক বিচার পদ্ধতি
কমন ল আইনব্যবস্থায় দেওয়ানি প্রতিকারের ক্ষেত্রে বাদী বিবাদী; ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে বা রাষ্ট্রপক্ষ/প্রসিকিউশন ও অভিযুক্তের উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের ওপর মামলার ফলাফল নির্ভর করে। প্রসিকিউশন বা তদন্ত কর্মকর্তা তথা পুলিশ, মামলা প্রমাণে গড়িমসি করলে, নিষ্ক্রিয় হলে, প্রসিকিউশন শক্ত না হলে মামলা আগাবে না। ফলে মামলা বিলম্ব হতে বাধ্য, এখানে বিচারকের কিছু করার নেই। এই ব্যবস্থায় আদালত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বারান্দায় ন্যায় পৌঁছে দেবে না। সুতরাং ফৌজদারি মামলায় পুলিশ, প্রসিকিউশনের দুর্নীতি রোধ করে সক্ষম ও জবাবদিহি অঙ্গ হিসেবে গড়ে না তোলা মামলাজটের অন্যতম কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা উভয়ক্ষেত্রে পুলিশ বা অভিযোগকারীর উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা বা মিথ্যা মামলা যেখানে মামলার প্রাথমিক মেরিট অনুপস্থিত। এসব অপ্রয়েজনীয় মামলায় আদালতের সময় নষ্ট হয়।
উত্তরণের উপায়
মামলাজট সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কিভাবে বের করতে হবে বা খুঁজতে হবে তার কিছু গাইডলাইন তুলে ধরব।
১) একটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার শুরুতে প্রাথমিক নিরপেক্ষ পর্যালোচনা জরুরি যেখানে একটি স্বাধীন বিচারবিভাগীয় সেল দ্বারা মামলার প্রাইমেসি যাচাই করে মামলার বেসিস আছে কিনা তা নিশ্চিত করার বিধান থাকতে হবে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় মামলা এড়াতে।
২. দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তিতে উৎসাহিত করতে হবে। আইনের কাঠামোর মধ্যে বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। অবস্থার উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক ADR প্রক্রিয়া গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা জরুরি মধ্যস্তাকারী হিসেবে প্রশিক্ষিত আইনজীবী আইন ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের সরকারিভাবে নিয়োগ দিতে হবে ও বেসরকারিভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৩. বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের বিশেষ পলিসি জরুরি।
৪. ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আপষের বিধান ধারাকে (৩৪৫) যথাযথভাবে ব্যবহার করতে আদালত সংযুক্ত বিকল্প বিরোধ সেল গঠন করতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ৩৪৫ ধারায় বর্ণিত অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে প্লি বার্গেইনিং পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৫. বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক বিচারক নিয়োগ। বিজেএস পরীক্ষা মাধ্যমে শুধু সহকারী জজ নিয়োগই নয়, পিপি, আদালত কর্মকর্তা, সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার, গ্রামপর্যায় বিচারক বা মধ্যস্ততাকারী নিয়োগ করতে হবে।
৬. পৃথক এজলাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে অভাব নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ জরুরি আপাততঃ জেলা প্রশাসকের অফিসে অবস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটগণের এজলাসে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অস্থায়ী এজলাস স্থাপন করা যেতে পারে।
৭. আদালত প্রশাসনে ও আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার, ইন্টারনেট সরঞ্জামাদি, স্টেনো টাইপিস্ট, প্রসেস সার্ভার নিয়োগ।
৮. পর্যাপ্ত বইপুস্তক সরবরাহপূর্বক প্রতিটি আদালতের লাইব্রেরির আধুনিকীকরণ।
৯. প্রত্যেকটি জেলায় একটি কমিটি গঠনপূর্বক প্রতি তিন মাস অন্তর মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অন্যান্য বিচারকগণ, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি ও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ।
১০. প্রতি মাসে জেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল বিচারকের উপস্থিতিতে মাসিক পর্যালোচনা সভা আয়োজন করতঃ বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
১১. জাতীয় পর্যায়ে Case Management Authority প্রতিষ্ঠা করে দেশের সকল আদালতে বিচারাধীন মামলার পরিক্রমা পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
১২. আদালতে সহজে প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে মামলা মোকদ্দমায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা তথা ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়ন করতে হবে। bdjdj1984du@gmail.com
১৩. বাংলাদেশের বাস্তবতায় ও পরিস্থিতিতে বিপুল জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে আমাদের পদ্ধতিগত শতবর্ষী আইনগুলো সংশোধন ও পরিবর্তন করতঃ বিশেষ গবেষণা ও সুপারিশ করতে কমিটি গঠন করতে হবে।
লেখক: কলামিস্ট, কবি ও আইন গবেষক
ইমেইলঃ bdjdj1984du@gmail.com