অবৈধ ৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়ে বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আজ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন খুরশিদ আলম খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
গত ২৮ জুন পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ার ঘটনায় বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনকে সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে পার্থ গোপাল বণিকের জামিন দেওয়ার বিষয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ চাওয়া হয়।
এর আগে গত ১৭ জুন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে জামিন চাইতে আসেন পার্থ গোপাল বণিক। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আদেশ পরে দেবেন বলে জানান। কিন্তু ওই দিন রাত সাড়ে ৮টায় তার জামিন আদেশ পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে। অথচ এ মামলায় দুদকের প্রধান কৌশলী জামিন আদেশ জানতে পারেন রাত ৯টায়। মামলা নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টের নির্দেশনায় মনযোগের বদলে দ্রুত এমন জামিন আদেশকে নজিরবিহীন বলছেন আইনজীবীরা।
এর আগে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চ পার্থকে জামিন দেয়নি। সবশেষ ২০২০ সালের ৩ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি শেষে পার্থের জামিন নামঞ্জুর হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপাল বণিকের নিজ ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এর পরদিন ২৯ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ পার্থ গোপাল বণিককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২৪ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন চার্জশিট দাখিল করেন।
এ মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, পার্থ গোপাল বণিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন।এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
পার্থ গোপাল বণিক ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০২ সালে তিনি জেল সুপার পদে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর তিনি কারা উপমহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান।