বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা দুইটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।
বুধবার রাতের ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার পুলিশ ও ইউএনওর পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটে।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ মিঞা বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
উপকমিশনার আলী আশরাফ মিঞা বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে ২৮ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় হুকুমের আসামি (নির্দেশদাতা) করা হয়েছে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মুনিবুর রহমানের লিখিত অভিযোগটি বৃহস্পতিবার দুপুরে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যান বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। এরপর লিখিত অভিযোগটি আইনগত প্রক্রিয়া শেষে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
ইউএনও তার দায়ের করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুন রাতের আঁধারে ছিঁড়ে ফেলায় বাধা দিতে গেলে বুধবার রাতে তার সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। ছাত্রলীগের দাবি, এ সময় তাদের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এ ছাড়া সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরির্দশক (এসআই) মো. জামাল বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নগরে পুলিশ, র্যাবের টহল জোরদারের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, ১০ প্লাটুন বিজিবির সদস্য মোতায়েন হবে। বিজিবির সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকবেন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গতকাল বুধবার রাতে দুই দফায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী বাসভবনে হামলা চালান বলে অভিযোগ ইউএনওর। হামলায় ইউএনওর বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। ছাত্রলীগের দাবি, এ সময় তাদের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহমেদ ওরফে বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান মুনিম, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপরও চড়াও হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব লাঠিপেটা শুরু করে।