আবদুল্লাহ আল ফুআদ
সমাজবদ্ধ পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রায় প্রতিবেশীর গুরুত্ব অপরিসীম। দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনায় এ প্রতিবেশীই মানুষের নিত্যসঙ্গী। গ্রামীণ জীবনে প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা সহমর্মিতা তুলনামূলক বজায় থাকলেও ইট-পাথরের শহরে তা অনেকটাই হতাশাজনক। ইসলাম প্রতিবেশীর হক ও অধিকারকে পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের পাশেই স্থান দিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
হাদিসে প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান ও সদাচরণকে ঈমানের অনুষঙ্গ সাব্যস্ত করা হয়েছে। হজরত আবু শুরাইহ (রা.) বলেন, ‘আমার দুই কান শ্রবণ করেছে, আমার দুই চক্ষু প্রত্যক্ষ করেছে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)
অন্যত্র বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৫)
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৩)
ইসলাম প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার ও সদ্ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের অভাব-অনটনে পাশে থাকার প্রতিও উদ্বুদ্ধ করেছে। ক্ষুধার্ত প্রতিবেশী রেখে যে মুমিন উদরপূর্তি করবে ইসলাম তাকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১২)
দরিদ্র ও অসহায়কে খানা খাওয়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই প্রতিবেশী দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তা ছাড়া কোরআন মজিদে ‘ছাকার’ নামের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে দরিদ্রদের খানা না খাওয়ানোকে অন্যতম গণ্য করা হয়েছে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, (জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে) “কোন বিষয়টি তোমাদের ‘ছাকার’ নামের জাহান্নামে ঠেলে দিয়েছে? (তারা বলবে) ‘আমরা নামাজ পড়তাম না এবং দরিদ্রকে খানা খাওয়াতাম না।’” (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৪)
পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাদিয়ার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর। এতে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান কর। এর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৪)
প্রতিবেশীদের খুব সামান্য কিছু হলেও হাদিয়া দিতে পারি আমরা। সেটা সুস্বাদু তরকারির ঝোলও হতে পারে।
এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বললেন, হে আবু জর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক কোরো। (মুসলিম, হাদিস : ২৬২৫)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদেরকে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ করতে নিষেধ করেছেন। ‘হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরির খুরের মতো নগণ্য বস্তুও হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৭)
বিশ্বব্যাপী চলমান এ সংকটপূর্ণ সময়ে আমাদের সবার উচিত প্রতিবেশীদের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা রাখা। সর্বোপরি তাদের অভাব-অনটনে সাহায্য-সহায়তার হাতকে প্রসারিত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামী গবেষক