অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে মারা যান তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর একই বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
একই মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আরও আটজনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করার আদেশ দেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)।
মামলা দায়েরের পরদিন ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
সিনহা হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পেয়ে পুলিশের দায়ের করা আরেক মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে গ্রেফতার করা হয় মামলার আরেক আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।
মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
দীর্ঘ চার মাস তদন্ত শেষে ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ২০২১ সালের ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন এ মামলার একমাত্র পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব। চলতি বছরের ২৭ জুন এ মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনপূর্বক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।-
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
মামলার অগ্রগতি নিয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ মামলার চার্জ গঠন করেন। এ সময় বিচারক ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই এ মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে তা আর হয়নি।
আদালতে বাদীপক্ষের ১০ জন সাক্ষীর বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল জানিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ এখনও দেওয়া হয়নি। এ আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতে পুলিশের পক্ষ থেকেও দুটি মামলা করা হয়। এর একটি মাদক মামলা এবং অন্যটি অস্ত্র উদ্ধারের মামলা। সেই মামলায় আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গে টেকনাফে থাকা শিপ্রা দেবনাথ ও শাহেদুল ইসলাম সিফাতকে। পরে মামলা থেকে সিফাতকে অব্যাহতি দিলেও শিপ্রার অব্যাহতির বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়েছে পুলিশ।
সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এরপর থেকে বাদী অসুস্থ থাকায় এ মামলার কার্যক্রম ঝুলে আছে।
এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে সরকারের পক্ষ থেকেও চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটিতে প্রধান করা হয় চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানকে। কমিটিতে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতিনিধিও। সাতদিন তদন্ত শেষে তারাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।