প্রিয় রহিম চাচা,
জানি না চিঠিটা আপনার হাতে পৌঁছাবে কিনা?কিন্তু না লিখেও আর পারলাম না।আমাকে মনে আছে কিনা জানি না?ঐ যে আগে স্কুল ছুটির পর রোজ ম্যাজিক বল কিনতে আসতাম?হয়ত মনে করতে পেরেছেন,হয়ত পারেন নি।
আসলে আমি ম্যাজিক বল কিনতে আসতাম,কিনতামও। কিন্তু আমি যে চুরি করে নিয়ে যেতাম …তা কি জানতেন ?নাকি জেনেও না জানার ভান করে থাকতেন…..তা আজও জানা হল না।তবে তখন আপনাকে অনেক বোকা মনে হত,আর আমি নিজেকে অনেক চালাক ভাবতাম।আজ জীবনচক্রের হিসাব নিয়ে যখন বসি তখন বুঝি কে চালাক আর কে বোকা ছিল…..যাই হোক না কেন বাসায় যখন রংবেরঙের বলগুলো পানিতে ফুলে উঠত তখন সত্যি আমার অবুঝ মন আপনার কথা ভাবত।প্রতিটা বলের মধ্যে আপনার সেই মধু মাখা “বাবা” ডাকটা বাজত।
সেই স্কুলের ছোট ছেলেটা আজ বড় হয়েছে।ভার্সিটিতে পরছে।টিউশনি করিয়ে রোজগার করছে।তাইতো এতগুলো বছর পর আবার আপনার দোকানে।তবে মুখের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সেই কথা গুলো বলতে পারলাম না।বলতে পারলাম না আমায় মাফ করে দিও চাচা।বলতে পারলাম না আমার জন্য দোয়া করিও।কাপুরুষের মত তাই চিঠিটাই লিখলাম।খামের ভেতর আমার জীবনের প্রথম টিউশনের চার হাজার টাকা ।জানি না এই টাকাটা তোমার কাজে লাগবে কিনা? ক্ষমা করলে কিনা আমি জানি না,তবে আমার ছাত্রজীবনের প্রথম উপার্জন তোমায় দিতে পেরে আমি ধন্য।
ইতি তোমার
নাম না বলা সেই বালক
সেই রহিম চাচা মারা যাওয়ার ১০ দিন পর দোকানটা খোলা হয়।আর তাতেই পাওয়া যায় চিঠিটা।হয়ত টিনের ঝাপের ফুটো দিয়ে ফেলে দিয়েছিল নাম না বলা সেই বালকটা।
লেখকঃ মুহাঃ তাসদিকুল হক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, 017176726901