নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছেন মহানায়ক হিসেবে : মোস্তফা
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। বাঙালির হৃদয়ে আজও যিনি বেঁচে আছেন ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একচুলও ছাড় দেননি বরংচ বর্গী ও বেনিয়াদের সাথে করেছেন লড়াই তাদের মধ্যে প্রজ্বল নক্ষত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। দেশপ্রেমে কেউ যদি উদ্বুদ্ধ হয়ে মৃত্যুহীন হতে চায় তবে তার জন্য উজ্জল দৃষ্টান্ত শহীদ সিরাজউদ্দৌলা।
শনিবার (৩ জুলাই) বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সরাজউদ্দৌলার ২৬৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নবাব সিরাজকে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। ইচ্ছা করলে তরুণ নবাব ব্রিটিশ বণিকদের বাণিজ্য সুবিধা কিছুটা বৃদ্ধি করে এবং তাদের ঔদ্ধত্য সহ্য করে বহু যুগ শান্তিতে নবাবী করে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি সব শত্রুকে চিহ্নিত করে তাদের চিতরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেশের স্বাধীনতাকে মজবুত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা পারেননি। আমদের ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস এবং আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা যদিও সাফল্য লাভ করেন নাই কিন্তু তিনি স্বদেশকে তুলে দেন নি বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাতে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি বরং তাকে এজন্য তাকে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে হয়েছে।
ন্যাপ মহাসচিব বলেন, পলাশীর ষড়যন্ত্রে যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার শোচনীয় পরাজয় ঘটলেও ইংরেজরা ক্ষান্ত হয়নি সেদিন। এরপর তারা নবাবের চরিত্রে নানাভাবে কলঙ্কলেপন করতে থাকে, অন্ধকূপ হত্যা, লাম্পট্য ইত্যাদি। সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে কলকাতায় একটা মনুমেন্ট তৈরি হয়েছিল। তার নাম ছিল হলওয়েল মনুমেন্ট। পরবর্তিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ৩রা জুলাই ১৯৪০-এ হলওয়ের মনুমেন্ট অপসারণের জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দিলেন। বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানেরা এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে ইংরেজদের বাধ্য করে ঐ হলওয়ের মনুমেন্ট তুলে নিতে। পরবর্তিতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর উদ্যোগে ২৩শে জুন প্রথম পলাশী দিবস উদযাপিত হয়েছিল কলকাতায়। সাথে ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং মওলানা আকরম খাঁ।
তিনি বলেন, আজ ২০-৩০ বছর আগেও নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস চর্চা ও সিরাজকে নিয়ে নাটক-সিনেমা বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত ছিল। আমাদের ঐতিহ্য সাহিত্য সাংস্কৃতি ও রাজনীতিকে আমরা নিজেরাই কবর রচনা করছি। আজ-কাল দেশপ্রেমিক সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস চর্চা ও নাটক-সিনেমা নেই বললেই চলে। আমাদের উচিত সিরাজউদ্দৌলার প্রকৃত ইতিহাস ও দেশপ্রেমের ঘটনাগুলো জাতির সম্মুখে তুলে ধরা। সিরাজের ইতিহাসের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হবে।
জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সোলায়মান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, যুগ্ম মহাসচিব এহসানুল হক জসীম, কৃষক মো. মহসীন ভুইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মতিয়ারা চৌধুরী, সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী সালমা আক্তার, নির্বাহী সদস্য মহাবুবুল আলম, ছাইদুর রহমান, বেলাল হোসেন প্রমুখ।