এক বছর আগেই প্রস্তুত হয়েছে হলি আর্টিজান মামলার পেপারবুক। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত হলেও করোনার কারণে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক বছর ধরে সেই পেপারবুক পড়ে আছে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায়। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলতি বছরে হাইকোর্টে শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়। ঐ রায়কে আমরা সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য রাখব। কারণ ঐ রায়টি সঠিক রায়, জঙ্গিদের যে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সঠিকভাবেই দিয়েছে বিচারিক আদালত। তিনি বলেন, করোনার কারণে স্বাভাবিক বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ডেথ রেফারেন্স শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জঙ্গিরা যে উদ্দেশ্যে হামলা করেছিল তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হয়নি।
চার বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটেছিল নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনা। ঐ হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা দেশি বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জনকে হত্যা করেন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলায় সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।
রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করা এবং আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা ঐ নারকীয় হামলা চালিয়ে দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নির্মম ও নিষ্ঠুর ঐ হামলার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান ও সারোয়ার জাহান। কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। রায়ে আরো বলা হয়, জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল হলি আর্টিজান বেকারি হামলায়। বিদেশিদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসএর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ জঙ্গি হামলা করা হয়। দেওয়া হয় সাত জঙ্গিকে ফাঁসি।
ফাঁসির রায় কার্যকরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। ডেথ রেফারেন্স নথি পেয়েই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য গত বছর পেপারবুক প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কিন্তু করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা। ফলে পেপারবুক প্রস্তুত হলেও এখনই শুনানি হচ্ছে না এই চাঞ্চল্যকর মামলার।