বর্তমান সরকার একটা অমানবিক ও জনবিরোধী সরকার মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের অধিনে কোন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে জনগন বিশ্বাস করে না। এই সরকারের জনগনের প্রতি নূণ্যতম দয়া-মায়া বলে কিছু নাই। দেশের জনগণ ধ্বংস হয়ে যাক তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। যে কোন মূল্যে সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়।
শুক্রবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সোনার বাংলা পার্টি আয়োজিত ৮০ দশকের ছাত্র নেতা, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীরাজুল ইসলাম আব্বাসীর ১২তম মৃত্যুদিবস উপলক্ষে ” ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক দল ভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার গঠনে আলোচনা ও স্মরণসভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর জনগনের ভৈাটাধিকার একসাথে চলে না। যতবার গণতন্ত্র হোচট খেয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। তারা বার বার জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছে। ‘লকডাউন’ খেলা শেষে এখন ‘শাটডাউনের’ নামে নতুন খেলা শুরু করে সরকার জনগনকে অন্ধকারে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সরকার মূলত জাতির পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় একটি দেশ, জাতি, রাষ্ট্র চলতে পারে না। শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে নূণ্যতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজপথে নামতে হবে।
সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুন নুরের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সৈয়দ হারুন- অর-রশীদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ জাসদ সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারন সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাগপা প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, বাংলাদেশ জনদল চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, গণমুক্তি পার্টি সাধারন সম্পাদক আবদুল মোনেম, পিপলস গ্রীণ পার্টি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ খান, নাগরিক ভাবনা আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ জাসদ সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রয়াত মীরাজ আব্বাসীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্বের দাবীটি জপ্রিয় করতে হবে। দাবী আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সরকার প্রমান করেছে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই পরিবর্তন সম্ভব।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারন সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, মীরাজ আব্বাসী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনগনের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। অবহেলিত-নির্যাতিত গণমানুষের মুক্তির লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সাহাসী নেতৃত্ব।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতিহীন অপরিকল্পিত লকডাউনে প্রত্যাশিত ফল আসে নাই। অপরিকল্পিত ‘শাটডাউন’এও কোন ফল আসবে না। জনগনের খাধ্যের ণিম্চয়তা না থাকলে তাদের ঘরে বন্দি করে রাখা যাবে না। লকডাউনের আকস্মিক ঘোষণায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী- মেহনতি মানুষ ও দিনমজুরেরা চরম বিপদে পড়েছে। স্বল্প আয়ের এই সমস্ত মানুষের কাছে খাবার ও নগদ অর্থ পৌঁছাতে না পারলে এই মানুষদের দুর্দশা চরমে উঠবে এবং সেক্ষেত্রে লকডাউনও বিশেষ কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মীরাজ আব্বাসী একটি শোষনমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজনীতি করেছেন আজীবন। অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নাই। যা বিশ্বাস করতেন তা স্পষ্টভাবেই বলতেন। বিশ্বাসের সাথে প্রতারনা করেন নাই।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে গণতন্ত্র, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, শোষণ মুক্তি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়নি। সাধারণ মানুষের জীবন-ধারন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তারা প্রায় সব ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত। এসব কিছুই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী।
বাসদ কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, মিরাজ আব্বাসী যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন সে গণতন্ত্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। নির্বাচিত হলেই সরকার গণতান্ত্রিক হয় না। আর এই সরকারতো জনগনের ভোটেই নির্বাচিত নন, তারা কিভাবে গণতান্ত্রিক হয় ? অবৈধ সরকারের কাউকে অবৈধ বলার অধিকার থাকে না। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ আব্দুন নুর বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, জণমুক্তির আন্দোলনে মীরাজ আব্বাসীর অসাপ্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। জনগনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলনে থাকতে হবে।