পলাশীর বিপর্যয় তখনই ঘটেছিল যখন অর্থনীতির উপর থেকে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে গিয়েছিল মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, পলাশীর ট্র্যাজেডির জন্য যতটা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি দায়ী ঠিক ততটাই নবাবের কাছের লোকেরাও দায়ী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যের নামে এদেশে প্রবেশ করে অবশেষে দেশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। বাণিজ্যের নামে কেউ যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারসহ সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সজাগ থাকতে হবে।
বুধবার (২৩ জুন) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে ঐতিহাসিক পলাশী দিবসের ২৬৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদের পলাশীর প্রান্তরে কোনো যুদ্ধ হয়নি, হয়েছিল যুদ্ধের নামে প্রহসন। পলাশীতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল শুধু যার যা দায়িত্ব তা পালন না করার কারণে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সীমাহীন লোভ-দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের কারণে।পলাশীর মতো আজো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে
ন্যাপ মহাসচিব আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় আজও পলাশীর পদধ্বনী শোনা যাচ্ছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুর্শিদাবাদের পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধের নামে হয়েছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। আর এই খেলার মাধ্যমেই পলাশীতে অস্তমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য্য। সেদিন শাসকগোষ্টি ও দেশবাসী শুধু যার যা দায়িত্ব তা পালন না করার কারণে এবং সিরাজ-উদ-দৌলার মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সীমাহীন দুর্নীতি-লোভ ও দুর্বৃত্তায়নের কারণেই ইংরেজ বেনিয়াদের কাছে পরাজিত হয়েছিল জাতি। আজও শাসকগোষ্টি ও রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার কারণে দেশ সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, পলাশীর ট্রাজেডি বার বার আমাদের এই সতর্কবাণী শুনিয়ে যায়, দেশের আভ্যন্তরিন শত্রুরা বর্হি শত্রুর চাইতে অনেক বেশি ভয়ংকর। পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদকে ভুলে দেশের জন্য কাজ করতে হবে আমাদের। প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের থেকে মুক্ত রাখতে হলে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক নাগরিক গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। পলাশীর যুদ্ধের পতনের কারণগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সোলায়মান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, যুগ্ম মহাসচিব এহসানুল হক জসীম, কৃষক মো. মহসীন ভুইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মতিয়ারা চৌধুরী, সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী সালমা আক্তার, নির্বাহী সদস্য মহাবুবুল আলম, ছাইদুর রহমান, বেলাল হোসেন প্রমুখ।