বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মরত কোনো দেশীয় শ্রমিক করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তাদের চাকরি থেকে বের করে দিতে চান চীনা কর্মীরা। অন্যদিকে খনি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারি সংস্থা বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি (বিসিএমসিএল) তাদের জানিয়েছে, কোনো কর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে কোয়ারেন্টাইনশেষে কাজে যোগ দিতে পারবে। তবে এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে নিয়োজিত চীনা কোম্পানি সিএমসির কর্মীরা।
গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়ায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কর্মরত এক চীনা নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকেও।
বিসিএমসিএল সূত্র জানায়, খনিতে সব মিলিয়ে কাজ করে ১ হাজার ১০০ জন শ্রমিক। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ প্রথম শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েক জন করোনায় আক্রান্ত হয়। ব্যাহত হয় কয়লা উত্তোলন। এমন প্রেক্ষাপটে ৫০০-র বেশি শ্রমিককে খনি এলাকায় সার্বক্ষণিক রেখে খননকাজ এগিয়ে নেওয়া হয়। চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিক রয়েছেন শতাধিক। খনি সংশ্লিষ্ট সব বাংলাদেশি ও চীনা নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। গত ২৬ মে একজন চীনা কর্মী করোনা পজিটিভ হওয়ার পর সংক্রমণের উত্স নিয়ে সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
চীনা প্রকৌশলী-শ্রমিকরা জানান, খনি এলাকায় কঠোর লকডাউন এবং আসা-যাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকে তা সঠিকভাবে মানছেন না দীর্ঘদিন ধরে। গত ১ এপ্রিল নতুন করে ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে এসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও অনেক শিথিলতা ছিল। তাই সংক্রমণ রোধ করা যায়নি। চীনাদের দাবি, খনি এলাকার বাইরে শুধু বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই যাতায়াত রয়েছে। তাই কোনো শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে খনি থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং সে আর কাজে যোগ দিতে পারবে না। চীনাদের দাবিকে অমানবিক এবং অপেশাদার জানিয়ে তা পালন করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
গত ২৭ মে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সভায় বিসিএমসিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, বর্তমানে ৫৩৩ জন স্থানীয় শ্রমিক খনিতে কর্মরত রয়েছেন। দৈনিক প্রায় ৫ হাজার টন কয়লা উত্পাদিত হচ্ছে। খনিতে কর্মরত ১২২ চীনা নাগরিকের মধ্যে একজন ২৬ মে করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তার সংস্পর্শে আসা বাকি ১২১ চীনাদেরও পরে খনিতে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। কোয়ারেন্টাইনশেষে তারা কাজে যোগ দেবে। এমন প্রেক্ষাপটে চীনারা সবাইকে কোভিড টেস্ট করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। স্থানীয় শ্রমিক কেউ পজিটিভ পাওয়া গেলে তাকে বের করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু বিসিএমসিএল বলেছে, যেহেতু সবাই ডাবল ভ্যাকসিনেটেড। তাই তাদের কোভিড টেস্ট একবার হবে এবং পজিটিভ পাওয়া গেলে কোয়ারেন্টাইন করে পুনরায় কাজে যোগ দেবে। চীনারা এতে আপত্তি জানিয়েছে। ঐ সভার সভাপতি জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান কয়লা উত্পাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে চীনাদের সঙ্গে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে ফোনকল করা হলে বিসিএমসিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, তিনি অসুস্থ এবং চিকিত্সাধীন। কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন সরকার বলেন, বড়পুকুরিয়ায় কর্মরত শ্রমিকরা অত্যন্ত দক্ষ। তাদের কাজ থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। চীনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সহায়তায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমাধান করেছেন। তবে খনিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি।