আহম্মেদ কাওসার, পটুয়াখালী: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্যসহ সাতজনকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদের মেয়াদকালে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন পদে অনেক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে – এমন অভিযোগ এনে আইনি নোটিশ দিয়েছেন এক আইনজীবী। তবে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদকে নোটিশ দেওয়া হয়নি। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন গত ৩০ মে নোটিশ দেন। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ জুন সকাল ১০টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়। অন্যথায়, ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবি’র উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, রেজিষ্টার মো.কামরুল ইসলাম ও পবিপ্রবি’র কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহীন হোসেন এবং কৃষিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নওরোজ জাহান লিপি। এদের মধ্যে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও নওরোজ জাহান লিপি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী এবং লিপি অভিযুক্ত উপাচার্য হারুন-অর-রশীদের কথিত মেয়ে। এ সুবাদে উপাচার্য হারুন-অর-রশীদের মেয়াদকালে এ দম্পতি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বে ছিলেন মনিরুজ্জামান। অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই এবং নওরোজ জাহান লিপির দেবর মো. কামরুজ্জামান এবং শাহীন হোসেনের বড় বোন নাজমুন নাহারকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দুটি বাতিলের দাবি করা হয় নোটিশে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পবিপ্রবির একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জানিয়েছেন, অর্থের বিনিময়ে ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদের তিনটি বিভাগে তিনজন আইনজীবীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিন জনকেই তিনটি বিভাগে ঘুরেফিরে অংশগ্রহণকারী দেখানো হয়েছে। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনুষদের ডিন কিংবা চেয়ারম্যানরা অংশগ্রহণ করেননি।
পবিপ্রবির উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন,’বিষয়টি নিয়ে আমরা আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’তবে, অন্য নোটিশ প্রাপ্তরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, পবিপ্রবি’র প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মন্ডল। ওই পদে চাকরি দেওয়ার জন্য তার কাছে বিপুল অংকের অর্থ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলে তিনি প্রথম হয়ে ছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও নওরোজ জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দেবাশীষের কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। দেবাশীষ যে কোনো মূল্যে ওই চাকরি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে সাক্ষাৎকার বোর্ড অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে তাঁর কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বাড়তি পাঁচ লাখ টাকা যোগাড় করতে তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
সর্বোপরি দেবাশীষ ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় ওই চক্রটি রফিক উদ্দিন নামে আরেকজন নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে ওই পদে চাকরি দেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে দেবাশীষ জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন এবং তাঁর পরিবর্তে রফিক উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরে দেবাশীষ ২০১৮ সালের ১৪ মে কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও নওরোজ জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দন্ডবিধি ৩০৬ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে নোটিশে দাবী করা হয়। নোটিশে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু তা তাঁরা করেনি। এতে ওই নিয়োগটিতে ঘুষ-বাণিজ্যসহ অনৈতিক কার্যকলাপ হয়েছে। ওই নিয়োগে দেবাশীষ মন্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। কিন্তু ওই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪। যা দেবাশীষের চেয়ে তুলনামূলক কম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবি’র উপাচার্য ও রেজিষ্টারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে। পাশাপাশি এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, তাঁর স্ত্রী রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ জুন সকাল ১০টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র থেকে খোজ খবর নিয়ে জানা যায় অতি সম্প্রতি অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিন ও তার সহকারী অধ্যাপক এর নিয়োগ বোর্ডে ভাইবার সময় কিছু বলতে না পারায় জনৈক বোর্ড মেম্বার প্রমোশন না দেওয়ার সুপারিশ করলেও তৎকালীন উপাযার্চ হারুন অর-রশীদ তাকে আবারও কিভাবে প্রমোশন দেন তাহা কর্তৃপক্ষ বোধগম্য নহে।