সর্বনাশা মাদক ইয়াবা উদ্ধার নিয়ে প্রথম মামলা দায়ের হয় রাজধানীর গুলশান থানায়, ২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর। কিন্তু ১৯ বছরেও মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সুবল চন্দ্র শীল আশা করছেন ‘লকডাউন’ উঠে গেলে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে। সাজা পাবে আসামিরা।
মামলাটি পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার আসামি সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল, তার তিন সহযোগী সোমনাথ, মোশফিক ও এমরান- সবাই জামিনে রয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা আসে ১৯৯৭ সালে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম ২০০২ সালে রাজধানীর গুলশানের নিকেতন এলাকা থেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে বিত্তবান পরিবারের সন্তান সফিকুল ইসলাম জুয়েলকে। এ ঘটনায় অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের পরির্দশক এনামুল বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া। সম্প্রতি তিনি ঢাকা থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামে কর্মরত।
মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি। এতে চার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিলাম। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সাক্ষ্যও দিয়েছি আদালতে।
ঘটনা সম্পর্কে হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম গুলশানের নিকেতনের এ ব্লকের ১২৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েলকে। এসময় জব্দ করা হয় হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, মাদক সেবনের সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন, মাদক ব্যবসায় ব্যবহূত একটি প্রাইভেটকার, ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা ও পর্নো সিডি। এর মধ্যে নেশাজাতীয় ১২০টি ট্যাবলেট ছিল, যার গায়ে ডব্লিউ ওয়াই লেখা (ইয়াবা)। এই ট্যাবলেটের নামই যে ইয়াবা, তা তখন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারাও জানতেন না।
তিনি বলেন, আসামি সফিকুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সফিকুল তার তিন সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। পরে সফিকুলের দেওয়া তথ্যে বনশ্রীর একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় । এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় আরো ৪০২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও বিভিন্ন মাদক।
তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, মামলার প্রধান আসামি সফিকুল, তার তিন সহযোগী ও তার বাবা সামছুল ইসলাম এবং ভাই শরিফুল ইসলামসহ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করি। চার্জশিটে বলা হয়, সফিকুল ও তার তিন সহযোগী মাদক ব্যবসায় জড়িত। সফিকুলের বাবা সামছুল ও ভাই শরিফুল মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করে অপরাধ করেছে। সামছুল ও শরিফুল পলাতক ছিল। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয় ১১ সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন সরকারি কর্মকর্তা। এর মধ্যে মামলার বাদী ডিএনসির পরিদর্শক এনামুল হক ও ছানোয়ার হোসেন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রেষণে থাকা তিন কর্মকর্তা নিজ দপ্তরে ফিরে যান। তাদের মধ্যে দুজন অবসরে গেছেন। মামলার অন্যতম সাক্ষী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এ এ এম হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনিও আশাবাদী মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং আসামিরা সাজা পাবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বর্তমানে আবার শুরু হয়েছে। যেহেতু এটি প্রথম ইয়াবা উদ্ধারের মামলা, এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করি।