রাজধানীর কলাবাগানে গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের মামাতো ভাই রেজাউল হাসান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র।
এদিকে, ভিকটিমের বাসার কক্ষে পাওয়া গেছে পোড়া সিগারেটের ২টি অবশিষ্টাংশ। এটিকে খুনের মোটিভ উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসাবে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা। সিগারেটের অবশিষ্টাংশ দুইটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ বলছে, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ দুইটি উদ্ধার হলেও কক্ষে সিগারেটের ছাই রাখার কোন আসট্রে পাওয়া যায়নি। ভিকটিম নিজে নাকি অন্য কেউ ধুমপান করেছেন-তার ফিঙ্গার প্রিন্ট উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডা. সাবিরার মৃত্যু, ৫ জনকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ
ঘটনার দিন ডা. সাবিরার কক্ষে সাবেলেটে থাকা ওই তরুণী গিয়েছিল কী-না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশ ধারণা করছে, ভিকটিমের ঘাতক পূর্ব পরিচিত। এছাড়াও সাবিরার ভাড়া বাসার সাবলেটে থাকা তরুণী, তরুণীর বন্ধু, দারোয়ানসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে খুনের কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। ভিকটিমের ভাড়া বাসায় কোন সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে খুনিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের।
আরও পড়ুন:
নিহত চিকিৎসক সাবিরাকে নিয়ে যা বললেন তার দ্বিতীয় স্বামী
পুলিশ জানায়, কলাবাগান ১ম লেনের ৫০/১ নম্বর বাড়ির পরে একটি বাসায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাস্তায় অত্যাধিক লোক চলাচলের কারণে ভিকটিমের বাসায় ঘটনার দিন কে গিয়েছিল তা কাউকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। এছাড়াও ডা. সাবিরার কক্ষ থেকে কোন স্বর্ণ বা টাকা চুরি হয়নি। তার আলমারির তালা অক্ষত ছিল। সাবিরার মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে মামলার তদন্তকারীরা। কললিস্ট ধরে চলছে তদন্ত। পাশাপাশি ওই বাসায় এক ব্যক্তির ব্যক্তির যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। কে ওই ব্যক্তি তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
আগুন ধরিয়ে দিয়ে চিকিৎসক হত্যার ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
এদিকে, নিহতের ময়নাতদন্ত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে সাবিরার মরদেহের বুক থেকে নিচের প্রায় ৫০ শতাংশ পোড়া ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও তার গলার বাম পাশে দু’টি, কানের নিচ ও পিঠের মাঝ বরাবর তিনটি ও কোমরে একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন:
আগুন ধরিয়ে দিয়ে চিকিৎসক হত্যার ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ওসি জানান, এটি একটি ক্লুলেস খুন। খুনের মোটিভ উদঘাটনে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে মাঠে কাজ করছি। আশা করছি, খুনের মোটিভ দ্রুত উদঘাটিত হবে।
সোমবার দুপুরে কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ওই বাসায় আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যান। পরে ফায়ারের কর্মীরা সাবিরার শরীরে রক্তাক্ত চিহ্ন দেখে বুঝতে পারেন যে এটি একটি খুন। পরে পুলিশ গিয়ে ডা. সাবিরার লাশ উদ্ধার করে।