কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসী আক্তার। সম্প্রতি এপিএস নিউজকে তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক—
‘পরিকল্পনা হিসেবে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি নিজে ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশের অনগ্রসর মহিলা ও গরিব ছাত্রীদের জন্য ইংরেজি পাঠদানের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে আছে।’ বলছিলেন কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসী আক্তার। তিনি বলেন, পরিবার থেকে ইংরেজিতে ন্যূনতম যেটুকু অক্ষরজ্ঞান কিংবা শব্দজ্ঞান অর্জন করে শিশুদের প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আমাদের দেশের অনগ্রসর পরিবারগুলো জ্ঞান শিশুদের প্রদান করতে পারছে না। ফলে মাতৃভাষা বাংলার সাথে ইংরেজি শিক্ষার এই ঘাটতি নিয়েই শিশু প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হয়। শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।
ইংরেজি বিষয়ে এই অপূর্ণতা নিয়েই মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হয় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমিক স্তরটিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ খুবই সীমিত। ফলে এই পর্যায়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজিতেও দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। এছাড়া ইংরেজির ক্ষেত্রে ভিনদেশি ভাষার ভীতি তো রয়েছেই। শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাধিক্য, অফিসিয়াল কাগজপত্র প্রস্তুতের ঝামেলা, সিলেবাসের আধুনিকীকরণ প্রভৃতি কারণে প্রাথমিক স্তরে অধিকাংশ শিশুর ইংরেজি শিক্ষার্থীদের মাঝে। ফলে ইংরেজিতে যতটুকু দক্ষতা অর্জন করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পৌঁছার প্রয়োজন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তা আর হয়ে উঠে না। ফলশ্রুতিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজি পাঠক্রম আত্মস্থ করা এমন শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এই কারণেই ইংরেজি বিষয়ে অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ফলাফল খারাপ হয়, যা সার্বিক ফলাফলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।’
ফেরদৌসী আক্তার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। যার প্রতিফলন ঘটেছে প্রতিটি ক্লাসে। পঞ্চম শ্রেণিতে, অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। শৈশব কেটেছে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর জীবনানন্দের সেই ‘ধানসিঁড়ি’ নদীর তীরে। কৈশর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে রাজাপুর নিভৃত উপশহরে। মেধাবী ফেরদৌসী সবসময়ই ছিলেন শিক্ষকদের সুনজরে। আজ তিনি নিজেও একজন শিক্ষক। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন নিজের স্বপ্ন তিনি জানান, মেয়ে হিসেবে রাজাপুর থেকে ঢাকায় অবস্থান করে কোচিং এ ভর্তি হওয়া অনেকটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথমে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করার প্রবল ইচ্ছা ছিল।
পরবর্তীতে বড় ভাই ও বাবার অনুপ্রেরণায় ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী হিসেবে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। তাছাড়া অনার্স তৃতীয় বর্ষের শুরুতে বিবাহ করি এবং তখন মা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করি। মা হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক হব এই আকাঙ্খাটি প্রবল হতে থাকে। পরে নানান প্রতিকূলতার মাঝেও মেয়ে হিসেবে সংসার সামলিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স খুব ভালো ফল নিয়ে শেষ করি। ২০১৪ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেই।
তার স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘নিজের স্বপ্ন নিয়ে একটি কথা আবারো বলি, সেটি হচ্ছে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আমি ইংরেজি শিখাতে চাই। এসব শিক্ষার্থী শুধু ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকার কারণে ভালো কিছু করতে পারে না। অনেক সময় পরিবার তাদেরকে অর্থের অভাবে ভালো শিক্ষক দিয়ে পড়াতে পারে না। আমি তাদের জন্য কাজ করতে চাই। অবসরে গেলে একটি মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গড়ে তোলার স্বপ্ন আছে।